মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
চিকিৎসক হয়েও সুরের ভুবনে ঝংকার তুলছেন রানা প্রশাসনে রদবদল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি তাঁবেদার থেকে দেশ রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে: রেজাউল করিম দৌলতপুরে ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা : আটক-২ অবিশ্বাস্য থ্রোতে ভাঙল ৪৪ রানের জুটি, বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন মিরাজ ফুলের মতো পবিত্র মানুষগুলোই আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে”–কুড়িগ্রামে পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ কিম বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা, প্রতিরক্ষা জোরদারের ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার মাশরাফি-সাকিবের রেকর্ড ভেঙে রিশাদের ইতিহাস ট্রফি ফিরে পেতে নকভিকে ভারতের চিঠি নোয়াখালীতে বিনা ভোটে বিজয়ী হতে নমিনেশন ফরম ছিঁড়ে প্রার্থীর ভাইকে মারধর

জাপানকে যেভাবে বদলে দিয়েছিলেন শিনজো আবে

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২
  • ১৯১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পরিচিত ছিলেন তার আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতি এবং স্বকীয় অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য। ওই অর্থনৈতিক পদ্ধতি দেশেবিদেশে পরিচিতি লাভ করেছিল ‘অ্যাবেনোমিক্স’ নামে। একইসঙ্গে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও অত্যন্ত বিতর্কিত ৬৭ বছর বয়সী এ রাজনীতিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দুইবার নির্বাচনে বিজয়ী করেছেন। একজন জনপ্রিয় এবং বিভাজনকারী রাজনীতিবিদ হিসেবে জনসাধারণের মধ্যে তীব্র আবেগ জাগিয়ে তোলা ছিল তার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবের প্রথম কার্যকাল ছিল সংক্ষিপ্ত- ২০০৬ সালে শুরু হয়ে এক বছরেরও অল্প বেশি সময়। এবং তা ছিল বিতর্কিত। কিন্তু তিনি ২০১২ সালে আশ্চর্যজনকভাবে ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ২০২০ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেনি তিনি। সে বছরই স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেন। আবে যখন ক্ষমতায় তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন তখন জাপান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ছিল। বলা হয় তার অর্থনৈতিক নীতি ওই স্থবির অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে সফল হয়েছিল।  

আবে ২০১১ সালে এক বিশাল ভূমিকম্প এবং সুনামি থেকে জাপানের পুনরুদ্ধার কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ওই ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ২০ হাজার লোক প্রাণ হারানো ছাড়াও ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লিতে বিপর্যয় ঘটে।  ২০২০ সালে পদত্যাগের পর আবের স্থলাভিষিক্ত হন তার ঘনিষ্ঠ দলীয় মিত্র ইয়োশিহিদে সুগা। তারপরও জাপানের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হয়ে আসছিল আবেকে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিনতারো আবের ছেলে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী নোবুসুকে কিশির নাতি হিসাবে আবের জন্ম এক রাজনৈতিক পরিবারে। আবে মনে করতেন, তার মিশন হচ্ছে পূর্বপুরুষদের কাজ অব্যাহত রেখে জাপানকে আবার শক্তিশালী, মহান এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমীহ পাওয়ার মতো একটি শক্তিতে পরিণত করা। পরিণত বয়সে তিনি দেশে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রাজনৈতিক আধিপত্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের প্রতি আবের মনোভাব ছিল বিরূপ। এর মূলে সম্ভবত ছিল ১৯৬০ সালে বিশাল এক সরকারবিরোধী বিক্ষোভে তার দাদার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার ঘটনা।

শিনজো আবে প্রথম পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন ১৯৯৩ সালে। ২০০৫ এ তিনি প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন। পরের বছরই বসেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে। এভাবে তিনিই হন যুদ্ধোত্তর জাপানের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তবে একের পর এক কেলেঙ্কারি  (যার মধ্যে ছিল সরকারি পেনশন রেকর্ড হারিয়ে ফেলা) তার প্রশাসনকে কঠিন ধাক্কা দেয়। ২০০৭ সালের জুলাইতে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে এলডিপি খুব খারাপ ফল করে। সেই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি এক ধরনের জটিল আলসারের জন্য পদত্যাগ করেন।

তবে ২০১২ সালে আবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে আসেন। আবে তখন বলেছিলেন, ওষুধের সাহায্যে রোগটি কাটিয়ে উঠেছেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ ও ২০১৭ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়ে জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। আবের জনপ্রিয়তা ওঠানামা করলেও এলডিপিতে ব্যাপক প্রভাবের কারণে তিনি অনেকাংশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। দলটি তাকে নেতা হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিতে এর গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছিল।

প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে আগ্রাসী অবস্থান নিয়ে আবে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সমান মিত্র এবং অংশীদার হওয়ার দিকে জোর দিয়েছিলেন। এ নীতির আলোকে তিনি জাপানের যুদ্ধোত্তর শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন করার দীর্ঘলালিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যান।  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর জার্মানির মিত্র জাপানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ওই সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল, একদা যুদ্ধবাজ শক্তিশালী জাপান যেন আর আগ্রাসী সামরিক শক্তি হয়ে উঠতে না পারে। জাপানের রক্ষণশীলরা ওই সংবিধানকে দেখে আসতেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের বাহিনীর অপমানজনক পরাজয়ের স্মারক হিসাবে।

আবের ওই জাতীয়তাবাদী এবং সমরমুখী অবস্থান দেশকে গভীরভাবে বিভক্ত করে। শান্তিবাদী সংবিধানকে পছন্দ করে আসা জনগোষ্ঠী আতঙ্কিত হয়। সেইসঙ্গে এতদিন কোণঠাসা থাকা সংশোধনবাদী এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী শক্তি কিছু জনপ্রিয়তা পায়। যুদ্ধ-পরবর্তী জাপানে তারা দীর্ঘকাল ধরে সংখ্যালঘু হিসাবে ছিল।  

২০১৫ সালে শিনজো আবে সম্মিলিত আত্মরক্ষার অধিকারের পথে অগ্রসর হন। এ উদ্যোগ জাপানকে আক্রমণের মুখে নিজেকে এবং মিত্রদের রক্ষার জন্য বিদেশে সেনা পাঠাতে সক্ষম করে। প্রতিবেশী এবং এমনকি জনসাধারণের বিরোধিতা সত্ত্বেও সংসদ এই বিতর্কিত পরিবর্তনকে অনুমোদন করে।

তবে জাপানের সামরিক বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধন করার বিষয়ে তার বৃহত্তর লক্ষ্যটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ বিষয়ে জাপানের জনগণ এখনো গভীরভাবে দ্বিধাবিভক্ত। রাশিয়া ও জাপান উভয়ের দাবি করা উত্তর জাপানের কয়েকটি দ্বীপও দখলে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন আবে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবের সুসম্পর্ক জাপানকে মার্কিন আরোপিত কঠিন বাণিজ্য শুল্ক থেকে সুরক্ষা দিয়েছিল। নিজস্ব বিশেষ অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে মন্দা থেকে জাপানের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতেও সচেষ্ট হয়েছিলেন তিনি। ওই নীতির জনপ্রিয়তার বলে ২০১২ সালে আবে এবং এলডিপি- ক্ষমতায় ফিরে আসে৷ কিন্তু ২০২০ সালের বসন্তে দেশ আবার মন্দায় আক্রান্ত হলে তার প্রচেষ্টা একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। মন্দাসহ আরো কিছু বিষয়েএবার আবের অর্থনৈতিক কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা নিয়ে উদ্বেগও আবের জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। সমালোচকরা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ পর্যটন বাড়ানোর লক্ষ্যে চালানো তার প্রচারণা সংক্রমণ আবার বাড়ায় ভূমিকা রাখে।

আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ট্র্যান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ নামে ১১ টি দেশের মধ্যে একটি বিশাল বাণিজ্য চুক্তি টিকিয়ে রাখার জন্য কৃতিত্বের অধিকারী। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র আকস্মিকভাবে এ থেকে সরে গিয়েছিল।  

আবের পদত্যাগের ঘোষণা এলডিপির উপদলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের সূত্রপাত করে। কারণ তিনি কোনো উত্তরাধিকারী মনোনীত করতে রাজি হননি। অবশেষে ইয়োশিহিদে সুগা তার স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু সুগা এবং তারপর ক্ষমতায় আসা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সময়েও আবে জাপানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।

৮ জুলাই শুক্রবার আবে নারা শহরে জাপানের পাার্লামেন্টের  উচ্চকক্ষের নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। বক্তৃতা দেওয়ার সময় এক বন্দুকধারী তাকে গুলি করে। হাসপাতালে কয়েকঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়। ঘাতক ৪১ বছর বয়সী ব্যক্তিটি জাপানের নৌবাহিনীর সমতুল্য প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য বলে মনে করা হয়। ওই ব্যক্তি বলেছেন তিনি ‘আবের প্রতি অসন্তুষ্ট’ তবে রাজনৈতিক ক্ষোভের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

শিনজো আবে তার স্ত্রী আকিকে রেখে গেছেন। আকি একজন রেডিও ডিজে। ১৯৮৭ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল।  
সূত্র: বিবিসি

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৯ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit