বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন

নজিরবিহীন বন্যায় বিধ্বস্ত আসাম, তছনছ লাখো বাড়িঘর

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
  • ৯২ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘সব জায়গাতেই পানি কিন্তু খাওয়ার পানি নেই এক ফোঁটাও’- এভাবেই রনজু চৌধুরী তার বাড়ির চারদিকের পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রত্যন্ত এক গ্রাম উদিয়ানায় বাস করেন তিনি। পুরো রাজ্যটিই এখন ভয়াবহবন্যায় বিপর্যস্ত।

বিরতিহীন বৃষ্টিপাতের কারণে খুব দ্রুতই রাস্তাঘাট সব পানিতে ডুবে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পানি যখন ঘরে পৌঁছালো, তখন অন্ধকারের মধ্যেই নিজেদের নিরাপদে রাখতে একসাথে অবস্থান করছিলেন মিজ. চৌধুরী। দুদিন ধরে নিজের বাড়িতেই আটকা তারা, যেটি এখন সাগরের পানির মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রূপ নিয়েছে।

“আমাদের চারদিকে বন্যার পানি। খাবার পানি নেই বললেই চলে। খাবারও ফুরিয়ে আসছে। এখন শুনতে পাচ্ছি বন্যার পানি আরও বাড়ছে,” বলছিলেন তিনি।

নজিরবিহীন বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করছে আসামকে। গ্রাম, ক্ষেত খামার, বাড়িঘর- সব পানির নীচে।

কর্তৃপক্ষের হিসেবে রাজ্যের ৩৫টি জেলার মধ্যে ৩৩টিই বন্যায় আক্রান্ত। মারা গেছে ৩৪ জন আর ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ।

ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রতিবেশী মেঘালয় রাজ্যেও, যেখানে গত সপ্তাহে মারা গেছে আঠারো জন।

আসামেই সরকার ১১৪৭টি রিলিফ ক্যাম্প খুলেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিপর্যয়ের মাত্রা এতো বেশি যে তাদের কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি রেসকিউ ক্যাম্পগুলার অবস্থাও নড়বড়ে।

“ক্যাম্পে খাবারের পানি নেই। ছেলের জ্বর কিন্তু চিকিৎসকের কাছে নিতে পারছি না,” বলছিলে হুসনা বেগম নামে উদিয়ানার আরেকজন নারী।

বুধবার বাড়িতে পানি আসার থেকে তিনি দুই সন্তানসহ একটি প্লাস্টিকের তাবুতে অবস্থান করছেন।

“এমন অবস্থা আর কখনো দেখিনি। জীবনেও এতো বড় বন্যা দেখিনি,” বলছিলেন তিনি।

ব্রক্ষ্মপুত্রকে বলা হয় আসামের লাইফ লাইন। সেই নদীকে ঘিরে যাদের বসবাস তাদের জন্য বন্যা নতুন কিছু নয়।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নির্মাণ কাজ আর দ্রুত শিল্পায়নের কারণে দুর্যোগের ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

আসামে এটা চলতি বছরেই দ্বিতীয় বন্যা। এর আগের বন্যায় মে মাসে মারা গিয়েছিলো ৩৯ জন।

রাজ্যে ইতোমধ্যেই গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে ১০৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি অনেক জায়গাতেই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

রাঙ্গিয়া শহরের একজন সাব ডিভিশনাল কর্মকর্তা জাভির রাহুল সুরেশ বলছেন, “এবার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছি। এখন আমাদের অগ্রাধিকার হলো জীবন বাঁচানো।”

আসামের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র গৌহাটি। সেখানকার ধানক্ষেত গুলো এখন কাদামাটিতে পূর্ণ জলাভূমিতে রূপ নিয়েছে।

অন্যদিকে উদিয়ানায় স্কুল, হাসপাতাল, মন্দির-মসজিদ- সব কিছুই এখন পানির নীচে।

বাঁশ আর কলা গাছের ভেলায় যাতায়াত করছে মানুষ। অন্যরা সাঁতরাচ্ছে বাদামী রংয়ের পানিতে আর তাকিয়ে আছে কখন আসবে উদ্ধারকারীরা।

৬৪ বছর বয়সী সিরাজ আলী বলছিলেন, যখন তাদের গ্রাম প্লাবিত হয় ও সবকিছু ধ্বংস করে তখন তিনি জীবন নিয়েই সংশয়ে পড়েছিলেন। এখনো যে ঘরে তিনি আছেন তার একটি অংশে পানি।

সন্তানদের তিনি পাঠিয়েছেন রাস্তার ধারে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। আর নিজে অপেক্ষা করছেন তাকে সহায়তা করতে কেউ আসে কি না।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়শ্রী রৌত বলছেন, কোন সন্দেহ নেই যে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যোগসূত্র খোঁজার আগে বন উজারের মতো মনুষ্য সৃষ্ট কারণগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে।

নদীর কাছে বড় বড় গাছ কাটা এখনি বন্ধ করা দরকার।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/২১.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit