ডেস্ক নিউজ : শাপলা বিক্রির টাকায় অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন ভগীরথ মন্ডল ও সুচিত্রা মণ্ডল। সম্প্রতি তাদের দুই মেধাবী সন্তান সজীব ও রত্না জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ভাই বিজ্ঞান ও বোন বাণিজ্য বিভাগে। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এখনও উচ্চশিক্ষার জন্য কোথাও ভর্তি হতে পারেননি তারা। ভগীরথ মন্ডল বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের রুইয়ারকুল গ্রামের শাপলা বিক্রেতা। বাবার সাথে কখনও বাজারে শাপলা বিক্রি করে, কখনও ছাত্র পড়িয়ে নিজের ও বড় বোনের লেখাপড়ার অর্থসংস্থানের চেষ্টা করছেন সজীব মন্ডল। সজীবের দিদি রত্না মন্ডলও গ্রামে প্রাইভেট পড়ান। তবে বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদার অর্থ যোগাড় করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সজীব মন্ডল বলেন, মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাই। সে জন্য সৎপথে উপার্জনের চেষ্টা করছি। লোকলজ্জা ভুলে বাবার সাথে শ্রীরামপুর, বারাশিয়া বিলে শাপলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। ফাঁক পেলে প্রাইভেট পড়াই। কিন্তু এখন লেখাপড়ার জন্য যে পরিমাণ টাকার দরকার তা আমাদের নেই। সজীব আরো জানান, তার দিদি রত্না মন্ডল ২০২১ সালে চিতলমারী শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসিতে ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি চিতলমারী রখাসে রহাটের কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২১ সালে এইচএসসিতে ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এর পর উচ্চশিক্ষার জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় (২২টি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত পরীক্ষা) সম্প্রতি পাস করেন। কিন্তু এখনও ভর্তি হতে পারেননি। মূল কারণ, আর্থিক সংকট। তার আশঙ্কা, ভর্তি হতে না পারলে দিদিকে হয়তো বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু রত্না এখন বিয়ে করতে চান না।
আমি কী করব জানি না। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে, বলেন সজীব। কেন ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চান- এই প্রশ্নের উত্তরে সজীব ও রত্নার মা সুচিত্রা মন্ডল বলেন, ছোটবেলায় আমার মা মারা যান। এরপর আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। নিজে লেখাপড়া শিখতে পারিনি। তাই ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে চাই। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে ওরা দুই ভাইবোন চেষ্টা করছে। তিনি আরো জানান, সপ্তাহে তিনদিন ভোররাত থেকে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বিলে শাপলা সংগ্রহ করেন স্বামী ভগীরথ মন্ডল। এরপর তা বাজারে বিক্রি করেন। অতি সাধারণভাবে তাদের সংসার চলে। দুই সন্তানের লেখাপড়ার জন্য সমাজের বিত্তবানসহ সকলের কাছে আর্থিক সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গৌতম বিশ্বাস জানান, শাপলা বিক্রেতা ভগীরথের ছেলেমেয়ে দুজন মেধাবী। তাদের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের জন্য সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। চিতলমারী কালিদাস বড়াল স্মৃতি (ডিগ্রি) মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপনকুমার রায় বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সজীব মন্ডল অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সে ভদ্র, বিনয়ী, অধ্যবসায়ী এবং স্কাউটিংয়ে পরিশ্রমী। শুধু আর্থিক সহায়তা পেলে সে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪৩