এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমেও পাইকারি বাজারে দাম বাড়তি। যার প্রভাব পড়ছে উপজেলার খুচরা বাজার গুলোতে। সংসারে মৌসুমি সবজি যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সবজির দাম অনেক বেশি। তবে সবজি চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, ঘূর্ণিঝড় যাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণে উপজেলার অধিকাংশ সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই এ বছর বাজারে সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় দাম একটু চড়া। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় যাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণের উপজেলার মরিচ, মুলা, ফুলকপি, পেঁয়াজ, আলুসহ ১ হাজার ২২০ হেক্টর জমির সবজি আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ২১৫ হেক্টর জমির সবজি স¤পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আংশিক নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ৫ হেক্টর জমির আলু, মরিচ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন উপজেলার ৪ হাজার ৮০৫ জন কৃষক । ফলে বৃষ্টির পরই আশঙ্কা ছিল এবার সবজির দাম বেশি হতে পারে। সেই শঙ্কা সত্যি হয়েছে বাজারে সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রমজানের আগেই সবজির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
সোমবার শহরের সরকারি শাহাদৎ পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের পাইকারি বাজারের আড়ৎ ব্যবসায়ী আজিজুরর রহমান বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ জন্য সবজির দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি। পাইকারি বাজারের আড়ৎ ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন বলেন, আজ পালন শাক ৬ থেকে ৮, লাল শাক ১০ শসা৩০ থেকে ৩৫, ধনেপাতা ১৫ থেকে ২০, সাদা শিম ৩০ টাকা, কাচা মরিচ ২৫ থেকে ৩০ বেগুন ৫৫ থেকে ৬০, পটল ৩৫ থেকে ৪০, মিষ্টি কুমড়ো ২০ থেকে ৩০, মুলা ১০ থেকে ১৫, পেঁপে ৬ থেকে ৮, বাঁধাকপি ৮ থেকে ১০, ফুলকপি ২৮ থেকে ৩৩, রসুন ১৫ থেকে ২০ কালি ২ থেকে ৩, কাঁচকলা ১২ থেকে ১৬, টমেটো ২০ থেকে ৩০, লাউ প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০, চাপাকলা ১৮ থেকে২০, মেটে আলু ৩০ থেকে ৩৫, মানকচু ২০ খেকে ২৫, গোলআলু নতুন ১৬ থেকে ১৮ টাকায় বিক্রি করেছেন।
বাজারে বেগুন বিক্রি করতে আসা উপজেলার পেটভরা গ্রামের জামির হোসেন বলেন, আমাদের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি হওয়ায় বর্ষায় তেমন ক্ষতি হয়নি। এখন প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করছি। গত এক যুগেও এমন দাম পাইনি। গত বছর এই সময়ে বেগুন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। পৌরসভার ইছাপুর গ্রামের আরমান আলী বলেন, ফুল কপি বিক্রি করতেএনেছিলাম ৩০-৩৫ কেজি দরে বিক্রি করেছি। আমি ১২ কাঠা জমিতে দুবার ধনিয়ার পাতা ও মুলার চাষকরেছিলাম। দুবারই বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। দেড় বিঘা জমিতে মসুর চাষ করেছিলাম। অসময়ের টানা বৃষ্টিতেসেই মসুরও সব নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে আলুও ভালো হয়নি। খরচ উঠবে বলেও মনে হয় না।
সবজি চাষি ও আড়ৎ ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমের এই সময় সাধারণত সবজির দাম কমে যায়। তবে এবার অসময়ের টানা বৃষ্টিতে বেশির ভাগ সবজি খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সবজির ভরা মৌসুমেও দাম বেশ চড়া।বাজার করতে আসা শহরের আ¤্রকানন পাড়ার বাসিন্দা শাহাজান আলী বলেন, শীতের এই সময়ে সবজির ভরামৌসুম হওয়ায় দাম অনেক কম থাকে। তবে এবার গত বছরের এই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এদিকে পাইকারি বাজারের মধ্যেই চটে বসে বেশি দামে খুচরা বিক্রির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, চট প্রতি প্রতিদিন খাজনা দিতে হয় একশ টাকা। জায়গার ভাড়াও তো আছেই। প্রতিদিন চটে যে বেচাবিক্রি হয় তাতে সংসারই চলে না। তাই আমরা চাইলেই সবজি কমদামে বেচাবিক্রি করতে পারিনা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন,এখন সবজির ভরা মৌসুম হলেও গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ঘূর্ণিঝড় যাওয়াদের প্রভাবে টানা বর্ষণে উপজেলার প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমির মৌসুমি সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারে সবজির আমদানী কম তাই দাম বেড়েছে। কিছুদিনের মধ্যে চাষিদের নতুন আবাদ করা মৌসুমিসবজি বাজারে আসা শুরু হলে দাম অনেক কমে যাবে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/রাত ৯:২৮