ডেস্কনিউজঃ ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি-সংক্রান্ত যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা একেবারেই পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে এখন আবার বৈদেশিক খাতে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়ন চ্যালেঞ্জিং ছিল।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আমরা সাড়ে তিন লাখের কথা বলেছি, কিন্তু সেখানে রাখা হয়েছে তিন লাখ। আমরা বাজেট প্রস্তাবনায় আরও বলেছিলাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে বিভিন্ন ধরনের যে কর আছে সেগুলোকে উঠিয়ে দেওয়া। কিছু কিছু পণ্যের ওপর কর উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়।
অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ যে এখন রাজনৈতিক সূচকে পরিণত হয়েছে, তার প্রমাণ হচ্ছে এই বাজেট। মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন প্রাক্কলন সংযত করে নিচের দিকে নামানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গতবারের অর্জিত মানের ওপর আরও বর্ধিত কী হলো সেটা দেখতে হবে। কারণ বিনিয়োগ না বাড়ালে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, নতুবা কর্মের উৎপাদশীলতা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লেও প্রবৃদ্ধি বাড়বে, এটি যৌক্তিক নয়।
এবার বিনিয়োগের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে কম। এমনকি সরকারি ব্যয়েও বিনিয়োগ গত বছরের চেয়ে কম। এবার সরকারি বিনিয়োগ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজারে মূলত রাসায়নিক সার, জ্বালানি এবং খাদ্যশস্য মূল্যস্ফীতিকে ধাবিত করে। সরকার তো এই তিনটি পণ্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সুতরাং, কিছু বিলাষীপণ্যের আমদানির ওপর করারোপ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ খুবই সীমিত। সরকার সংযত আচরণের মাধ্যমে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে। এটিও ভালো দিক। তবে সেটা বাস্তবতার তুলনায় একেবারেই কম।
বাজেটের মন্দ দিক তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিকভাবে হটকারী সিদ্ধান্ত হলো, পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে এবং সুবিধাজনক করের হারে ফেরত আনার সুযোগ দিচ্ছে। এটি একটি অকার্যকর প্রস্তাব এবং এর মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা কখনই অর্জিত হবে না। এর মাধ্যমে শাসক দল কেবল কালিমায় লিপ্ত হবে।
বাজেটের ভালো দিক তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের বেশ কিছু ভালো দিক আছে। কিছু বিলাসদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছে সরকার। এটি ভালো উদ্যোগ। রাজস্ব কার্যক্রম সম্প্রাসরণ করা বাজেটের সময়োচিত সিদ্ধান্ত। কর আওতার বাইরে অনেক খাত করের আওতায় আনা হচ্ছে। করের খাতগুলো ব্যাংকভিত্তিক করা হয়েছে। করের হারকে যৌক্তিকীকরণ, ব্যবসা, উৎপাদনের মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে, যা খুবই ভালো দিক। এছাড়া, প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মতো সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই সিদ্ধান্তগুলোকে আমি সমর্থন করি।
কিউএনবি/বিপুল/০৯.০৬.২০২২/ রাত ১১.২৫