সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৪৯ অপরাহ্ন

আল্লাহর কাছে ঘৃণিত যারা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১২২ Time View

 

ডেস্ক নিউজ : আমাদের সমাজে এমন কিছু দুর্ভাগা রয়েছে, যাদের আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ঘৃণা করেন। কিয়ামতের দিন এই হতভাগাদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোনো ধরনের কথা বলবেন না। তাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টিতেও তাকাবেন না।

ব্যভিচারী বৃদ্ধ

ব্যভিচার সমাজের ঘৃণিত কাজ। একটি সমাজ ধ্বংসের জন্য ওই সমাজে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়া যথেষ্ট। যে সমাজে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়েছে সে সমাজে আদর্শ নীতি-নৈতিকতা কিছুই বাকি থাকে না। যেকোনো ধরনের ব্যভিচারী অত্যন্ত গর্হিত অন্যায় কাজ। আর যদি এ ধরনের ব্যভিচার ঘটে কোনো বৃদ্ধ নারী-পুরুষ দ্বারা, তাহলে তার অপরাধ আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কারণ একজন যুবক সে যৌবনের উদ্দীপনায়, শয়তানের প্ররোচনায় পরে কখনো এই অবৈধ পথে পা বাড়ায়। কিন্তু একজন বৃদ্ধ, তার তো যৌবনে ভাটা পড়েছে, তা সত্ত্বেও সে এহেন অশ্লীল কাজে জড়িত হয়েছে! আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত ঘৃণিত।

অহংকারী ফকির

শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছে তার অহংকারের কারণে। অহংকার এটি শুধু আল্লাহর জন্যই খাস। অন্য কারো অহংকার করার কোনো অধিকার নেই। অহংকারকে আরবিতে ‘উম্মুল আমরাজ’ বলে। অর্থাৎ আত্মিক রোগের মূল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ২৩)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৭)

অহংকার যেকোনো ব্যক্তির জন্য হারাম। আর যদি কোনো ফকির অহংকার করে তাহলে এটা আরো মারাত্মক। কারণ অন্যরা অহংকার করে হয়তো তার সম্পদ অন্যান্য জিনিসের মোহে পড়ে। কিন্তু যে ফকির, তার অহংকারের বাহ্যিক কোনো কারণ নেই।

মিথ্যাবাদী বাদশা

এক হাদিসে এসেছে, মুমিন চুরি করতে পারে, জিনা করতে পারে; কিন্তু মুমিন মিথ্যা কথা বলতে পারে না। কারণ যখন কেউ মিথ্যা কথা বলে তখন ফেরেশতাগণ তার দুর্গন্ধে অনেক দূরে চলে যায়। সবার জন্য মিথ্যা কথা বলা জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রপ্রধান মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। সে তো যা চাইবে তাই করতে পারবে। এর পরও যদি সে মিথ্যার আশ্রয় নেয় সেটা হবে মারাত্মক কবিরা গুনাহ, যার শাস্তি ভয়াবহ।

ওপরের তিন ব্যক্তির কথা আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না, তাদের (গুনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৬)

বিক্রয়ের সময় মিথ্যা শপথকারী

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি তাকাবেন না। এর মধ্যে একজন, যে ব্যক্তি কোনো পণ্যের ব্যাপারে মিথ্যা কসম খেয়ে বলে যে এর দাম এর চেয়ে বেশি বলেছিল; কিন্তু সে তা বিক্রি করেনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৬৯)

দান করে যে খোঁটা দেয়

যে ব্যক্তি দরিদ্র-মিসকিন, আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দান করে, এরপর খোঁটা দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে কিয়ামতের দিন কোনো কথা বলবেন না। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য আছে ভয়ানক শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) এ কথাটি তিনবার পাঠ করলেন। আবু জার (রা.) বলে উঠলেন, তার তো ধ্বংস হবে, সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহর রাসুল, এরা কারা? তিনি বলেন,…যারা কোনো কিছু দান করে খোঁটা দেয়…। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৪)

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী

টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা আমাদের অনেকের কাছে সাধারণ মনে হয়। অথচ আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। যে কারণে এমন ব্যক্তির সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কোনো কথা বলবেন না। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহা মহিয়ান আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলবেন না, তাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যয়ন করবেন না। (তারা হলো) যারা পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধান করে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৩)

পানি পানে বাধাদানকারী

যে ব্যক্তির কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আছে, তা সত্ত্বেও সে পানিপ্রার্থীকে পানি দেয়নি, আল্লাহ তাআলা তার সঙ্গে কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের লোকের সঙ্গে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কথা বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শান্তি। তন্মধ্যে একজন ওই ব্যক্তি, যে পথের পাশে অতিরিক্ত পানির মালিক; কিন্তু মুসাফিরকে তা থেকে পান করতে দেয় না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭২১২)

অত্যাচারী ধনী

অত্যাচারকে কেউ-ই পছন্দ করে না। ধনী-গরিব, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ যে কেউ অত্যাচার করুক—এটি জঘন্য অপরাধ। জালিম যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যতই দুর্ধর্ষ হোক না কেন, আল্লাহর শাস্তি থেকে কখনো সে রেহাই পাবে না। আল্লাহর শাস্তি বিলম্ব হতে পারে; কিন্তু আল্লাহর শাস্তি যখন আসবে, দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি নেই, তা ঠেকাতে পারে। আল্লাহ সুযোগ দেন, ছেড়ে দেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের অবকাশ দিয়ে রাখি। আমার কৌশল অতি শক্তিশালী।’ (সুরা নুন, আয়াত : ৪৫) অভাবী অভাবের কারণে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে। কিন্তু যে ধনী—তার তো আত্মসাৎ করে অত্যাচারের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই তা আল্লাহর কাছে জঘন্যতম অপরাধ বলে বিবেচিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা অত্যাচারী সম্পদশালীকে ভালোবাসেন না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬৮)

jawadtahir39@gmail.com

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit