মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

শবে বরাতে ঢাকার ঐতিহ্য ‘বরাতি রুটি’

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২
  • ১৪৮ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত শবে বরাত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা। মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন। এর পাশাপাশি পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করার প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। ঢাকার মানুষের শবে বরাতের ঐতিহ্য ‘বরাতি রুটি’।

১৯শ’ শতকের শেষের দিকে ঢাকার নবাবদের হাত ধরে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। নবাবরা বেশ ঘটা করেই শবে বরাত পালন করতেন। সে সময়ে আলোকসজ্জা করা হতো। পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করা হতো। এখন বাংলাদেশে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার অলিগলিতে বিভিন্ন ধরনের রুটির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। নানা নকশাখচিত একেকটি রুটিতে উৎসবের আমেজের পাশাপাশি ফুটে উঠে জনপদটির সহজ-সরল জীবনযাপনের চিত্রও। সেগুলোর কোনোটা দেখতে কুলার মতো, কোনোটা মাছের মতো, আবার কোনোটা কুমিরের মতো। এ ছাড়া গোলাকার ও নকশা করা এবং ফুলের আকৃতিতে বানানো অসংখ্য নকশার রুটি দেখা যায় দোকানগুলোতে। রুটির গায়ে কাচ বা পুঁতি বসিয়ে সাজানো হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য ধরেই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এই নকশা রুটি। শবে বরাতে এই রুটি আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আদান-প্রদান করা হয়। বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়িরা তার মেয়ে-জামাই বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রুটি পাঠান।

দেখতে মাছের মতো, কুমিরের মতো অথবা ফুলের মতো, কিন্তু আদতে সেগুলো রুটি। ভেতরে মোরব্বা আর কিশমিশে ঠাসা, ওপরে কাচ আর মার্বেলের সজ্জা। পুরান ঢাকার এই বিশেষ রুটির নামই ‘বরাতি রুটি’ও। বিশেষ রুটি দীর্ঘদিন ঢাকার মানুষের শবে বরাতের ঐতিহ্য।

বরাতি রুটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই রুটি পাওয়া যায় শুধু শবে বরাতের আগের এবং পরের কয়েক দিনের মধ্যে। শুধু নকশাদার বরাতি রুটি নয়, এ সময় সাধারণ বনরুটি এবং অন্যান্য রুটিরও চাহিদা থাকে অনেক। ফলে পথে পথে বসে যায় বাজার। 

বাজারে ঢোকার আগেই রুটির মিষ্টি একটা ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকবে। রাস্তার দুই পাশে নানান খাবারের পসরা। কুমির, মাছ, পাখি, ফুল—সবাই এক কাতারে। এগুলোকে ‘ফেন্সি’ রুটিও বলা হয়। ঢাউস সাইজের ‘ফেন্সি’ রুটির সাইজও কম যায় না। কুমির বা মাছের গায়ে খাঁজ কাটা নকশা। চোখ সাজানো হয়েছে মার্বেল, কাচের টুকরা বা লাল রঙের মোরব্বার টুকরা দিয়ে। ফুলেল নকশার রুটি মিষ্টি হয়। এতে চিনির সিরা ও মোরব্বা থাকে। প্রাণীর আকৃতিতে এসব থাকে না। তবে তিল থাকে সব কটিতেই। 

পুরান ঢাকার ব্যবসায়িরা জানান, মোগল আমল থেকেই খাবারের এই সিলসিলা (ধারাবাহিকতা) চলে আসছে। চক বাজারের শাহী মসজিদকে ঘিরেই চলে আসছে বাহারি এসব খাবারের বাজার। লাভের অঙ্কের চেয়ে এই উৎসবে যোগদানটাই বড় হিসেবে দেখেন ব্যবসায়িরা। 

চকবাজারের মূল সড়কের পাশাপাশি গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন রোড, লোহারপুল মোড়, সূত্রাপুর, মালেকা টোলা, রায় সাহেবের বাজারে শবে বরাতে শামিয়ানা টাঙিয়ে হালুয়া-রুটির বিকিকিনি হয়। এসব খাবার নিতে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডী, মিরপুর, গাবতলী থেকে শুরু করে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন চলে আসেন।

নকশাদার সুস্বাদু এসব রুটি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।

কিউএনবি/অনিমা/১৮ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:৪৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit