ডেস্ক নিউজ : ‘আর রিলিফ (ত্রাণ) দরকার নাই। ঘরের চাল দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে, মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই চাই।’
এভাবে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছেন কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওড়পারের আবুতালিপুরের নিপেন্দ্র নাথ। বন্যার কারণে তার মতো এমন হাজারও পরিবারের কণ্ঠেই এমন আহাজারি।
বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ভাঙা বাঁশের বেড়া মেরামত করার সময় তিনি বলেন, বর্গাজমির ওপরেই চলে সংসার। কিতা করমু (কি করবো) তকদির (কপাল) মন্দ। বড় অসহায় অইয়া পড়লাম (হয়ে গেলাম)।
নিপেন্দ্র জানান, বৃষ্টি হলে তিনি ঘুমাতে পারেন না। কারণ তার ঘরটি এমনিতেই হেলে পড়েছে। তার উপর চালের টিনে অসংখ্য ছিদ্র। আর সেই ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে তার কাঁথা-বালিশ ভিজে গেছে। বিছানা শুকনা রাখতে বউয়ের সাথে মাঝে মধ্যে বসে বসে সারারাত কাটিয়ে দেন তিনি। ঘরের মেঝেতে বন্যার পানি আর বৃষ্টি হলে বিছানা ভিজে। এভাবেই গত ১০-১২ দিন অমানবিক কষ্টে কাটছে তাদের দিনকাল।
নিপেন্দ্র নাথের একমাত্র ছেলে নয়ন দেবনাথ রংমিস্ত্রির সহকারী। বন্যা শুরুর পর থেকে কোনো কাজই পাচ্ছেন না তারা। তার বউ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তকদিরে লেখা আছে বলে বউকে সান্ত্বনা দেন।
তিনি বলেন, এরকম পানি আর কোনোদিন দেখিনি। ঘরেও পানি উঠিছে। চেষ্টা করছি থাকার জন্য। হেলে পড়া ভাঙা ঘরটি এখন শেষ ভরসা। কোনোমতে টিকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার বিমল দাস জানান, নিপেন্দ্র নাথের ঘরের যে অবস্থা তাতে বসবাস করা মুশকিল। ত্রাণ যা পেয়েছেন তা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু মাথা গোঁজার একটু ব্যবস্থা হলেই চলবে। এ অবস্থায় যদি প্রশাসন বা বিত্তবানদের সহায়তা পেলে একটি ঘর করে দিলেই হবে।
শুধু নিপেন্দ্রই নয় কুলাউড়া উপজেলার বন্যাকবলিত ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় হাজার হাজার মানুষের মাথা গোজার শেষ সম্বলটুকু বন্যা কেড়ে নিয়েছে। বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন হবে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত মানুষের মাঝেও নিজবাড়িতে ফেরার ব্যাকুলতা। কিন্তু বাড়িঘর অনেকটাই বিপন্ন।
কিউএনবি/অনিমা/০৩ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:৫৮