ডেস্কনিউজঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পৌরশহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। এছাড়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন।
এছাড়া পানিতে চান্দগ্রাম মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এদিকে গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ভারী বর্ষণে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যুনার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় চারজন আহত হয়েছেন। এছাড়া বড়লেখা সদর ইউপির কেছরিগুল গ্রামে টিলা ধসে একজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে শনিবার তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ রোববার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই শিশুর নাম জানা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরো জেলার মধ্যে বন্যায় বড়লেখা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, আয়েশাবাগ চা বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় চারজন আহত হয়েছেন। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনও পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এছাড়া পৌরশহরের প্রায় সবকটি দোকানে পানি উঠে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া আদিত্যের মহাল এলাকায় শনিবার ঢলের পানিতে পড়ে তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ রোববার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত রারা হয়েছে। রবিবার আমরা পানিবন্দি এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।
বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মওজুদ রয়েছে। প্রায় তিন হাজার ট্যাবলেট বিতরণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও নলকূপের প্লাটফর্ম উঁচুকরণ ও আশ্রয় কেন্দ্রে নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলমান আছে।
পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম এমাজ উদ্দিন সরদার রোববার বিকেলে বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। পানি এখন নেমেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্নস্থানে ২০টি বড় গাছ পড়েছে। ১৮টি স্থানে তার ছিঁড়েছে। ২২টি স্থানের কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে ও আবার কোথাও তা পড়ে গেছে। ২৬টি মিটার ভেঙে গেছে। ১৬টি ইন্সুলেটর ভেঙে গেছে। ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতে কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে তলিয়ে গিয়েছিল। আমাদের ফায়ার সার্ভিসে পানি উঠেছিলো। আজ ভোরে (রবিবার) পানি নেমে গেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
কিউএনবি/বিপুল/১৯.০৬.২০২২/ সন্ধ্যা ৭.১৮