শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫৪ অপরাহ্ন

ইসলাম প্রচারে সুফি-সাধকদের সাফল্যের রহস্য

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১১৭ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : ভারতবর্ষে ইসলামী যুগের সূচনা হয়েছে এসব কীর্তিমান সুফিদের মাধ্যমে। বিশেষত শায়খ মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) তাঁর সংগ্রাম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতবর্ষে চিশতিয়া তরিকার শক্ত ভিত স্থাপন করেছেন। সুফি সাধকদের স্বাগত জানায় ভারতের সর্বস্তর ও শ্রেণির মানুষ। তাদের সততা, আমানতদারিতা ও সত্যবাদিতার কারণে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল।

সমগ্র দেশে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ভারতের এমন কোনো শহর বা গ্রাম ছিল না, যেখানে এক বা একাধিক আধ্যাত্মিক কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। এসব সুফি ও সাধকদের প্রতি সাধারণ মানুষ যে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক রাখত, তা নিম্নোক্ত ঘটনাবলি থেকে অনুমান করা যায়। ঘটনাগুলোর সময়গত ধারাবাহিকতার প্রতি লক্ষ্য না রেখেই এখানে তা বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো।

সাইয়েদ আদম বিননুরি (রহ.)—যিনি ১০৫৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর খানকায় প্রতিদিন এক হাজার মানুষ আহার করত। তাঁর সফরের সঙ্গী হতো কয়েক হাজার মানুষ ও কয়েক শ আলেম। ১০৫৩ হিজরিতে তিনি যখন লাহোরে প্রবেশ করেন, তখন তাঁর সঙ্গে ১০ হাজার মানুষ ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল সমাজের অভিজাত ব্যক্তি, বিশিষ্ট আলেম, ধনী ও সাধারণ মানুষ। তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে মোগল সম্রাট শাহজাহান ভয় পেয়ে যান এবং বিপুল পরিমাণ ধন-দৌলত উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন এবং তাঁকে এই বলে পাঠান যে আপনার ওপর হজ ফরজ। সুতরাং আপনি হেজাজ চলে যান। তিনি বাদশাহর ইঙ্গিত বুঝতে পারেন এবং হারামাইনের উদ্দেশ্যে সফর করেন ও মারা যান।

মুজাদ্দিদে আলফে সানি আহমদ সেরহিন্দি (রহ.)-এর ছেলে শায়খ মুহাম্মদ মাসুম (রহ.), যিনি ১০৮৭ হিজরিতে মারা যান। তাঁর হাতে ৯ লাখ মানুষ তাওবা করেন এবং বাইআত হন। আল্লাহর পথে আহ্বান, সুপথ প্রদর্শন ও মানুষের দ্বিনি শিক্ষার কাজে তিনি সাত হাজার মানুষকে খলিফা নিযুক্ত করেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আহমদ খান তাঁর ‘আসারুস সানাদিদ’ গ্রন্থে শায়খ গোলাম আলী দেহলভি (রহ.)-এর আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘তাঁর খানকায় কমপক্ষে পাঁচ শ মানুষ অবস্থান করত এবং খানকা সবার ব্যয় ভার বহন করত। ’

প্রখ্যাত সমাজসংস্কারক সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.)-ও জনসাধারণের নজিরবিহীন ভালোবাসায় সিক্ত হন। তিনি কোনো অঞ্চল দিয়ে অতিক্রম করলে সে অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে তাওবা ও বাইআত করত। এমনকি বেনারসের একটি হাসপাতালের রোগীরা খবর পাঠায় যে ‘আমরা বিছানাবন্দি ও ঘরে আবদ্ধ। আমরা আপনার দরবারে উপস্থিত হতে সক্ষম নই। যদি আপনি অনুগ্রহ করে একবার আসতেন, তবে আমরা আপনার হাতে তাওবা করতাম। ’ সাইয়েদ আহমদ শহীদ (রহ.) সেখানে যান এবং তাদের বাইআত করান। তিনি দুই মাস কলকাতায় অবস্থান করেন। প্রতিদিন যারা তার হাতে বাইআত গ্রহণ করত তাদের সংখ্যা এক হাজারের চেয়ে কম নয়। মধ্যরাত পর্যন্ত বাইআত করানো হতো। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে একজন একজন করে বাইআত করানো সম্ভব ছিল না। সাত-আটজনের একটি দল একত্র হয়ে তাওবা ও বাইআত গ্রহণ করত। প্রতিদিন এভাবে ১৭-১৮ বার বাইআত করাতেন।

