শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা বন্ধ করলে কী হবে? জানালেন চিকিৎসক

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৯৫ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : অ্যান্টিবায়োটিক আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে। নিউমোনিয়া থেকে শুরু করে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার—সবখানেই এসব ওষুধ জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখে। কিন্তু ভুল ব্যবহার, অতিরিক্ত সেবন এবং অপর্যাপ্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কারণে দ্রুত বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একে বিশ্বের শীর্ষ ১০ স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি বলে সতর্ক করেছে। ভবিষ্যতে এমন এক পোস্ট-অ্যান্টিবায়োটিক যুগ আসতে পারে, যেখানে সাধারণ সংক্রমণও হয়ে উঠবে মারাত্মক।

ভারতে ইতোমধ্যেই ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (এনসিডিসি)-এর তথ্য বলছে, বহু সাধারণ ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এসব ব্যাকটেরিয়া শুধু হাসপাতালেই নয়, দৈনন্দিন সংক্রমণেও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।

এ বিষয়ে মণিপাল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন) ডা. সুনীল হাভান্নাভার তুলে ধরেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যর্থ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে যেতে পারে।

সাধারণ সংক্রমণও হয়ে উঠবে মারাত্মক

বেশিরভাগ মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশি বা পেটের সমস্যা হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খেতে শুরু করেন—যদিও এসবের বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত। ফলে অকারণে এসব ওষুধ সেবনে ব্যাকটেরিয়া শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

ডা. হাভান্নাভার বলেন, আমরা ভাবি অ্যান্টিবায়োটিক নিলেই সব ঠিক হবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে এসব ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

আইসিএমআর-এর বার্ষিক পর্যবেক্ষণেও দেখা যাচ্ছে, ই. কোলাই, ক্লেবসিয়েলা, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এবং সুডোমোনাস—এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে দ্রুত বাড়ছে রেজিস্ট্যান্স।

ঝুঁকির মুখে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা

শুধু সংক্রমণ চিকিৎসাই নয়—অ্যান্টিবায়োটিক হলো আধুনিক চিকিৎসার নিরাপত্তাজাল।

ডা. হাভান্নাভার জানান, হাঁটু প্রতিস্থাপন, হার্ট সার্জারি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন—এসব অস্ত্রোপচারে সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক অপরিহার্য। এগুলো কাজ না করলে এসব অপারেশন আর নিরাপদ থাকবে না।

কেমোথেরাপি নেওয়া ক্যানসার রোগীদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়বেন।

WHO সতর্ক করছে, কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক না থাকলে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী মৃত্যুহার বহু গুণ বেড়ে যাবে। 

আরও পড়ুন

কীভাবে নীরবে ছড়িয়ে পড়ে রেজিস্ট্যান্স

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স একদিনে তৈরি হয় না—এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।

কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন
  • মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া
  • হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা
  • পশুপালনে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার
  • হাত ধোয়া ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার দুর্বলতা
  • সঠিক পরীক্ষা ছাড়াই প্রেসক্রিপশন

ডা. হাভান্নাভার বলেন, যখনই কেউ অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খান বা কোর্স শেষ করেন না—তখনই ব্যাকটেরিয়া আরও বুদ্ধিমান হওয়ার সুযোগ পায়।

সমাধান কি এখনও সম্ভব?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—অবস্থা ভয়াবহ হলেও পরিবর্তনের সুযোগ এখনও আছে।

ডা. হাভান্নাভারের মতে—

  • ডাক্তারদের অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত না
  • রোগীদের অবশিষ্ট ওষুধ না খাওয়া এবং পুরো কোর্স শেষ করা জরুরি
  • হাসপাতালের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা
  • কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিক কমানো
  • নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবন

তিনি বলেন,ণঅ্যান্টিবায়োটিককে আগুন নেভানোর যন্ত্রের মতো ভাবুন। প্রয়োজনের সময়ই ব্যবহার করলে এটি একদিনও ব্যর্থ হবে না। কিন্তু অযথা ব্যবহার করলে একসময় আর কাজই করবে না। 

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা বন্ধ করলে বিশ্ব শুধু একটি ওষুধশ্রেণিই হারাবে না—হারাবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিরাপত্তা। সাধারণ সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে উঠবে, অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ হবে, কেমোথেরাপি ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এই ভয়াবহ ভবিষ্যৎ এড়ানো সম্ভব—কিন্তু এখনই সচেতনতা, দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। আজকের পদক্ষেপই আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে। 

 

 

কিউএনবি/খোরশেদ/২৪ নভেম্বর ২০২৫,/বিকাল ৩:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit