ডেস্ক নিউজ : দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস নির্বাচনী ডামাডোলে মেতে থাকার পর এবার বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার কৃষকেরা কোমর বেঁধে ইরি-বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলার মাঠে মাঠে এখন ইরি বোরো ধান চাষের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। সেচ দিয়ে জমি তৈরির পর চারা লাগানোর কাজ করছে চাষিরা। ভালো ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষি অফিস থেকে উপজেলার চাষিদের মাঝে বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাাচ্ছে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উপজেলায় ৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ইতিমধ্যেই ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৫ শতাংশ জমিতে চারা রোপন করে ফেলেছে কৃষক। মধ্য জানুয়ারি থেকে শুরু করে ইরি-বোরো মৌসুম চলবে মধ্য মার্চ পর্যন্ত।
জেলার সোনাতলা উপজেলার হরিখালী, মধুপুর, উত্তর করমজা, সাতবেকি, নামাজখালী, পদ্মপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, হুয়াকুয়া, পাকুল্লা, শ্যামপুর, আমতলী, মিলনেরপাড়া, মহেশপাড়া, জন্তিয়ারপাড়া, সরলিয়া, ভিকনেরপাড়া, মহব্বতেরপাড়া, ফুলবাড়ী, শালিখা, বালুয়াহাট, কর্পূর, মহিচরণ, পাঠানপাড়া, চিল্লিপাড়া, দিগদাইড়, মূলবাড়ী, কোয়ালীপাড়া, ফাজিলপুর, দিঘলকান্দী, ভেলুরপাড়া, হাটকরমজা, ঠাকুরপাড়া, কোড়াডাঙ্গা, গোসাইবাড়ী, চরপাড়া, পোড়াপাইকর, নওদাবগা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৭৩, ব্রি ধান-৮১, ৮৪, ৮৮, ৮৯ সহ বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতের ধান রোপন করেছে। কোথাও পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরী হচ্ছে আবার কোথাও জমি তৈরীর পর ধান চারা লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। মাঠের পর মাঠে ধানচাষের শ্রমিকরা সারিবদ্ধ করে চারা রোপণ করে যাচ্ছে। চাষের পর ভালো ফলনের আশা করছে স্থানীয় চাষিরা।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কোড়াডাঙ্গা গ্রামের কমর উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম দুলা মাষ্টার, পোড়াপাইকর গ্রামের আমিনুর ইসলাম, হাটকরমজা এলাকার শহিদ গোলাম, আনারুল ইসলাম টিপু জানান, এই জাতের ধান রোপনের ফলে কৃষক অধিক ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হবে। প্রতি বিঘায় এই জাতের ধান ২১-২৫ মন উৎপন্ন হয়। এবছর এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় জমি তৈরী করা গেছে সহজে। বেশিরভাগ জমি তৈরী করে জমিতে ধান চারা রোপণ করা হয়েছে। কিছুৃ কিছু এলাকায় এখনো চাষিরা জমি তৈরী করছে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পূর্ব করমজা এলাকার শামছুল হক জানান, গত বছর ধান হাটে বাজারে বিক্রি করে ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। প্রথম দিকে ধানের দাম ভালো থাকলেও পরের দিকে এসে ধানের দাম একেবারে কমে যায়। চলতি বছর কীটনাশক ও সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এরপরও বাজারে ভালো দাম পাওয়া না গেলে ইরি-বোরো চাষে লোকসান গুণতে হবে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ জানান, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় এবার তুলনামুলক শীত কম। শীত কম থাকায় ও চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়নি। ফলে উপজেলায় এবার চারার কোনো সংকট নেই। স্থানীয় চাষিরা এবার পতিত জমিতে বীজতলা তৈরী করেছে। বীজতলা এবার বেশিরভাগ সতেজ। বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ শুরু করেছে। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে অনেক চারা তৈরী করা হয়েছে। কৃষি অফিসেও প্রচুর পরিমানে চারা রয়েছে। দামও কৃষকের হাতের নাগালের মধ্যে। সোনাতলা উপজেলার বেশ কিছু চাষি ভালোমানের বীজতলা তৈরী করে ইতিমধ্যে হাটে বাজারে চারা বিক্রি শুরু করেছে। গত বছর ইরি বোরোর ভালো ফলন পাওয়া গেছে। চাষিদের এবার বিভিন্নভাবে ভালো চাষের জন্য বিভিন্নভাবে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। জাত ভেদে ধান রোপনের ১৪৫ দিন থেকে ১৬০ দিনের মধ্যে কৃষক ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হন। দামের বিষয়টি স্থানীয় বাজারের উপর নির্ভর করে।
কিউএনবি/আয়শা/৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৪৫