এসব সুফিরা মানুষকে বাইআত করাতেন আল্লাহর একত্ববাদ, ইবাদতে নিষ্ঠা, সুন্নতের অনুসরণ, গুনাহ পরিহার, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের ওপর। তারা মানুষকে সতর্ক করতেন পাপ, অশ্লীলতা, মন্দ স্বভাব, জুলুম ও নির্দয়তার ব্যাপারে সতর্ক করতেন। আত্মশুদ্ধি, চরিত্র সংশোধন, উত্তম চরিত্র ধারণ ও আত্মার ব্যাধিগুলো (যেমন অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, খ্যাতির মোহ) ত্যাগে উত্সাহিত করতেন। তারা মানুষকে আল্লাহর জিকির, কল্যাণকামিতা, অল্পে তুষ্টি, অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষা দিতেন। এই বাইআত পীর ও তাঁর মুরিদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করত। কেননা সুফি ও পীররা সব সময় মানুষকে সম্মান দিতেন এবং চেষ্টা করতেন মানুষের অন্তরে আল্লাহপ্রেমের আবেগ, আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আগ্রহ, আত্মশুদ্ধি ও নিজেকে পরিবর্তন করার প্রত্যয় জাগিয়ে তোলার। তাদের চরিত্রিক মাধুর্য, নিষ্ঠা, শিক্ষা-দীক্ষা, বৈঠকগুলো সমাজ ও সামাজিক জীবনকে গভীরভাবে প্রবাহিত করে। এখানে এমন কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হলো, যা এই ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিভাত করে।

ভারতের বিখ্যাত ঐতিহাসিক কাজি জিয়াউদ্দিন আল-বিরুনি সুলতান আলাউদ্দিন শাসনকাল সম্পর্কে লেখেন, ‘সুলতান আলাউদ্দিনের যুগে শায়খুল ইসলাম নিজামুদ্দিন, শায়খুল ইসলাম আলাউদ্দিন, শায়খুল ইসলাম রোকনুদ্দিন ছিলেন আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধির পতাকাবাহী। সারা পৃথিবী তাদের দ্বারা আলোকিত হয়েছে এবং তাদের হাতে অসংখ্য মানুষ বাইয়াত গ্রহণ করে, পাপী-অপরাধীরা তাদের কাছে তাওবা করে নামাজি হয়ে যায়। সারা জীবন তার ওপর অটল থাকে। তাদের ভেতর দ্বিনের ভালোবাসা ও সম্মান তৈরি হয়। ফলে তারা বিশুদ্ধ মনে তাওবা করে এবং সব ইবাদত পালনে মনোযোগী হয়। তাদের মন থেকে পার্থিব জীবনের মোহ হ্রাস পায়। তাদের জীবনে এই আমূল পরিবর্তন আসে বুজুর্গ, সুফি সাধক ও পীরদের উন্নত চরিত্র, দুনিয়াবিমুখতা, খ্যাতির মোহ পরিহারের কারণে। যাপিত জীবনে তাদের ইবাদত-বন্দেগি ও উত্তম আচরণ মানুষকে সত্য গ্রহণ ও চরিত্র সংশোধনের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ’

 ভাষান্তর : আতাউর রহমান খসরু

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit