ডেস্কনিউজঃ দেশে করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণে। নেই কোনো বিধি-নিষেধ। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। ফলে দুই বছর পর এবার ঈদ যাত্রায় আবার দেখা যেতে পারে ঘরমুখো মানুষের ঢল।
গতকাল বুধবার ট্রেনে ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বাসে শুরু হচ্ছে ঈদ যাত্রা। আজ থেকে আগামী চার দিন বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ৯০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে ভয়াবহ যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাসে যাবে ৩২ লাখ
রাজধানী থেকে দূরপাল্লায় প্রায় আট হাজার বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। অবশ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলেছে, এবার ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার বাস চলাচল করবে। গড়ে প্রতিটি বাস দিনে দুই ট্রিপ দেবে। প্রতি বাস গড়ে ৪০ জন যাত্রী পরিবহন করবে। সে হিসাবে দিনে গড়ে আট লাখ, চার দিনে ৩২ লাখ মানুষ বাসে ঢাকা ছাড়বে। এসব যাত্রীর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। অনেক কারখানার শ্রমিক নিজেরাই বাস ভাড়া করবেন।
হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন বলেন, বাসের মোট যাত্রীর এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। তাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন ছোট বাস ভাড়া করে থাকেন। বাকি ২২ লাখ যাত্রীর মধ্যে অন্তত ১৫ লাখ অগ্রিম টিকিট কিনে থাকতে পারে।
তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ মনে করেন, বাসে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়বে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। রাস্তায় ব্যাপক যানজট না হলে বাসের সংকট হবে না। ’
নৌপথে ২৫ লাখ
সদর ঘাট থেকে প্রতিদিন ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার মতো বড় লঞ্চ রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি। এর সঙ্গে কিছু ছোট লঞ্চও যুক্ত হবে। প্রতি লঞ্চের গড় ধারণক্ষমতা দেড় হাজার। এ হিসাবে প্রতিদিন নৌপথে ৯০ হাজার ধরলে চার দিনে ঢাকা ছাড়তে পারে তিন লাখ ৬০ হাজার মানুষ। তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, ঈদ যাত্রায় প্রতি লঞ্চে পাঁচ-ছয় হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। এর সঙ্গে ছোট ও মাঝারি নৌযান মিলিয়ে নৌপথে গড়ে প্রতিদিন ছয় লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এ হিসাবে চার দিনে যাবে ২৪ লাখ। তবে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদপূর্ব এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ এই তিন জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ নৌপথে গ্রামে যাবে।
মোটরসাইকেল, মাইক্রো, প্রাইভেট কারে ২৮ লাখ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ঈদ ঘিরে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে ১২ লাখ ট্রিপ হবে। এ ছাড়া মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও বিভিন্ন অফিসের গাড়িতে প্রতিদিন চার লাখ করে চার দিনে ১৬ লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়বে। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়িও যুক্ত হবে।
সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন জাতীয় মহাসড়কে সার্ভিস লেন না থাকায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে ১৫ লাখের বেশি ইজি বাইক, রিকশা, অটোরিকশা সড়কে নামতে পারে। এসব ছোট যানবাহন মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের গতি কমিয়ে যানজট তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেবে।
রেলে যাবে পাঁচ লাখ যাত্রী
গতকাল থেকে রেলে ঈদের যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ৩৮ জোড়া আন্ত নগর রেলে ২৬ হাজার ৬৬৩টি আসনে যাত্রী পরিবহন করা হবে। এ ছাড়া ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। এতে আরো প্রায় দুই হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
আন্ত নগর, লোকাল ও কমিউটার মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রতিদিন আসনে পরিবহন করা যাবে ৫০ হাজার যাত্রী। সেই হিসাবে পাঁচ দিনে আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। তবে এর সঙ্গে আরো প্রায় আড়াই লাখ মানুষ দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারও বলেন, সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে রেলের ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে।
কিছু কিছু ট্রেনে তিন দিনের জন্য মোট আসনের ২০ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। এর বাইরে রেলে আসন ছাড়া কত যাত্রী ভ্রমণ করবে তার হিসাব নেই।
বিমানে ঢাকা ছাড়বে ৩০ হাজার মানুষ
অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও নভো এয়ার যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বিমান সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ঈদের আগের চার দিনে এসব বিমানে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। সাতটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ৩৫টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে। প্রতিটি ফ্লাইটে গড়ে ৭৫টি করে আসন আছে।
আছে অস্বীকৃত উপায়
শুধু বাস, লঞ্চ, ট্রেন, মোটরসাইকেল বা মাইক্রোতেই সরাসরি মানুষ ঢাকা ছাড়বে তা নয়। এর বাইরেও বহু মানুষ ভেঙে ভেঙে পথ পাড়ি দেবে। পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকেও শেষ মুহূর্তে ঢাকা ছাড়ার নজির রয়েছে। তবে সেই বেহিসাবি খাতের হিসাব পাওয়া যায় না।
সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা
গত বছর ঈদে ৩১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৩ জন নিহত ও ৬২২ জন আহত হয়। এতে শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৯ জন নিহত ও ১৯৯ জন আহত হয়। এবার ঈদে অতীতের যেকোনো সময়ের প্রায় তিন গুণ যাত্রী মোটরসাইকেলে যাত্রা করতে পারে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তিন গুণ বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদ যাত্রায় জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রিকশা, অটোরিকশা, ইজি বাইক ও নসিমন-করিমন চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ বাস মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ঈদ যাত্রায় সড়কে যেন বেপরোয়া গাড়ি চালানো না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হবে।
কিউএনবি/বিপুল/ ২৮ এপ্রিল ২০২২খ্রিস্টাব্দ / রাত ০২:৪৮