ডেস্ক নিউজ : এই আর্জেন্টিনাকে দেখে মনে হচ্ছে এবার তাদের পালা। একটা বিরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে লিওনেল স্কালোনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখান থেকে দলটাকে একটা শান্ত, আত্মবিশ্বাসী রূপ দেওয়ার বড় কৃতিত্ব তাঁকেই দিতে হবে। অথচ কোচ হিসেবে স্কালোনির কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডই ছিল না। না বিশ্বের কোথাও কোনো ক্লাবে কাজ করেছেন, না কোনো জাতীয় দলে। তাঁকে নিয়োগ দেওয়াটা নিশ্চিতভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল। সেখান থেকে শুধু আত্মবিশ্বাসী একটা পরিবেশই তিনি তৈরি করেননি, দলের সেরা তারকা লিওনেল মেসি কিভাবে অন্য খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা পাবে, সেটা নিশ্চিত করেছেন।
স্কালোনির কোচিং স্টাফে রবার্তো আয়ালা, পাবলো আইমার, ওয়াল্টার স্যামুয়েলের মতো সাবেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছেন, এটার অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক আছে। মেসির সতীর্থদের কেউ খুব বড় তারকা নয়, তবে কঠোর পরিশ্রমী। কোচের পরিকল্পনা ও ছকের সঙ্গে মানিয়েও নিতে পারে খুব ভালোভাবে। এই আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষ বিবেচনায় নানা ফরমেশনে খেলতে পারে। দুটি ছকের কথা আমি বলতে পারি। কোপার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-৪-২-এ খেলেছিল ওরা আনহেল দি মারিয়াকে একটু সামনের দিকে রেখে। আবার ফিনালিসিমায় ইতালির বিপক্ষে ৪-৩-৩ ছকে খেলেছে। খেলোয়াড়রা খুব ভালোভাবেই এই দুই ফরমেশনে নিজেদের মেলে ধরেছে।
পারফরম্যান্সের দিক দিয়েও খুব ভালো সময় যাচ্ছে আর্জেন্টিনার। ২০১৯ সালে সর্বশেষ হারের পর টানা ৩৬ ম্যাচ তারা অপরাজিত। যে দলটা হারতে ভুলে গেছে তাদের অনেক কিছুই দেওয়ার আছে। ওদের বিপক্ষে যা আছে, তা হলো পারফরম্যান্সের সময়টা ফুরিয়ে গেল কি না। দেখা গেল বিশ্বকাপের সময়ই ধারাবাহিকতার পথ হারিয়ে ফেলল! আরেকটা বিষয় হলো, গুরুত্বপূর্ণ কোনো খেলোয়াড়ের চোটে পড়া। যেমন—দি মারিয়া কিছুদিন আগে চোট পেয়েছে, তবে সে বোধ হয় সেরে উঠবে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্পর্ক খুব ভালো, আর্জেন্টিনার এটা প্লাস পয়েন্ট।
আর পজিশনের দিক দিয়ে যদি বলি ওরা অনেক দিন পর একজন ভালো গোলরক্ষক পেয়েছে, মার্তিনেজ। রিজার্ভে আরো গোলরক্ষক আছে। রক্ষণভাগে রোমেরো ও ওতামেন্দির ওপর ভরসা রাখা যায়। একদিকে মলিনা আছে, অন্যদিকে অ্যাকুনিয়া। ওদের বদলি খেলোয়াড়রাও ভালো। যেমন—গত বিশ্বকাপে খেলা তাগলিওফিকো। মাঝমাঠেও কিছু খেলোয়াড় আছে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো। রদ্রিগো দ্য পল অদ্ভুত একটা খেলোয়াড়, বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। সঙ্গে লো সেলসো। ওকে আমরা টটেনহামে দেখছিলাম উইংয়ে খেলতে; কিন্তু ওকে স্কালোনি যেভাবে মিডফিল্ডে খেলিয়েছেন তাতে দারুণ একটা প্রভাব থাকছে ম্যাচে সেলসোর।
তবে ইউরোপের দলগুলোর বিপক্ষে হয়তো এখনো পুরোপুরি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে ওঠেনি আর্জেন্টিনার। ২০১৯ সালে একবার জার্মানির সঙ্গে খেলেছিল, ২-২-এ ম্যাচ ড্র ছিল, এরপর ইতালির বিপক্ষে কিছুদিন আগে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যেহেতু ইউরোপিয়ান দলগুলোই এখন চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনার সম্ভাবনাই বেশি দেখছি। মেসিও বোধ হয় এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ হিসেবে খেলতে যাচ্ছে। ‘নাউ অর নেভার’—এ ধরনের একটা পরিস্থিতি আছে তাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মেসির সেরাটা কিন্তু আর্জেন্টিনা বের করতে পেরেছে। স্কালোনি, কোচিং স্টাফ এবং খেলোয়াড় সবাই মিলে মেসিকে নিজের সেরাটা খেলার উপযোগী দারুণ একটা পরিবেশ তৈরি করেছে।
আগে তারকা খেলোয়াড় বেশি ছিল। তবে মেসির চাওয়া নিশ্চয় সবাই যেন ঠিকঠাক পারফরম করে। যেমন—কোনো একজন একটা ভালো ‘রান’ করে মেসির জন্য জায়গা তৈরি করে দিল। কিংবা ভালো একটা পাস দেওয়া বা প্রতিপক্ষের পা থেকে বলের দখল নেওয়া। ইতালির সঙ্গে দেখলাম মেসি নিচে নেমে রক্ষণেও নেমে পড়েছে। তার মানে মেসি নিজের ভেতরেও একটা অনুপ্রেরণা টের পাচ্ছে, যাতে করে সে সবটুকু বিলিয়ে দিতে পারছে। আর সে এখন যোগ্য নেতার মতোই দলটাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সর্বশেষ যে ম্যাচটা আর্জেন্টিনা হেরেছে ২০১৯ সালে কোপার সেফািইনালে, ম্যাচটা কিন্তু অন্যতম সেরা ম্যাচ ছিল পারফরম্যান্স বিবেচনায়। তো এমনটা হতে পারে। সেটা মাথায় রেখেও বলছি আর্জেন্টিনার এবার ভালো সুযোগ। ’৮৬-তে কার্লোস বিলার্দোও ম্যারাডোনা বা দলের জন্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছিলেন মাঠে এবং মাঠের বাইরে, যেটা ‘ক্লিক’ করে গিয়েছিল। এবারও এমন কিছুর সঙ্গে ভাগ্যের সহায়তা পেলে মেসির হাতে কাপ উঠবে বলেই মনে হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৯ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:০৩