সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

মুসলিম শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে করণীয়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২
  • ৯১ Time View

ডেস্ক নিউজ : পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের স্বাধ আল্লাহ তাআলা সবাইকে দান করেন না। এটা মহান আল্লাহ তাআলার দান। তিনি যাকে চান তাকেই এই নিয়ামত দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা দেন এবং যাকে চান পুত্র দেন। অথবা পুত্র ও কন্যা উভয় মিলিয়ে দেন। আবার যাকে ইচ্ছা, বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৪৯, ৫০)

সব মা-বাবার প্রত্যাশা তার সন্তান তার চোখের শীতল হোক। যে সন্তানকে দেখলে মা-বাবার চোখ জুড়াবে, ভবিষ্যতে কাজে আসবে। কিন্তু মানুষ যা চায় তা অনেকেই হয়তো পায় না। আমাদের সমাজে অনেক মা-বাবা এমন আছেন, যাঁরা তাঁদের সন্তানের কারণে দুচোখ একত্র করতে পারছেন না। আমরা অনেক সময় এর দায়ভার শুধু সন্তানের ওপরই দিই। অথচ সন্তানকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার দায় আমাদের নিজেরও নেহাত কম নয়। নিচে আমরা নেক সন্তান কিভাবে লাভ করব, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব—

মা নির্বাচন

একজন পুরুষের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানের জন্য এমন মা নির্বাচন করা, যে মা তাঁর রবের হক জানে এবং তার স্বামীর হকও জানে। সন্তানের কী হক আছে, তার প্রতিও গুরুত্ব প্রদান করে। সন্তানের প্রথম পাঠশালা তার মা। এ বিদ্যালয় পাঠ গ্রহণ করে কত মনীষী তার এই মনীষী হওয়ার ভিত্তি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এ জন্য প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘(সাধারণত) চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়—তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বিনদারি। সুতরাং তুমি দ্বিনদারিকেই প্রাধান্য দেবে, নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)

নবী (সা.)-এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হলো—দ্বিনদারি গুণসম্পন্ন কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো গুণ দেখে নারীকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়।

দোয়া করা

নেক সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করা। কারণ আল্লাহ তাআলার কাছে যে-ই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তা ফেরান না। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা (এই) বলে (দোয়া করে যে), হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে দান করো নয়নপ্রীতি এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও। ’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৩৬)

বিশেষ করে সহবাসের সময় এই দোয়া পড়লে, আল্লাহ তাআলা তার সন্তানকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হিফাজত করবেন। নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সঙ্গম করে, তখন যেন সে বলে, ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনিশ শায়তানা ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা। ’ (অর্থ :  আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ, আমাকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং আমাকে তুমি যা দান করবে তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখো। ) এরপর যদি তাদের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৬৫)

নবজাতকের কানে আজান দেওয়া

নবজাতকের কানে আজান দেওয়া। যাতে করে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সর্বপ্রথম তার কানে আল্লাহর বড়ত্বের কথা বেজে ওঠে। আজানের আওয়াজের প্রভাবে শয়তান তার থেকে দূরীভূত হয়ে যায়। ফাতেমা (রা.) যখন আলী (রা.)-এর পুত্র হাসান (রা.)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১০৫)

তাহনিক করানো

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে তাহনিক করানো। অর্থাৎ খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখের তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা। যাতে করে নবজাতকের পেটে এর কিছু অংশ চলে যায়। খেজুর সম্ভব না হলে অন্য কোনো মিষ্টান্ন দিয়ে তাহনিক করাতে সমস্যা নেই। আবু মুসা (রা.) বলেন, আমার একটি পুত্রসন্তান জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহিম। তারপর খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে ছিল আবু মুসার সবচেয়ে বড় ছেলে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৭)

সুন্দর নাম রাখা

নাম যেকোনো কিছুর পরিচয় বহন করে। এ জন্য শিশুর সুন্দর ও অর্থবহ শ্রুতিমধুর নাম রাখা। সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা মা-বাবার কর্তব্য। কারণ সুন্দর নাম মন-মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে এবং মন্দ নামেরও কিছু না কিছু প্রভাব ব্যক্তির ওপর থাকে। সে জন্য রাসুল (সা.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৩৯)

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.)-এর এক মেয়ের নাম ছিল আছিয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জামিলা। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩৯)

আকিকা করা

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিন আকিকা দেওয়া। আকিকা মুসলমানদের অন্যতম ইবাদতও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক শিশুর পক্ষেই আকিকা করা দরকার। অতএব তার পক্ষ থেকে তোমরা রক্ত প্রবাহিত করো (পশু জবাই করো) এবং তার হতে ময়লা (বা কষ্টদায়ক বস্তু, যেমন চুল) দূর করো। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৫১৫)

আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা

মা-বাবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে সন্তানকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে তোলা। কারণ সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে সত্য স্বভাব গ্রহণ করার যোগ্যতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। বাকি কর্তব্য মা-বাবার ওপর। এ জন্য হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানায়, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৩৮৫)

এ জন্য কোরআনে আল্লাহ তাআলা সন্তান ও সম্পদ আমাদের জন্য পরীক্ষা হিসেবে বলেছেন। সন্তানকে যথাযথ দ্বিনি শিক্ষাদীক্ষা প্রদান করেন এই পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করা পিতা-মাতার দায়িত্ব।

এক. শুরুতেই সন্তানের মনে ঈমানের বীজ বপন করে দেওয়া। ঈমানের ছোট-বড় যত শাখা-প্রশাখা আছে তাকে তা ধীরে ধীরে শিক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি শিরকের ভয়াবহ সম্পর্কেও তাকে অবগত করা। যেন কখনো সে শিরকের পথে পা না বাড়ায়।

দুই. শিশুর মনে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা। আমাদের ওপর অহর্নিশ আল্লাহ তাআলার যে হাজারো নিয়ামত বর্ষিত হচ্ছে, তা তাকে দেখিয়ে দেওয়া। যেমন যখন আমরা খাবারের পাত্র নিয়ে বসব, তখন তাকে বলা, এ খাবার কে দিয়েছে? জানো! আমাদের পর্যন্ত কিভাবে এসেছে এই খাবার! এভাবে তাকে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কথা বলে আল্লাহর ভালোবাসা তার অন্তরে বদ্ধমূল করে দেওয়া।

তিন. প্রিয় নবী (সা.)-এর ভালোবাসা তার অন্তরে বসানো। উম্মতের প্রতি রাসুল (সা.)-এর দয়া, তার বীরত্ব, ধৈর্য, একনিষ্ঠতা—এগুলো বলে বলে শিশুকে বড় করা।

চার. হালাল-হারাম শিক্ষা দেওয়া।

পাঁচ. উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেওয়া এবং উত্তম চরিত্রের লাভ-ক্ষতি তাকে বুঝিয়ে দেওয়া। বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ইত্যাদি।

ছয়. ছোট থেকেই তার মনে মিথ্যার প্রতি ঘৃণা তৈরি করে দেওয়া। এমনিভাবে কাউকে গালি দেওয়া, গিবত-শিকায়াত করা। এ ধরনের আরো যত মন্দ কাজ আছে—এগুলো থেকে তাকে সতর্ক করে দেওয়া এবং এসবের ভয়াবহতা সম্পর্কে তাকে জানিয়ে দেওয়া।

এভাবে একটি শিশুকে তার শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মা-বাবাকে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যথায় এর খেসারত মা-বাবাকেও দিতে হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit