রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

পিয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে ভারতের ব্যবসায়ীরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত থেকে পিয়াজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। নিষেধাজ্ঞায় প্রবল সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় পিয়াজ রফতানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। 

ভারতীয় পিয়াজ রফতানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানায়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বরাত পেয়ে বিপুল পরিমাণ পিয়াজ সীমান্তে নিয়ে এসেছিলেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। কিন্তু, হঠাৎ করে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় পিয়াজের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, তা এখন বন্দরেই পচছে। এই ছবি ধরা পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মাহদিপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঘোজাডাঙ্গা, পেট্রোপোল স্থল সীমান্তে। এসব সীমান্তে ট্রাক ও গোডাউন মিলিয়ে অন্তত ৩০ হাজার টন পিয়াজ বস্তা-বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রতিদিনই একটু একটু করে পিয়াজে পচন ধরছে। আর বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় বাজারে পানির দরে এই পায়াজ বিক্রি করে দিচ্ছে ভারতীয় রফতানিকারকরা।

মাহদিপুর স্থল সীমান্তের পিয়াজ রফতানিকারক সুধীর মন্ডল জানান, বাংলাদেশ থেকে পিয়াজ আমদানির বরাত পেয়েই আমরা মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে পিয়াজ নিয়ে আসি। কিন্তু এই বন্দরে আসার পরই হঠাৎ করে প্রতিবেশী দেশে আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপার কারণে পিয়াজগুলোকে সীমান্তের একটা গুদাম ঘরে রাখা হয়। এখন তাতে পচন ধরছে। ফলে ৬ রুপি কেজি দরে আমাদের সেই পিয়াজ বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। চার ট্রাক পিয়াজের ক্ষেত্রে আমাদের একটা বড় ক্ষতি। 

মালদার স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজিরুল শেখ বলেন, আমরা কেউ ৫০ ট্রাক, আবার কেউ ৭০ ট্রাক পিয়াজ নাসিক ও ইন্দোর থেকে কিনে মালদায় নিজেদের গোডাউনে রেখেছিলাম। ২২ রূপি কিলো দরে এক টনের দাম ২২০০ রূপি। কিন্তু এখন সেই পিয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে। তাই বাধ্য হয়ে ২ থেকে সর্বোচ্চ ১০ রূপি কিলো দরে বিক্রি করে দিতে হচ্ছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বলছি তারা নিয়ে যাক। নষ্ট হওয়ার আগে যতটুকু দাম পাওয়া যায়, সেটাই অনেক। 

ভারতীয় ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘নাসিক ইন্দোর, বেঙ্গালুরু থেকে ২৩ রূপি কেজি দরে আমি প্রায় দেড় হাজার টন পিয়াজ নিয়ে এসেছিলাম। স্থানীয়ভাবে লেবার চার্জ পড়েছিল প্রায় এক রূপি। সবমিলিয়ে ২৪ রূপি খরচ পড়েছিল। দুই মাস আগেও যখন রফতানি স্বাভাবিক ছিল আমি ৩০-৩৫ ট্রাক পিয়াজ রফতানি করেছিলাম। কিন্তু রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সেই মজুত রাখা পিয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে। ফলে আমরা দেরি না করে প্রায় শতাধিক শ্রমিক লাগিয়ে সেই পিয়াজ যাড়াই-বাছাই করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছি।’ 

ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কমিটির রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা জানান, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পিয়াজ আমদানির কথা বলার পর, ভারতীয় রফতানিকারকরা নাসিকের পিয়াজ কিনে এনেছিলেন। কিন্তু আচমকাই নিজেদের দেশের কৃষকদের স্বার্থের কথা বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতীয় পিয়াজের আমদানি পারমিট (আইপি) ইস্যু করা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে প্রবল সমস্যায় পড়েছে ভারতের রফতানিকারকরা। মাহদিপুর স্থল বন্দর সংলগ্ন গুদামে মজুত করা পিয়াজ পচে নষ্ট হচ্ছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ঢাকার ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আশা করছি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতীয় সীমান্তে মজুত থাকা পিয়াজের আইপি দেবে।’ 

বাংলাদেশে পিয়াজ রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিল্লির গাজিপুর পাইকারি বাজারের অবস্থাও শোচনীয়। সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কার্যত মাথায় হাত। কিছু পিয়াজের দাম মাত্র ২ রূপি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

গাজিপুর সবজি বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী পারমানন্দ সাইনি জানান, ‘নাসিক, আলওয়ার, মধ্যপ্রদেশ, বেঙ্গালুরু সব অন্য জায়গা থেকে প্রচুর পিয়াজ এসেছে। সেখানে এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ থাকায় প্রতি কেজি পিয়াজ ২ রূপিতে বিক্রি হচ্ছে, সবচেয়ে ভালোমানের পিয়াজ কেজি প্রতি ১৩ রূপিতে বিক্রি হচ্ছে।  

সাইনির দাবি, কৃষকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এই স্বল্প দামে বিক্রি করতে গিয়ে তাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাদের কমিশন চার্জ দিতে হচ্ছে এবং উৎপাদন খরচও মেটাতে হচ্ছে। ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ছোট পিয়াজের দাম ১০০ রূপি, সঙ্গে অতিরিক্ত খরচ ১২০ রূপি। ফলে এই দামে পিয়াজ বিক্রি করে কৃষকের সাধারণ খরচও ওঠে না।’ 

সরকারি সংস্থাগুলোকে নিশানা করে আরেক ব্যবসায়ী সুচ্ছা সিং’এর অভিযোগ করেন, যখন পিয়াজের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি, এমন একটা সময় তারা আগের মজুত করা পিয়াজ বাজারে ছাড়ছে। গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ। ফলে এমনিতেই প্রচণ্ড ক্ষতি হচ্ছে। বাজারে পিয়াজের মজুদ জমে যাচ্ছে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই সাথে আমরা, ব্যবসায়ীরাও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি কারণ কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতেই হয়, আমরা তা ফেরত দিতে পারছি না, আবার সেই পিয়াজ দ্রুত সরবরাহও করা যাচ্ছে না।

পণ্য রফতানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ লোকেশ গুপ্ত বলছেন, অযথা মজুতদারি বন্ধ করতে ভারত সরকারের উচিত বেসরকারি ও সরকারি সংস্থার জন্য নির্দিষ্ট মজুতসীমা নির্ধারণ করা। তার অভিমত, ভারতের পিয়াজ রফতানি বাজারকে বহুমুখী করতে হবে। রফতানি ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে এক দেশের সাথে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে, আমরা অন্য দেশে পণ্য সরবরাহ করতে পারি, যাতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন না হন। 

কিউএনবি/অনিমা/৩০ নভেম্বর ২০২৫,/সকাল ৭:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit