বিনোদন ডেস্ক : স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হাতে গোনা যে কজন বাংলা ব্যান্ড মিউজিককে শীর্ষে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের একজন আশিকুজ্জামান টুলু। তার হাত দিয়েই প্রথম অডিও ‘ব্যান্ড মিক্সড’ অ্যালবাম ধারণার সূচনা হয়েছিল। ‘চাইম’ গড়েছেন, ছেড়েছেন। পরবর্তীতে ‘আর্ক’কে শ্রোতাপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেছেন। সেই জনপ্রিয়তার মধু না খেয়ে চলে গেলেন ‘দূর পরবাসে’। অনেক দিন ধরেই তিনি বসবাস করেন কানাডাতে।
সম্প্রতি প্রয়াত বরেণ্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দারকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আশিকুজ্জামান টুলু। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি পোস্ট দেন তিনি। সেলিম হায়দার সম্পর্কে টুলু বলেন, সিনেমার নায়ক-নায়িকার মতো সেলিম ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্কের শুরু হয়েছিল একটা ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি দিয়ে। ঠিক ভুল বোঝাবুঝি বলব না, তবে ‘ডিজআরগুমেন্ট’ বলা যায়। পরবর্তীতে এই লোকটার সাথে এতো প্রেম হয়ে গেল, যা বলার মতো নয়। উনি আমার কথায় প্রচন্ড হাসতেন। হাসতে হাসতে বলতেন, ‘ধুরো মিয়া, আর কাম পাও না!’
তিনি ফেসবুকে লেখেন, ছিয়াশি কি সাতাশি সাল হবে। এল্ভিস স্টুডিও। চার ট্র্যাকের মেশিন। একটি সিনেমার গানে বেইজ গিটার বাজাচ্ছি। মিউজিক ডিরেক্টর প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। স্কিল্ড মিউজিশিয়ান ছাড়া ঐ সময়টায় সিনেমার গানে বাজানোর সুযোগ পাওয়া কঠিন ছিল, যদিও কিছু নেপোটিজম ও ‘গেটিসে’র লেনদেন তখনও ছিল। সেদিনের গানে আমার সাথে এক ভদ্রলোক লিড গিটার বাজাচ্ছেন। গানটির ট্র্যাক রেকর্ডিংয়ের সময় আমাকে এবং লিড গিটারিস্টকে সিঙ্গার বুথে বসতে দেয়া হয়। লিড গিটারিস্ট ভদ্রলোক খুব সুন্দর শার্ট-প্যান্ট পরা, সুন্দর একটা পারফিউম দিয়েছেন। অন্যান্য মিউজিশিয়ানরা হলে বসে বাজাচ্ছেন আমাদের সাথে। মাঝে মাঝে কাট হচ্ছে অর্থাৎ যেখানে ভুল হচ্ছে, সেখান থেকে টেক নেয়া হচ্ছে। আমাকে বুলবুল ভাই যে প্যাটার্নটা বাজাতে বলেছেন, আমি সেটা বাজাচ্ছি।
টুলু বলে চলেন– হঠাৎ লিড গিটারিস্ট ভদ্রলোক আমাকে বললেন, কী বাজাচ্ছো! এই গানে কি এটা যায়? এইটা তো ‘বনিএম’র প্যাটার্ন হইয়া গেল। আমি ছোট্ট করে হেসে ফেললাম এবং বললাম, বুলবুল ভাই বলেছেন, এটা বাজাতে। উনি আবার বললেন, ঠিকঠাক মতো বাজাও। আমিও বুঝতে পারছিলাম যে, প্যাটার্নটা একটু পুরোনো কিন্তু মিউজিক ডিরেক্টরের নির্দেশমতো আমি বাজাচ্ছিলাম। কথা বলতে দেখে বুলবুল ভাই রেকর্ডিং বন্ধ করে জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, প্যাটার্নটা ঠিক আছে? বুলবুল ভাই বললেন, হ্যাঁ, চলবে। তুমি বাজাও। আমি বাজাতে থাকলাম। ভদ্রলোকের দিকে আর তাকালাম না।
এই গায়ক-সঙ্গীত পরিচালক আরও বলেন– একটা মৃদু ডিজআরগুমেন্ট দিয়ে পরিচয়টা শুরু হলো আমাদের। ঐ ভদ্রলোকই ছিলেন আমাদের ভীষণ প্রিয় সেলিম হায়দার ভাই। আমার প্রায় প্রতিটা রেকর্ডিংয়ে সেলিম ভাই লিড বাজাতেন। আমার ভীষণ ভালো লাগতো ওনাকে। সবসময় ফিটফাট ও প্রফেশনাল লুকে থাকতে ভালোবাসতেন। ঐ সময়কার সিনেমার মোটামুটি ৬০% থেকে ৭০% গানে তার বাজানো লিড থাকতো। অসাধারন গিটার বাজাতেন। প্রসঙ্গত, গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ফিডব্যাক ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বরেণ্য গিটারিস্ট সেলিম হায়দার। অন্তর্মুখী এই শিল্পী মূলত লিড গিটারিস্ট হলেও বেজ, রিদম ও কি-বোর্ড বাজানোতেও সমান পারদর্শী ছিলেন।
কিউএনবি/আয়শা/০৯ ডিসেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:১৪