মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধ ভাবে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের ফলে শুকনো মৌসুমে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ১০ দিনে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নে বেশ কিছু ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ রায়টা-মহিষকুন্ডি নদী রক্ষা বাধসহ ভারত থেকে আসা বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে এসব স্থাপনার সাথে বিলীন হয়ে যাবে মরিচা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম।
স্থানীয়রা জানায়, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন দেখা যায়। কিন্তু এবার শুকনো মৌসুমেই ভাঙন ;েখা যাচ্ছে। মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা-হাটখোলা থেকে কোলদিয়াড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ৪ ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, বাগানসহ অনেক স্থাপনা। ৪ ফসলি জমি হারিয়ে অনেকেই নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক দিনে শত বিঘা জমি নদীর পেটে চলে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনের ফলে নদী থেকে মাত্র ৫শত ফুট দুরে রয়েছে ভারত থেকে আসা ৫০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন। যে কোন সময় সঞ্চালন লাইনের খাম্বা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রায়টা-মহিষকুন্ডি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ, নদী ভরাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভুরকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় কান্দিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোলদিয়াড় মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটখোলাপাড়া জামে মসজিদ, জুনিযদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জুনিয়াদহ বাজার। এছাড়াও ভুরকা, কোলদিয়াড়, জুনিয়াদহ, কোলদিয়াড় পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে ঘরবাড়ি হারানোর আতংক বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীরা জানান, রাজশাহী-কুষ্টিয়ার মাঝ দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়ে চলেছে। বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় বন্যার পানি আসলে মুল নদী পেরিয়ে বিস্তির্ণ চর ও নদীর দু’পাশের নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়। বন্যার পানি কমার সময় সাধারনত নদী ভাঙনের তান্ডব দেখা দেয়। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বন্যার পানি কমে গেলে শুরু হয় শুকনো মৌসুম। পদ্মার বুক চিরে জেগে ওঠে বিস্তির্ণ চর। শুকনো মৌসুমে মুল নদী দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। যুগ যুগ ধরে একই ধারা চলে আসছে। কিন্তু এই মৌসুমে আচমকা পানির প্রবাহ মুল নদী পেরিয়ে প্রবল ¯্রােতে কিনারের দিকে ধেয়ে এসে পাড়ে আচড়ে পড়ছে। ফলে মরিচা ইউনিয়নের কোলদিয়াড় থেকে ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াহ পর্যন্ত বিস্তির্ণ এলাকা ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন যুগ যুগ ধরে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও এ বছর শুকনো মৌসুমে নদীর পানির প্রবাহের দিক পরিবর্তন হল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পদ্মার দৌলতপুর অংশে বৈধ (সরকারী ইজারাভুক্ত) কোন বালু মহাল না থাকলেও প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে ব্যাপক হারে বালু উত্তোলন করেছেন। এর ফলে পানির গতিপথে পরিবর্তন হয়ে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া উত্তোলিত বালু বহনের জন্য বড় বড় কার্গো বা ট্রলার ব্যবহার করা হয়। এসব কার্গো বা ট্রলার পাড়ের পাশ দিয়ে চলাচলের সময় নদীতে ব্যাপক ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এতে করে নদী ভাঙনের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কোলদিয়াড় গ্রামের ষাটোর্ধ বয়সী কৃষক ভুলু ফরাজী বলেন, শুকনো মৌসুমে এ ধরনের নদী ভাঙন আগে কখনও ঘটেনি। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ করে নদী ভাঙনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তার হোসেন জানান, প্রতিবছর নদী ভাঙলেও এবার এর তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নদীতে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ধান-আখ ক্ষেত, বাগানসহ বিস্তির্ণ এলাকা।
মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, পদ্মার ভাঙনে তার ইউনিয়নের অনেকে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে বসতবাড়ি সহ বহু প্রতিস্থান ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ করেন তিনি। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, নদী ভাঙন রোধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, তাৎক্ষণিক নদীভাঙন রুখতে নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে ইসলামপুর-ফিলিপনগর-গোলাবাড়ির মত সিমেন্টের ব্লক নির্মান করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ সন্ধ্যা ৭:৫৪