শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন

পরিবার না থাকার ক্ষতিকর দিক

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৫ মে, ২০২২
  • ১১৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : পৃথিবীর আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.)-কে কেন্দ্র করে মানবজাতির প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল জান্নাতে। এই পরিবারের সদস্য স্বামী ও স্ত্রীকে উদ্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেছিলেন, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো এবং সেখান থেকে যা চাও খুশিমনে খাও। কিন্তু তোমরা দুজন এই গাছটির কাছেও যেয়ো না। তাহলে তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৫)

এই প্রথম পরিবার থেকে মানবজাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। যিনি তোমাদের একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ওই দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অন্যের কাছে যাচ্ঞা (সাহায্য কামনা) করে থাকো এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর সদা সতর্ক তত্ত্বাবধায়ক। ’ (সুরা: নিসা, আয়াত : ১)

পরিবার একটি সর্বজনীন পদ্ধতি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। সারা বিশ্বে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। পরিবার একজন মানুষের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ একেকটি পরিবার বহু হৃদয়ের সমষ্টি, যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, আছে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, মিলেমিশে থাকার প্রবল বাসনা; আছে নিরাপত্তা, সহনশীলতা এবং পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে পারিবারিক বন্ধনের প্রভাব বিস্তৃত।

পরিবার মানুষের জন্য যেমন নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তেমনি মানসিক প্রশান্তি লাভের স্থান। মানবজীবনে পরিবার তাই এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু পরিবার না থাকলে মানুষকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তন্মধ্যে কয়েকটি দিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো—

নিরাপত্তাহীন হওয়া : পরিবার মানুষের জন্য এক সুন্দর আশ্রয়। পার্থিব জীবনে সংঘটিত বিভিন্ন বিপদাপদ, অসুখ-বিসুখ, ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-যাতনা ইত্যাদির শিকার হয়ে মানুষ অনেক সময় দিশাহারা হয়ে যায়। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। অসুখে সেবা করে, বিপদে সাহায্য করে, দুঃখ-কষ্টে সান্ত্বনা দেয় এবং শোকে সমব্যথী হয়। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষের জন্য এসব পাওয়ার উপায় থাকে না। ফলে সে হয়ে পড়ে উদভ্রান্ত। তার জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। সে কোথাও মরে পড়ে থাকলে তার খোঁজখবর নেওয়ার বা তাকে কাফন-দাফন করার মতো লোকও থাকে না।

সহযোগিতা না পাওয়া : অর্থ মানবজীবনের এক আবশ্যিক বিষয়। রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, অর্থ ছাড়া তেমনি জীবন চলে না। তাই বিভিন্ন সময়ে মানুষের অর্থের প্রয়োজন হয়। পরিবারের লোকেরাই সেই প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসে। তা ছাড়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষ কর্মক্ষম থাকে না। জীবনের সূচনাকালে যেমন সে অক্ষম ও পরনির্ভরশীল থাকে, তেমনি জীবনের শেষ বেলায় সে আবার অক্ষম ও পরনির্ভরশীল হয়ে যায়। এ সময়ে পরিবারভুক্ত মানুষ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য পায়। তার সার্বিক প্রয়োজন পূরণে তারা এগিয়ে আসে। অথচ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষের সাহায্যে তেমন কেউ এগিয়ে আসে না।

বন্ধনহীন হওয়া : একেকটি পরিবার মূলত কতগুলো হৃদয়ের সমষ্টি, যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, যত্ন-আত্তি, সেবা-পরিচর্যা, নিরাপত্তা, মিলেমিশে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষ এসব সুযোগ-সুবিধা পায় না।

নৈতিক অবক্ষয় : বর্তমান সমাজের অবক্ষয় ও সামাজিক ব্যাধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে পরিবারকে কেন্দ্র করে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঘরে ঘরে দাউ দাউ করে জ্বলছে অশান্তির আগুন। পরিবারগুলোর অশান্তির প্রভাব পড়ছে সমাজে। ডিশ, সিডি, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সাইবার ক্যাফে ইত্যাদির মাধ্যমে পর্নো ছবি দেখা, ব্ল্যাকমেইলিং, ইভ টিজিং বাড়ছে মহামারির মতো। অশালীন পোশাক, রূপচর্চা, ফ্যাশন, অবাধ মেলামেশা, যত্রতত্র আড্ডা, প্রেমালাপ, মাদক, পরকীয়া প্রেম, অবৈধ যৌনাচার ও সন্ত্রাস চলছে সমাজের সর্বত্র। এসব কাজে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, মনোমালিন্য, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, কিডন্যাপ ও খুন-খারাবি কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এর নেতিবাচক পরিণতি হিসেবে পারিবারিক সহিংসতার বিস্তৃতি ঘটছে।

সংসারবিরাগী হওয়া : সংসারবিরাগী হওয়া বা বৈরাগ্য জীবন যাপন করার অনুমতি ইসলামে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘আর বৈরাগ্যবাদ—তা তারা নিজেরাই নতুনভাবে চালু করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমি (আল্লাহ) তাদের ওপর এ বিধান অপরিহার্য করিনি। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭)

হাদিসে এসেছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ওসমান ইবনে মাজউন (রা.)-কে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম। (বুখারি,   হাদিস : ৫০৭৩)

উদ্দেশ্যহীন জীবন : পরিবার মানুষকে একটি স্থানে ও একটি লক্ষ্যে চলতে সাহায্য করে। কখনো সে লক্ষ্যচ্যুত হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে সঠিক পথে চলতে ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে না। সে যা ইচ্ছা তা-ই করে, যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে চলে যায়। পারিবারিক বন্ধনহীন এই জীবন যেন হালবিহীন নৌকার মতো। সুতরাং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া কোনো বিবেকবান মানুষের জন্য সমীচীন নয়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৪৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit