মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

যেসব কারণে অন্তরের কোমলতা নষ্ট হয়

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৩৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : অন্তর বা হৃদয় মানুষের দেহের নেতৃত্ব দানকারী অঙ্গ। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, ভালো-মন্দ নির্ভর করে অন্তরের ওপর। অন্তরের নির্দেশনায় পরিচালিত হয় মানবজীবন। তাই ইসলাম অন্তরের পরিশুদ্ধি অর্জনকে ফরজ করেছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেদিন সম্পদ ও সন্তান কোনো উপকারে আসবে না; তবে পরিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে উপস্থিত হবে। ’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)

যেসব কারণে অন্তরের কোমলতা নষ্ট হয়

পাপ, পাপাচার ও পাপচিন্তা মানুষের হৃদয় থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয় এবং তাতে কঠোরতা সৃষ্টি করে। তার ভেতর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পাপ হলো—

এক. অবৈধ প্রেম ও ভালোবাসা : অবৈধ প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে এবং তাকে বহুবিধ পাপের পথে পরিচালিত করে। অবৈধ প্রেমে বিক্ষুব্ধ হৃদয় মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে শুরু করে খুন ও হত্যা পর্যন্ত কোনো অপরাধকেই পরোয়া করে না। ইসলামী বিধান মতে, মানুষের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ভিত্তিও হবে আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর। সে আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর মুমিনরা আল্লাহকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৫)

দুই. দুনিয়ামুখী মানুষের বন্ধুত্ব : দুনিয়ামুখী মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও জাগতিক জীবনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যস্ততা মানুষকে আল্লাহবিমুখ করে। মহান স্রষ্টার সঙ্গে তার হৃদয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাতে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার জন্ম হয়। জাগতিক স্বার্থ হাসিলে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। আল্লাহবিমুখ মানুষেরাই তখন তার বন্ধু হয়ে ওঠে। আল্লাহ বলেন, ‘আজ বন্ধুরা পরস্পরের শত্রু, শুধু আল্লাহভীরুরা ব্যতীত। ’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৬৭)

তিন. সীমাহীন জাগতিক মোহ : সীমাহীন জাগতিক মোহ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ বিলোপ করে। মানুষের চিন্তা ও কাজের ভারসাম্য নষ্ট করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল। ’ (সুনানে তিরমিজি)

চার. হারাম উপার্জন : হারাম জীবিকা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয়। তাতে দূষণ ও কঠোরতা তৈরি করে। মানুষ যখন চুরি ও ডাকাতি করা, চাপে ফেলে আদায় করা সম্পদ খায়; এমনকি বৈধ কাজে যখন অপচয় করে, তখন সে সৎকাজের সাহস হারিয়ে ফেলে। তার ওপর শয়তানের প্রভাব বাড়তে থাকে। তার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে চলে যায়।

আল্লাহর ভয়শূন্য কঠোর হৃদয়

আল্লাহর ভয়শূন্য অন্তর জড়তায় পূর্ণ থাকে। ফলে সে ভালো কাজে অগ্রসর হতে পারে না। আল্লাহর জন্য তার অন্তরে কোনো ভালোবাসা না থাকায় সে মোনাজাত ও ইবাদতের স্বাদ পায় না; বরং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে সংকোচ বোধ করে। এ ছাড়া আল্লাহর ভয়শূন্য অন্তরে কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির, কোরআনের সুসংবাদ ও হুঁশিয়ারি, মানুষের মৃত্যু, কাফন-দাফন-কবর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। আল্লাহ এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘যখন তাদের ওপর আমার শাস্তি এলো, তারা কেন কাকুতি-মিনতি করল না। বরং তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেছে। শয়তান সুশোভিত করে দেখিয়েছে—যা তারা করেছে। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৪৩)

যেসব আমলে অন্তর কোমল হয়

হৃদয়ের কঠোরতা দূর করতে ইসলাম মানুষকে কিছু আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। তা হলো—

১. বেশি বেশি জিকির করা : আল্লাহর জিকির ও স্মরণ মানুষের অন্তরের কঠোরতা দূর করে তাতে কোমলতা ও সজীবতা সৃষ্টি করে। হৃদয়ের বিক্ষুব্ধতা দূর করে তাতে প্রশান্তি বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা মুমিন তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্ত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণ অন্তরগুলোকে প্রশান্ত করে। ’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)

২. জনকল্যাণমূলক কাজ করা : অন্ন-বস্ত্রহীন মানুষের পাশে দাঁড়ালে, এতিম-দুঃখীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অন্তরের কঠোরতা দূর হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘যদি তুমি তোমার অন্তরকে নরম করতে চাও, তবে মিসকিনকে খাবার খাওয়াও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ’ (আনিসু-সারি ফি তাখরিজি আহাদিসি ফাতহিল বারি, পৃষ্ঠা ৬২৩)

৩. কবর জিয়ারত : কবর জিয়ারত, কবর ও কিয়ামত দিবসের আলোচনায় মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কবর জিয়ারতে উৎসাহী করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। ’ (সহিহ ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৫)

৪. আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি : অন্তরের কঠোরতা এক প্রকার শাস্তি ও অভিশাপ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অন্তরের কঠোরতা থেকে আল্লাহর দরবারে মুক্তি চাইতেন। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে চারটি বিষয় থেকে মুক্তি চাই; এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না, এমন অন্তর যা (আপনার ভয়ে) ভীত নয়, এমন আত্মা যা তৃপ্ত নয়, এমন দোয়া যা কবুল করা হয় না। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৪৬৭)

এ ছাড়া হাদিসে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, ভোগ-বিলাস ও অধিক ঘুম-পানাহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক

কর্মকর্তা (সিসি), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit