সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে এ বছর

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৫১ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে চলতি বছরের বর্ষাকালে অর্থাৎ জুলাই ও অগাস্টে গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সঙ্গে এই দুমাসের মধ্যে অন্তত পনের দিন দেশের কোনো না কোনো জায়গায় দাবদাহের মতো পরিস্থিতি দেখা গেছে, যা অনেকটাই নজিরবিহীন।

দেশটিতে সাধারণত জুলাই মাসে গড়ে প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এ বছর হয়েছে মাত্র ২১১ মিলিমিটার। আর অগাস্টেও হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০শতাংশ কম।

এ অবস্থার কারণে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তাই দিনের পাশাপাশি রাতেও যথেষ্ট গরম অনুভূত হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে আবহাওয়ার এমন আচরণের জন্য মৌসুমি বায়ুর খেয়ালি আচরণকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন যে বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রথমে লঘুচাপ হয় এবং এরপর সেটি মৌসুমি নিম্নচাপে রূপ নেয় ও এর প্রভাবে বৃষ্টি হয়।

“গত মাস ও এ মাসে অনেকগুলো লঘুচাপ হয়েছে কিন্তু এগুলো দ্রুত বাংলাদেশের ওপরে আসতে পারেনি। পরপর যে কয়েকটি নিম্নচাপ হয়েছে, সেগুলোর কারণে উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে পাকিস্তানে পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। গত সপ্তাহের আগেও পাকিস্তানে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান এবার বাংলাদেশে জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে যা গত ৪৬ বছরের মধ্যে আর হয়নি। আর অগাস্টে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম এবং গত প্রায় ২৩/২৪ বছরের মধ্যে অগাস্ট মাসে আর এত কম বৃষ্টি হয়নি।

অর্থাৎ যে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুলাই ও অগাস্টে বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টি হয় সেটি বাংলাদেশে না এসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণ হয়েছে পাকিস্তানে।

এর ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টির পানির অভাবে চাষাবাদে সংকট তৈরি হলেও উল্টো পাকিস্তানে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ বন্যায় মারা গেছে হাজারেরও বেশি মানুষ।

বাংলাদেশে এবার আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে বছরের শুরু থেকেই। ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের প্রকোপ কমতে না কমতেই দুই দফা ঝড় বৃষ্টি হয়েছিলো দেশের নানা জায়গায়।

কৃষি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রভাব

ফলে শুরু থেকেই এবার হয় টানা বৃষ্টি বা টানা খরার পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এর আগে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এক দিনেই ৫০ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা বৃষ্টি হয়েছিলো।

বজলুর রশীদ বলছিলেন যে আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক আচরণের ইঙ্গিত গত কয়েক বছর ধরেই পাওয়া যাচ্ছিলো।

“গত ডিসেম্বরে ৫শ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিলো। জানুয়ারিতে অন্তত গড়ের চেয়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি ছিলো দেশে। শীতকালে তাপমাত্রা কমার কোন লক্ষণ ছিল না। জানুয়ারিতে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনে সিলেট অঞ্চলে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। আবার বর্ষা মৌসুমে এসে বৃষ্টি অর্ধেকেরও কম হলো,” বলছিলেন তিনি।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই গোটা বাংলাদেশের তাপমাত্রা বাড়ছে। তবে সাধারণত জুলাই মাস থেকেই এদেশে বৃষ্টি শুরু হলে ভারী বর্ষণের কারণে তাপমাত্রা কমতে থাকে।

কিন্তু এবার ঠিক তার উল্টো চিত্রই দেখা গেলো। আবার আবহাওয়ার এমন খেয়ালি আচরণের কারণে কৃষিকাজ বিশেষ করে আমন চাষ স্বাভাবিকের চেয়ে ত্রিশ শতাংশ কম হয়েছে। আবার নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ তৌহিদা রশীদ বলছিলেন বৈশ্বিক উষ্ণতা ও তাপমাত্রা পরিবর্তন এর সাথে জড়িত এবং এর ফলে আবহাওয়ার যত দিক আছে সব কিছুতেই এর প্রভাব পড়ছে।

সব মিলিয়ে এ বছর বাড়তি তাপমাত্রা, কম বৃষ্টিপাত ও দাবদাহের ক্ষেত্রে রেকর্ড হলো বাংলাদেশে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন আবহাওয়ার এমন আচরণ সামনে আরও মোকাবেলা করতে হবে বলেই ধারণা করছেন তারা।

তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে জীবনযাত্রা ও কৃষিব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/০১.০৯.২০২২/সকাল ১১.২৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit