রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাঙামাটির ট্যুরিজম সেক্টরে বাঙ্গালী উদ্যোক্তার খবর পেলেই আঞ্চলিকদলের হুমকি নোয়াখালীতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পড়ে গেল খালে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ালেন শিক্ষার্থীরা নওগাঁ সরকারি কলেজে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়কের ওপর হামলা শার্শার গিলাপোলে প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত চৌগাছায় নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার চৌগাছায় জাবির-আলামিন স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত উলিপুরে ইউনিয়ন বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন চৌগাছায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসায়ী পলাতক ভূক্তভুগীদের মাথায় হাত বিসিএস পরীক্ষার বিষয়ে যে নির্দেশনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

স্ত্রীকে হত্যা করতে খুনিদের ৩ লাখ টাকা দেন বাবুল

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
  • ২৮২ Time View

ডেস্কনিউজঃসাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য নারীর সাথে সম্পর্কের জেরে তিনি স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। এ জন্য সোর্সের (তথ্যদাতা) মাধ্যমে তিনি তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেছিলেন।

বিদেশি এনজিও সংস্থার কর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে দাম্পত্য কলহের জেরে বাবুল আক্তার নিজের স্ত্রীকে হত্যার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নেন। পিবিআইর তদন্তে মিতু হত্যার রহস্য এভাবে উদ্ঘাটন হয়।

এ দিকে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বাবুল আক্তার- এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এ কারণে নির্দেশদাতা বাবুল আক্তারসহ এ হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সাতজনকে আসামি করে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী সপ্তাহে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার ছাড়াও অন্য যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তারা হলেন- মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ভোলো, মো: মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো: আনোয়ার হোসেন, মো: খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া। মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইতঃপূর্বে গ্রেফতার হওয়া চারজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বাবুল আক্তার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মো: ফখরুদ্দিন চৌধুরী বুধবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত ছিলেন। তার পরিকল্পনা ও নির্দেশে খুন হন স্ত্রী মিতু। মূল অভিযোগপত্র ৯ পৃষ্ঠার। তবে এর সাথে ১০ খণ্ডের নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। মামলার সাক্ষ্যস্মারকে (এমওই) আমি এরইমধ্যে স্বাক্ষর করে দিয়েছি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড সাবেক বরখাস্তকৃত এসপি বাবুল আক্তার। বাবুল আক্তার কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিদেশি এক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করান। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। মিতুকে খুনের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুলের ‘সোর্স’ মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। সাথে ছিল আরো ছয়জন। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার মুসাকে ফোনে গা ঢাকা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এদিকে মিতু খুনের পর মামলায় গ্রেফতার হওয়া চারজনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। এরা হলেন- মো: সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, নুরুন্নবী, রাশেদ ও গুইন্যা।

একটি বইয়ের লেখার সূত্র ধরে মামলার জট খোলে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। মামলার আলামত হিসেবে উপহার পাওয়া বাবুল আক্তারের একটি বই জব্দের পর হত্যাকাণ্ডের জট খোলে। ২০১৩ সালে কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত থাকার সময় বাবুলের সাথে সেখানে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত গায়ত্রী অমর সিংয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

গায়ত্রী বাবুলকে আহমেদ রশিদ রচিত ইংরেজি ভাষার ‘তালিবান’ নামে একটি বই উপহার দেন। ওই বইয়ের তৃতীয় পাতায় গায়ত্রী অমর সিংয়ের নিজের হাতে লেখা এবং শেষ পাতা ২৭৬-এর পরের খালি পাতাটিতে বাবুল আক্তারের হাতে লেখা ইংরেজিতে তাদের ‘প্রথম সাক্ষাত’র বিষয়সহ রোমান্সকর মুহূর্তের কিছু বিবরণ লেখা ছিল।

গ্রেফতার ভোলা, ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে মিতু হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এর মধ্যে ভোলা তার জবানবন্দিতে অপর আসামি মুসার সাথে কথোপকথনের বিষয় উল্লেখ করে। সেখানে বাবুল আক্তার যে মুসাকে তার (বাবুল আক্তারের) স্ত্রীকে হত্যার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন সেটি উল্লেখ আছে। তাছাড়া সাইফুল ইসলাম নামে নিজের এক ব্যবসায়ীক অংশীদারের মাধ্যমে বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মিতুকে হত্যার জন্য তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেন সেটিও জবানবন্দিতে এসেছে।

মামলার আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। কারাগারে আছেন- বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, শাহজাহান মিয়া ও আনোয়ার হোসেন।

মিতু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে হদিস মিলছে না কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসার। তার স্ত্রী পান্না আক্তার দাবি করেন, মুছাকে হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৬ সালের ২২ জুন প্রশাসনের কিছু লোক ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছে না। মিতু হত্যা মামলায় মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়। এর মধ্যে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার এবং বাবুলের বন্ধু সাইফুলও রয়েছেন।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন বাবুল আক্তার মামলায় আদালতে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো: কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মো: মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো: আনোয়ার হোসেন, মো: খাইরুল ইসলাম কালু, মো: সাইদুল ইসলাম।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। একইসাথে ওই মামলার ডকেট প্রথম মামলার সাথে সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আবেদন করেন। আদালত অনুমতি দিলে শুধু বাবুল আক্তারের করা মামলাটির তদন্তই চলমান থাকে। এখন বাবুল আক্তারের করা মামলায় বাবুল আক্তারকেই চার্জশিটে প্রধান আসামি করা হলো। অর্থাৎ স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বাদি থেকে আসামি হলেন বাবুল আক্তার।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ড বাবুল আক্তারের পরিকল্পনাতেই হয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছি। খুব শিগগিরই আদালতে জমা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে পিবিআই প্রধানও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বুধবার দুপুরে বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত শেষ পর্যায়ে। চার্জশিটটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এখনো আমার কার্যালয়ে আসেনি। তবে খুব শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে।’

কিউএনবি/বিপুল/২৪.০৮.২০২২/রাত ১১.২৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit