শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহে বার্ষিক উরস উপলক্ষে লৌকিক উৎসব ‘লাকড়ি তোড়া’র স্থান বাউন্ডারী দেওয়াল নির্মাণের লক্ষ্যে গতকাল ৫ নভেম্বর শনিবার বিকালে লাক্কাতুরা চা-বাগানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান অতিথি সিলেটের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী-দানবীর আলহাজ্ব ড. সৈয়দ রাগীব আলী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হযরত শাহজালাল রহ: মাজারের মোতাওয়াল্লী সরেকওম ফতেহ উল্লাহ আল আমান, খাদেম সামন মাহমুদ খান, বাংলাদেশ হযরত শাহজালাল (রহ:) ৩৬০ আউলিয়া ভক্তবৃন্দ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মোঃ মকন মিয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ জালাল ফরিদ উদ্দিন।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত পরিষদের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক- কাজি আরিফ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আলমগীর কবির, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহীন মিয়া, মহানগর সভাপতি কামাল আহমদ মছই, সাধারণ সম্পাদক আখতার আহমদ, সহ সাধারণ সম্পাদক আলম চৌধুরী, বিশ্বনাথের প্রতাবপুরস্থ হানিফ শাহ মওলা (র.) দরবার শরীফের খাদিম সৈয়দ শাহজাহান চৌধুরী, সিলেট কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের সহ সভাপতি মনসুর আলী, সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল সাত্তার মিয়া, মোঃ শামছুল হক, জয়নাল আহমদ, ফটো সাংবাদিক সোহেল আহমদ, সাংবাদিক বাবুল খান মুন্না, মীর মোশাররফ হোসেন, হাজী শাহ মোঃ হারুন অর রশিদ চিশতী, মহিব উদ্দীন শফত শাহ (র;) খাদেম, মোঃ সুনু মিয়া কন্টাকটার, ধনু মিয়া, সুফল বাড়াই প্রমুখ সহ ৩৬০আউলিয়া ভক্তবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রায় ৭০০ বছর ধরে বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর উরস উপলক্ষে লৌকিক উৎসব ‘লাকড়ি তোড়া’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘লাকড়ি তোড়া উৎসবে’ দরগাহ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে লাক্কাতুরা চা-বাগানের জঙ্গল থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করা হয়। স্থানটির চতুর্দিকে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের জন্য ভক্ত ও আশেকদের প্রতি আহবান জানান। উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৬ শাওয়াল জোহর নামাজ শেষ হতেই বেজে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ‘নাকাড়া’। ‘শাহজালাল বাবা কী জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়া কী জয়,’ ‘লালে লাল শাহজালাল’ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সিলেট নগরী। নাঙ্গা তলোয়ার, দা-কুড়াল ও লাল-ঝান্ডা হাতে হাজার হাজার শাহজালাল ভক্ত সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে শাহজালাল দরগা প্রাঙ্গনে জমায়েত হতে থাকে। বিভিন্ন মাজার-খানকা ও গঞ্জ-গ্রাম থেকে দুপুরের নামাজ পর্যন্ত চলে ভক্তদের জমায়েত পর্ব। জোহরের নামাজ শেষ হতেই শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ‘নাকাড়া’ বেজে ওঠে। বেজে ওঠে ভক্ত-আশেকানদের শত শত ঢোল-ডঙ্কা।
বিভিন্ন কাফেলার সাথে আসা অসংখ্য ব্যান্ড-পার্টির বাদ্যের তালে তালে চলে হাজার মানুষের শ্লোগানে শ্লোগানে নগ্ন পায়ে ছুটে চলা বেশির ভাগ মানুষের অঙ্গে থাকে লাল কাপড়। অনেকেই মাথায় লালপট্টি বাঁধে। এই মিছিল ছুটে চলে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ঐতিহ্যবাহী লাকড়ী তোড়া বা লাকড়ী ভাঙ্গার উৎসবে। সেখানে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর লাকড়ি নিয়ে দরগাহ শরীফে ফিরে আসেন । শাহজালাল (রহ.) এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০০ বছর ধরে উরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব সংগ্রহ করা লাকড়ি নির্দ্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি দিয়েই উরসে শিরনির রান্না করা হয়ে থাকে।
কিউএনবি/আয়শা/০৫ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:২১