সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

লম্বি জুদাই-২ : নাহিদ-রুমকীর অসমাপ্ত কথোপকথন

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২
  • ৭২৮ Time View

মাগরিবের নামাজের পর নিউইয়র্কের কুইন্স এর কিউ গার্ডেন্স থেকে রুমকীর ফোন পেল নাহিদ। আজ আর কোন সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে শুরু করলনা রুমকী। ঈদ কেমন হলো, কুরবানী কি দিলে ? ছেলেমেয়েরা কেমন ঈদ করল? কেমন দিন কাটল তোমার ? এক সঙ্গে অনেক প্রশ্ন রুমকীর। পর্যায়ক্রমে জবাব দিল নাহিদ।

এখন আমার সময় কাটে তোমার গান শুনে। তুমি গত ৯ই মে একটি ভিডিও সঙ আপলোড করেছিলে তোমার ফেসবুক টাইমলাইনে। আজ জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে। সুযোগ পেলেই আমি তোমার এ গানটি শুনি। ফিরে যাই অতিত দিনে।

নস্টালজিয়া পেয়ে বসেছে রুমকীকে। আজ সে শুরু করল, পুরোনো দিনের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা দিয়ে।

নাহিদ বলল কি হয়েছে তোমার ? পুরোনো দিনের কথা বলে আর কি হবে ? সেতো কেবলি এক ধূসর স্মৃতি। রুমকী বলল, তারপরেও আজ আমরা পুরোনো দিনের কথায় চলে যেতে চাই। আমাদের স্বর্ণালী দিন গুলোর কথা। রুমকী শুরু করল।

দুপুর ১২.১৫তে আমার ক্লাস শেষ হতো। ক্যাম্পাস থেকে মিরপুরে ফেরার চৈতালির প্রথম বাস ছেড়ে যেত ১২.৩০ এ। রেজিস্টার বিল্ডিঙের পিছন থেকে সব বাস গুলো ছাড়ত। তরঙ্গ, মালঞ্চ, বৈশাখী আরও কত কি রুটের বাস ছিল। সবচেয়ে বেশি ভিড় হত ক্যাম্পাস থেকে মিরপুর ১২ গামী চৈতালি বসে। ১২.১৫ এর ক্লাস শেষ করে কলাভবন থেকে রেজিস্টার বিল্ডিঙের পিছনে যেয়ে আমার কোনোদিনই চৈতালি বাসে সিট পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রতিদিনই আমি সিটে বসে যেতাম। নাহিদ, তুমি আগে যেয়েই সিটের উপর একটা খাতা রাখতে। নীল মলাটের খাতাটা এখনো আমার চোখে ভাসে। বাসে উঠে সিটের উপর নীল খাতাটা দেখলে বুকের মাঝে রক্ত ছলকে উঠত। বুঝতাম তুমি আছো আশেপাশেই।

নাহিদ হেসে বলল, আর তুমি সিটে বসেই খাতাটা খুলতে। মধ্যরাত ব্যাপী জেগে থেকে আমি কি কি এলেবেলে লেখা লিখতাম, তা পড়তে পড়তে তুমি মিরপুর চলে যেতে।

হ্যা, গভীর মনোযোগের সাথে সে লেখাগুলো পড়তাম। তোমার লেখা ছিল প্রাঞ্জল ও ঝরঝরে বাংলা। কিন্তু হাতের লেখা ভাল ছিলোনা। রুমকীও পাল্টা হেসে এ কথা বলল। রুমকী জানতে চাইল, আমার জন্যে তুমি এ কাজটি প্রতিদিন কেন করতে ?

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাহিদ বলল, তুমি ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছ, আর তোমার সাথে আমার দেখা হবে না, তা কি করে হয় ? এই মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্যে আমি প্রহর গুনতাম। বাস ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে রেজিস্টার বিল্ডিঙের ক্যান্টিনে গরম গরম ভাজা সিঙ্গারা আর সমুচার প্যাকেটটা জানালা দিয়ে দিতাম তোমার হাতে। তুমি তোমার ঝকঝকে রুপালি হাসি উপহার দিতে। আমার কাছে মনে হত, এরচেয়ে আর সুখ বলতে কিছু নেই। অবশ্য এরজন্যে একটা ইম্পরট্যান্ট ক্লাসকে আমার কোরবানী দিতে হত।

অপর প্রান্তে কুইন্সের গার্ডেন সিটির এক এপার্টমেন্টের ব্যালকনিতে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে রুমকীর। আহ কি সুন্দর জীবনটাই না ছিল তাদের ! নাহিদ বুঝতে পারে কাঁদছে রুমকী। পরিবেশটাকে হালকা করার জন্যে নাহিদ রুমকীকে বলল, ৮৮ সালের বন্যায় তোমার বাসা যাওয়ার একটা ঘটনা আছে। যা তোমাকে কোনোদিনই বলিনি। শুনবে ? রুমকী ভাঙ্গা গলায় বলল, শুনবো, তুমি বলো।

১৯৮৮ সালের বন্যায় মধ্য ঢাকা শহরের কিছু অংশ ব্যাতিত প্রায় সব এলাকাই ডুবে গেছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। মতিঝিলের শাপলা চত্বরেও ডিঙ্গি নৌকা চলে। মিরপুরের ইব্রাহিমপুরে তোমাদের বাসার নিচতলা অনেক আগেই ডুবে গেছে। বন্যার কারণে তুমি ক্যাম্পাসে আসছোনা। তোমার বিরহে আমি কাতর। মনের দুঃখে আমার হলের রুমে বসে পাকিস্তানী রেশমার গান শুনি।

Ek to sajan mere paas nahi re, Dooje milan dil koyi aas nahi re
Uspe yeh savan aaya, Uspe yeh savan aaya aag lagayi, Haye lambi judai.
( আমারতো একজনই বন্ধু, সে নেই পাশে, দুজনের মিলনে কভু আশা না মিটে, তার বিরহে শ্রাবণেও আগুন লাগে, হায় লম্বি জুদাই ) ।

একদিন হটাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, কয়েকটি পানির জেরিক্যান ও শুকনো খাবার নিয়ে আমি তোমার বাসায় যাবো। তোমার সাথে আমার দেখা হবে এটা ভাবতেই শিহরিত হচ্ছিলাম। সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে পানি ও বিস্কুট পাউরুটির ব্যাগ নিয়ে পলাশীর মোড়ে বেবি ট্যাক্সির জন্যে অপেক্ষা করছি। পলাশীর মোড়ে বিশাল বিশাল রেইনট্রি গাছে হাজার হাজার কাকের বসবাস। এর একটি গাছের বেরসিক এক কাক গাছের ডালে ভক্ষনরত ছাগলের নাড়ি ভুঁড়ি ফেলে দিল আমার গাঁয়ে। শার্ট প্যান্ট নিমিষেই নষ্ট হয়ে গেল। কি আর করি, আবার হলে ফিরে ড্রেস পাল্টিয়ে তোমার কাছে ছুটে গিয়েছি।

এক কোমর পানি ভেঙ্গে তুমি বাসায় এসেছিলে। তোমাকে দেখে আমার খুব মায়া লেগেছিল সেদিন, রুমকী বলল। নাহিদ হাসতে হাসতে বলল, বেবি ট্যাক্সিতে আগারগাঁও পর্যন্ত যেতে পেরেছি। এরপরে পুরো রোকেয়া সরণীতে ডিঙ্গি নৌকা চলেছে। কাজীপাড়া পার হয়ে নৌকা থেকে নেমে কিছুদূর হেটে আবারো পানি। এখানে রিক্সা বা ডিঙ্গি ছিলনা। ময়লা পানি ভেঙ্গে গিয়েছি তোমার বাসায়।

এবার আর কান্না নয়, নিউইয়র্কের কুইন্স প্রান্ত থেকে করুন সুরে স্যাড সং গাচ্ছে রুমকি। চার দিনোকা পেয়ার ও রাব্বা, বড়ি লম্বি জুদাই, বড়ি লম্বি জুদাই, হোটপে আয়ি মেরি জান দুহাই, হায় বড়ি লম্বি জুদাই।

লেখকঃ লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ,কলামিস্ট।

কিউএনবি/বিপুল/১৩.০৭.২০২২/ দুপুর ১২.২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit