ডেস্ক নিউজ : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘বিএনপিও জাতীয় পার্টির ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। হাওয়া ভবনের পতন চেয়ে ২০০৮ সালে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০৮-এর পর থেকে অদ্যাবধি তারা আমাদেরকে শাসন করেছে। এখন তারা জাতীয় পার্টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
আমরা কোনো রকম আপস করব না। যতই অত্যাচার-নিপীড়ন আসুক, মাথা নত করব না। আমাদের রাজনীতি হবে জনগণ ও দেশের কল্যাণের রাজনীতি। মানুষ চাচ্ছে পরিবর্তন। যে পরিবর্তন আওয়ামী লীগ কখনো দেয়নি, বিএনপিও দিতে পারেনি। জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের কৃতদাস হয়ে থাকতে চায় না। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই লড়বে জাতীয় পার্টি। ’আজ শনিবার দুপুরে স্থানীয় মির্জা আজম অডিটরিয়ামে জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের আরো বলেন, ‘দেশে জিনিসপত্রের দাম ধেই ধেই করে বাড়ছে। মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকট চলছে। মিল-কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, উৎপাদন কমছে। এতে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ কষ্ট করে জীবন যাপন করছে। সামনে আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। সরকার বিভিন্নভাবে মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে অথবা সঠিক তথ্য গোপন করে মানুষের কাছে বিপদগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে। সরকার দেউলিয়ার দিকে যাচ্ছে। তখন আমার কথায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। এখন সরকারের কাছে টাকা নেই। সরকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার কাছে ঋণ চাচ্ছে। গত আগস্ট মাসে দেশের রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। দেশের মানুষ বিদেশ থেকে না খেয়ে পরে যে টাকা পাঠায় সেই টাকায় রিজার্ভ তৈরি হয়। সেই টাকায় সরকার বিভিন্নভাবে ফুর্তি করে ব্যয় করে। বিভিন্ন ধরনের মূর্তি বানায়, নাচানাচি করে, সিনেমা বানায়। সেই ফুর্তিতে এক বছরে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ কমে হয়েছে ৩৫.৮ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু আইএমএফ হিসেব করে পেয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভ থেকে টাকা খরচের কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এই সরকার আইন করে তা করেছে। এভাবে আইন করে রিজার্ভের টাকা নেওয়া ঠিক হচ্ছে না। রিজার্ভ থেকে টাকা নিয়ে তারা মেগাপ্রকল্পে ব্যয় করেছে। যে টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হয়েছিল সেই টাকাও রিজার্ভে দেখাচ্ছে। ’
তিনি ক্ষমতাসীন সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে বলেন, ‘দেশ পরিচালনায় বিভিন্ন বৈষম্যের কারণে ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তাদের আয়-রোজগারের কোনো হিসাব নেই। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সেই মুক্তিযুদ্ধকে বিভাজন করেছে। তারা বিভাজন করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। আজ দেশের মানুষ যখন জীবন বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করছে তখন সরকার এবং সরকারের মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী লাখ লাখ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে বিদেশে পাচার করছে। ’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তফা আল মাহমুদের সভাপতিত্বে দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু।
জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব জাকির হোসেন খানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি এম তাজ রহমান, সরোয়ার হোসেন, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নূরুল ইসলাম তালুকদার, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সম্মেলনের কাউন্সিলদের মতামতের ভিত্তিতে জামালপুর জেলা জাতীয় পার্টির নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে মোস্তফা আল মাহমুদকে সভাপতি, জাকির হোসেন খানকে সাধারণ সম্পাদক ও কাজী খোকনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:০৫