ডেস্ক নিউজ : রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও ১৫ দিন। যদিও টানা তিনমাস হ্রদে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় চলমান নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসনক মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর তিন মাসের জন্য কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ করা হয়। চলতি বছরও করা হয়েছে। রবিবার কাপ্তাই হ্রদে নিষেধাজ্ঞার তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তবুও কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ করা যাবে না। কারণ হ্রদে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি একেবারে কম রয়েছে। কম পানিতে মাছ আহরণ করলে মা মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ দেশের মিঠা পানির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রপ্তানি করা হয় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর এ হ্রদের মাছের উপর জীবন ও জীবিকা চলে এ অঞ্চলের ২২ হাজার মৎস্যজীবীর।
রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ৬৬টি দেশীয় প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতিবছর রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়। তাই চলতি বছরের গত ১ মে থেকে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য টানা তিন মাসের জন্য রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও বিএফডিসি।
এতে কিছুটা উদ্বেগ মৎস্যজীবীরা। দেখা দিয়েছে নতুন করে শঙ্কা। যে হ্রদের মাছ আহরণ করে চলে মৎস্যজীবীদের জীবন ও জীবিকা, তা এখন স্থবির। কর্মহীন জীবনযাপন করছে অনেকেই। মৎস্যজীবী মো. আনোয়ার বলেন, আমরা ৯ মাস ব্যবসা করি। ৩ মাস বসে থাকি। আর অপেক্ষায় থাকি পোনামাছ বড় হওয়ার। মা মাছেরা ডিম ছাড়ে আর পোনা মাছ বড় হতে সময় লাগে মাত্র ৩ মাস। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র কাপ্তাই হ্রদের বৃদ্ধি পাচ্ছে না পানি। এটা নতুন সংকট।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম তৌহিদুল ইসলাম (ট্যাজ) বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ার কারণে ভরাট হয়ে গেছে হ্রদের তলদেশ। নষ্ট হয়ে গেছে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। বৃদ্ধি পাচ্ছে না পানিও। এতে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি এখনো অনেক কম। তাই তিন মাস পূর্ণ হলেও আমরা হ্রদে মাছ আহরণে অনুমতি দিতে পারি না। কারণ জেলেরা যখন কম পানিতে মাছ আহরণ করবে, তখন মাছও ধরা পড়বে। আর মা মাছ ধরা পড়লে মাছের বংশ বৃদ্ধি পাবে না। মাছ উৎপাদনে সংকট তৈরি হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৩১ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:০৪