এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় এবার ছেলে-বৌমা কর্তৃক অসুস্থ অর্ধনগ্ন অবস্থায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা বৃদ্ধা মাকে (৭০) উদ্ধার করে ছেলের ফ্লাট বাড়িতে তুলে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। রবিবার ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাশাপোল ইউনয়িনের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে।
স্থানীয়দের নিকট থেকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশসহ উপস্থিত হন বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের বাড়িতে। রবিবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধা অসুস্থ মা আমেনা বেগমকে (৭০) গোয়াল ঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি ছিড়াকাথার ওপর প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় পড়ে আহজারি করছেন। গোয়াল ঘরটি ছাদের হলেও তীব্র গরমেও সেখানে নেই কোনো পাখাবা বাতাসের ব্যবস্থা। তার পাশেই পাকা ছাদের রান্না ঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে বৌমা ও তার পুত্রবধূ রান্না করছেন। পাশেই আলীশান একটি ফ্লাটবাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে ও ছাদে ওঠার সিড়ি টাইলস করা।
কক্ষগুলো টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে ভরা।এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বৃদ্ধা মায়ের পুত্রবধূর নিকট বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে কেন এই ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রেখেছেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, উনি কাপড়ে প্রসাব-পায়খানা করেন। তাইগোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে, পরে বলেন, তিনি নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছেন। এ সময় স্থানীয় প্রতিবেশী নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা অভিযোগ করে বলেন, বৃদ্ধার ঝগড়াটে বেটার বৌউয়ের ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেন না।তারা আরো বলেন, বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে আব্দুল কাদেরের দুই ছেলে। তিনি বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোটটি বিদেশে থাকেন। বৃদ্ধার জামাই তিন/চার দিন আগে ছেলের বাড়িতে রেখে গেছেন। এরপর থেকেই বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে এ ভাবে ফেলে রেখেছেন তার ছেলে ও বৌমা।
এ সময় বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তার চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কয়েকদিন আগেও ছিলেন বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে মেজে মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি বাঁশের উপর পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। জামাই খুবই গরীব হওয়ায় তাকে হাসপাতালেও নিতে পারেনি।এমনকি চিকিৎসাও করেননি। সেখান থেকে জামাই গত তিন/চার দিন আগে আমাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তার বৌ বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন।তিনি জানান, যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তার দুই চোখ জ্বলে যাচেছ। রাতে বা দিনে কোনো সময় তাকে একটি ফ্যানও দেয়া হয়নি। মেয়ের বাড়িতে তিনি ভালোই ছিলেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন তোমাদের আমার মেয়ে খবর দিয়েছে ?।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা স্থানীয় প্রতিবেশী কয়েকজন নারীকে সাথে নিয়ে ওই বৃদ্ধা মাকে ছেলের ফ্লাটের একটি ঘরে তুলে দেন। এরপর ছেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেন। বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের ফ্লাটবাড়ির কক্ষে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করে ফেললে ছেলে-পুত্রবধূরা পরিস্কার করে দেবেন। সোমবার আজই বৃদ্ধা মাকে হাসপতালে নিয়ে চিকিৎসা করবেন। এ সময় ওই পুত্রবধূ বলেন, আমাদের তাকে ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নেই। তখন তাদের উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, ঘটনাটি খুবই কষ্ট দায়ক ও দুঃখ জনক। একমাত্র ছেলে নিজের মাকে গোয়াল ঘরে গরুর মলমূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন।তিনি বলেন, ওই মাকে ছেলের ঘরে তুলে দেয়া হয়েছে। সোমবার ডাক্তার দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয় অমান্য করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পূত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৪৪