রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ডোমারে ওসির অপসারণের দাবীতে সাংবাদিকদের কলম বিরতি ফুলবাড়ীতে পীরত্তোর সম্পত্তি ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার প্রতিবাদে মানববন্ধন॥ ফুলবাড়ীতে সেচের মটর চুরি হওয়ায় পানির দাবীতে কৃষকদের মানববন্ধন॥ নেত্রকোণার কৃষক দলের নেতা রাজ্জাককে মুন্সীগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেছেন পুলিশ আজকের স্বর্ণের দাম : ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রুশ ড্রোন হামলায় কাঁপল ইউক্রেনের ১২ শহর তারা সম্পর্কের আবরণে লুকিয়ে থাকা বিষধর সাপ : পূর্ণিমা স্টার্ক কি সত্যিই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানকে স্বাগত, বক্তব্য এনসিপি আংশিক কাট করেছে: সালাহউদ্দিন ৪৯তম বিশেষ বিসিএস: আজ হতে পারে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ

জাল হাদিস চেনার উপায় ও প্রতিকার

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০২২
  • ৯৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : পরিভাষায় জাল বা ভিত্তিহীন হাদিসকে ‘মওজু’ বলা হয়। আর জাল বা ভিত্তিহীন হাদিস মূলত হাদিসই নয়। কেননা রাসুল (সা.) থেকে তা প্রমাণিত নয়; বরং মিথ্যুকরা তাঁর নামে তা চালিয়ে দিয়েছে বা যাচাই-বাছাই ছাড়া তাঁর দিকে সম্বোধন করে বর্ণনা করেছে। অথচ বাস্তবে এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

যারা এই ধরনের মিথ্যা বর্ণনা করে তাদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার ওপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৩)

জাল হাদিস বর্ণনার বিধান

যেহেতু জাল হাদিস হাদিসই নয়, তাই সুনিশ্চিতভাবে জাল, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট জানার পর ওই বর্ণনা রাসুল (সা.)-এর হাদিস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। তবে ওই বক্তব্য বা বর্ণনাটি জাল মর্মে বিষয়টি জানানোর জন্য বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন কুফরি কথা বলা জায়েজ নয়। কিন্তু কথাটি কুফরি, সেটি বোঝানোর জন্য কুফরি কথা উল্লেখ করা জায়েজ।

মওজু হাদিসের প্রকার

মওজু বা জাল হাদিস দুই ভাগে বিভক্ত—

১. যার অর্থ ও বিষয়বস্তু উভয়টি মনগড়া, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে হাদিস জালকারীরা তা প্রচার করে থাকে।

২. অনেকে হাদিস জাল করতে গিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। যেমন: সুন্দর সুন্দর উপদেশ, হিকমতপূর্ণ বাণী অথবা বাহ্যত সুন্দর মনে হয় এমন বাক্য নিজ থেকে বানিয়ে বা কোথাও থেকে নকল করে তা রাসুলের নামে প্রচার করে।

উপরোক্ত দুই প্রকার জাল হাদিস শরিয়তে অগ্রহণযোগ্য। জানানোর উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু তা প্রচার করা এবং এর ওপর আমল করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মওজু হাদিস চেনার উপায়

মওজু বা জাল হাদিস চেনার সুনির্দিষ্ট কোনো মূলনীতি না থাকলেও ইমাম ইবনে আররাক (রহ.) এমন কয়েকটি নিদর্শন উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে সহজে তা নির্ণয় করা সম্ভব। নিম্নে তার বিবরণ তুলে ধরা হলো।

১. হাদিস জালকারী নিজেই স্বীকার করা যে তিনি  হাদিস জাল করেন। যেমন: কোরআনের প্রত্যেক সুরার ভিন্ন ভিন্ন ফজিলতের হাদিস- প্রসঙ্গে মায়সারা বিন আবদে রব স্বীকার করেছেন যে তিনি হাদিসটি জাল করেছেন। ফলে তার বর্ণিত সব হাদিস বর্জন করা হয়েছে।

২. যা স্বীকারোক্তির স্থলাভিষিক্ত। এর উদাহরণ হিসেবে আল্লামা জারকাশি ও হাফেজ ইরাকি (রহ.) বলেন, একটি হাদিসকে এককভাবে বর্ণনাকারী তার জম্ম অথবা হাদিস শ্রবণের জন্য এমন সময়কে নির্ধারণ করা, যখন তার জন্য তার শায়খ থেকে হাদিস গ্রহণ অসম্ভব অথবা এমন স্থানে হাদিস শ্রবণের দাবি করা যেখানে তার শায়খ কখনো যায়নি।

৩. অসংখ্য ইমাম বর্ণনাকারীকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা। আর তাদের সবার মিথ্যা সাব্যস্ত করার ওপর একমত হওয়াটা বাস্তব, মিথ্যা দাবি নয়।

৪. কোনো বাদশা বা খলিফার মনোরঞ্জনের জন্য হাদিস জাল করা। আর এটা বর্ণনাকারীর বিভিন্ন অবস্থা দেখে বোঝা সম্ভব। যেমনটা ঘটেছে খলিফা মাহাদির সঙ্গে গিয়াস বিন ইবরাহিমের ঘটনা।

৫. হাদিসের বর্ণনায় বিভিন্ন লক্ষণ দেখে জাল নির্ণয় করা। যেমন: কোরআনের স্পষ্ট দলিলবিরোধী কিংবা সুন্নতে মোতাওয়াতির (ধারাবাহিক সুন্নত) বা  ইজমায়ে কতইর  (উম্মতের অকাট্য একমত) বিরোধী হওয়া। পাশাপাশি আকল বা বাস্তবতাবিরোধী হওয়া।

৬. এমন বিষয়ের হাদিস বর্ণনা করা, যা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার দিক থেকে অনেক রাবির তা বর্ণনা করা উচিত ছিল; কিন্তু এটি মাত্র একজন রাবি বর্ণনা করা।

৭. এমন বিষয়ের হাদিস বর্ণনা করা, যার ব্যাপক চর্চা  বা জানা থাকাটা আবশ্যক ছিল; কিন্তু ওই হাদিসটি শুধু একজন রাবি বর্ণনা করা।

৮. যে বর্ণনার শব্দ ও অর্থ দুর্বল, নিম্নমানের এবং শুনতে অস্বস্তিকর। অর্থাৎ ওই শব্দে বা অর্থে নবীজি (সা.)-এর পক্ষ থেকে বর্ণিত হওয়া অনেকটাই অসম্ভব।

৯. ছোট ছোট আমল বা কর্মে সুনির্দিষ্ট দিন বা সংখ্যায় বড় ফজিলত বর্ণনা করা। যেমন: যে এত রাকাত নামাজ পড়বে তার জন্য জান্নাতের ৭০টি বাড়ি হবে, প্রতি বাড়িতে ৭০ হাজার ঘর থাকবে, প্রত্যেক ঘরে ৭০ হাজার খাট হবে, প্রত্যেক খাটে ৭০ হাজার হুর থাকবে ইত্যাদি।

১০. ইমাম রাজি (রহ.) বলেন, কোনো হাদিস এমন সময় বর্ণনা করা যখন হাদিসসমূহ সংগৃহীত ও লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বর্ণিত হাদিসটি কোনো কিতাবে অথবা মুহাদ্দিসদের স্মৃতিতে পাওয়া যায় না। এটাও জাল বর্ণনার নিদর্শন। তবে সাহাবিদের ও তাঁদের কাছাকাছি সময়ের ব্যাপারটা ভিন্ন। কারণ তখন সব হাদিস খুঁজে দেখা সম্ভব ছিল না। যেহেতু বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পৃথক পৃথক হাদিস সংগৃহীত ছিল।

১১. ইমাম সুয়ুতি (রহ.) বলেন, কোনো রাফেজি রাবি যদি আহলে বাইতের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করে তাহলে সেটাও জাল হাদিসের নিদর্শন। ইবনে আররাক বলেন অথবা যদি হাদিসটি হয় তাদের নিন্দায় যারা আহলে বাইতের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে সেটাও জাল হাদিসের নিদর্শন। (তানজিহুশ শরিয়াহ ১/৫-৮)

জাল হাদিস থেকে বাঁচার উপায়

শায়খ আবুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) বলেন, জাল হাদিস থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপায় রয়েছে।

১. হাদিসের যেসব বিশুদ্ধ গ্রন্থ রয়েছে তা বেশি বেশি অধ্যয়ন করা এবং মনোযোগ সহকারে তা আত্মস্থ করার চেষ্টা করা।

২. পাশাপাশি যেসব কিতাবে জাল বা ভিত্তিহীন হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে সে কিতাবগুলোর দিকেও বারবার মনোযোগী হওয়া এবং বেশি বেশি পড়ার চেষ্টা করা। তবেই জাল বা ভিত্তিহীন হাদিস থেকে বাঁচা সম্ভব। ইমাম জাহেদ কাউসারি (রহ.) মওজু হাদিসের প্রচাররোধ ও সহিহ সুন্নাহর বিকাশ সাধনে খুবই সচেষ্ট ছিলেন। তিনি একবার জামিয়াতুল আজহারের শায়েখ মোস্তফা আব্দুর রাজ্জাককে পরামর্শ দেন, যেন আজহারের উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে মওজু বা ভিত্তিহীন হাদিস সম্পর্কে পাঠদানের জন্য একজন বিজ্ঞ শিক্ষক নিযুক্ত করেন এবং ইবনে আররাক (রহ.) রচিত ‘তানজিহুশ শরিয়াহ’ কিতাবটিকে মূল ভিক্তিরূপে গ্রহণ করেন। (লামহাত মিন তারিখিস সুন্নাহ, পৃ: ২৩৩-৩৪)

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২১ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:০৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit