মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম

চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংহতি প্রকাশ

জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • Update Time : বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২
  • ১২১ Time View
জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : চা শ্রমিকদের মজুরী দৈনিক ৩০০ টাকা করার  দাবির আন্দোলনে সাথে একাত্মতা পোষণ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।আজ ১৬ আগস্ট (২০২২) মঙ্গলবার দুপুর বেলা দুইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস -সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ,সাদ্দাম হোসাইন-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ,রফিকুল ইসলাম সবুজ- যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ,কাজল দাস- সভাপতি, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ,অতনু বর্মণ- সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগ,ভিম্পালি ডেভিড রাজু- সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস ফোরাম,তামান্না বাড়াইক- আন্তর্জাতিক নারী বিষয়ক সম্পাদক,বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ(UTSA) এর উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য স্বপন নাইডু শিপন বাড়াইক, অনন্ত কুমার কৈরী, রঞ্জিত রবিদাশ, কৃষ্ণ রাজভর কিরণ,মনোজ কুমার যাদব, ধরম রবিদাশ, প্রিতম গোয়ালা, অনুরাধা বাড়াইক, জয়িকা রাজভর, লাকি রাণী, রুদ্রপাল প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘চা’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ফসল। সিলেটের সবুজে ঘেরা নয়নাভিরাম চা বাগানের দৃশ্য দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়।অথচ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে চা শ্রমিকরা দিনরাত অমানবিক  পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাদের খোঁজ খবর আমরা জানি না। নামীদামী ব্র্যান্ডের চা খেয়ে আমরা যারা আমাদের প্রাত্যহিক সকালের যাত্রা শুরু করি এবং সেইসাথে সজীবতার নিঃশ্বাস নেই তারা কয়জনই বা জানি এসকল মানুষদের নিষ্পেষিত জীবনব্যবস্থার কথা। চা গাছ ছেঁটে ছেঁটে ২৬ ইঞ্চির বেশি যেমন বাড়তে দেওয়া হয় না তেমনি বাড়তে দেওয়া হয় না লেবার লাইনে চা শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত ২২২ বর্গফুটের অর্থাৎ ৮ হাত বাই ১২ হাতের ছাউনিকেও। বাস্তবিক অর্থে যারা চা শ্রমিকের জীবনযাত্রা কাছ থেকে দেখেছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন চা বাগানে সবুজের ছায়াঘেরা ভাণ্ডারে কতটা অমানবিক ও বর্বর জীবন কাটাতে হয় শ্রমিকদের।চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, “অধিকারবঞ্চিত এই চা শ্রমিকদের রয়েছে করুণ ইতিহাস। ইংরেজরা ১৮৩৮ সালে ভারতবর্ষে চা চাষের সূচনা করে।পরবর্তীতে ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমেই এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয়। চা শিল্প যেহেতু একটি শ্রমঘন শিল্প, তাই সস্তা শ্রম নিশ্চিত করতে তৎকালীন ইংরেজ বণিকরা প্রতারণার মাধ্যমে আজীবন কাজ করার শর্তে চুক্তিবদ্ধ করে ভারতের উড়িষ্যা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ ও উত্তরপ্রদেশ এবং বাকুঁড়া অঞ্চলের চাষীদেরকে চা শ্রমিক হিসেবে সংগ্রহ করে। তাদেরকে এই বলে প্রতারণা করা হয়েছিল যে “গাছ হিলায়েগা, পয়সা মিলেগা”। এরপর প্রায় ১৭০বছর কেটে গেছে, কিন্তু ভাগ্য ফেরেনি এই হতদরিদ্র চা শ্রমিকদের।দেশে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসরত চা শ্রমিকরা শ্রমে-ঘামে প্রায় প্রতিবছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও তাদেরকে ছাড়ে না বঞ্চনা আর অভাব। ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদন হয় ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজি। এর আগে চা উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিলো ২০১৯ সালে ৯ কোটি ৬০ লাখ। সময়ের গতিধারায় দ্রব্যমূল্য পাল্লা দিয়ে বাড়লেও তাদের মজুরি সেভাবে বাড়ে নি। প্রতিদিন ১২০ টাকা মজুরিতে চা শ্রমিকদের জীবন কাটাতে হয়। তাদের মজুরি নির্ধারণের জন্য মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে দুই বছর অন্তর অন্তর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয়। তবে ২০১৯ সালে সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয় যারা এই দুপক্ষের আলোচনার প্রেক্ষিতে মজুরি নির্ধারন করে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, এ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির সময় চা-শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতামত অগ্রাহ্য করে মালিকপক্ষ একতরফাভাবে মজুরি নির্ধারন করে থাকেন। এক্ষেত্রে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সদস্যরাও নির্বিকার থাকেন। ফলে দিন দিন দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লেও, আশানুরূপ মজুরি বাড়ছে না চা শ্রমিকদের।বক্তারা আরো বলেন,”বাংলাদেশ চা সংসদ”( মালিকপক্ষ) ও “বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন” এর মধ্যে সর্বশেষ চুক্তি হয় ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর (যা ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর) এবং চা শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় ‘এ’ ক্যাটাগরি বাগানের জন্য ১২০ টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরি বাগানের জন্য ১১৮ টাকা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি বাগানের জন্য ১১৭ টাকা (চা বাগানগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এই ক্যাটাগরি করা হয়ে থাকে)। চুক্তি অনুযায়ী এরপর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বাজার দরের সাথে সংগতি রেখে মজুরি বৃদ্ধির কথা থাকলেও পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১৯ মাস, কিন্তু মজুরি বাড়ে নি তাদের। বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের এই উর্ধগতির সময় ১২০ টাকা মজুরি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য এই চুক্তি কালক্ষেপনের প্রতিবাদে এবং দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি নিয়ে গত ৫ দিন ধরে সিলেট বিভাগের সব কয়টি চা বাগানে চা শ্রমিকরা “বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (বাচাশ্রই)”-এর নির্দেশে কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।তাই তাদের এ ন্যায্য দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছি। বাংলাদেশের  সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা চা শ্রমিকদের এই ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করছি”‌।

 

কিউএনবি/অনিমা/১৭ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:১৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit