 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : তরুনীকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত রাঙামাটি শহরের বহুল পরিচিত কসমস আবাসিক হোটেল এন্ড কসমস রুপটপ রেস্টুরেন্ট ও মায়ের দোয়া নার্সারির মালিক এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪৫)কে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন রাঙামাটির নারী রাঙামাটির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত। শুক্রবার বিকেলে তাকে কোতয়ালী থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।কোতয়ালী থানার পক্ষ থেকে আসামীর জন্য রিমান্ডের আবেদন দিলে এই রিমান্ড আবেদন শুনানী আগামী রোববার হবে বলে জানাগেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে ভিকটিম নারী উল্লেখ করেন, আমি রাঙামাটি শহরের একটি সংস্থায় স্বাস্থ্য সেবায় চাকরী করি। বিবাদী এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০), পিতা-মৃত এ.কে.এম খায়ের উদ্দীন; মাতা-নিলুফা বেগম, স্থায়ী সাং-খাগাতুয়া, পোষ্ট-রতনপুর, থানা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা: সাং-নিউ কোর্ট বিল্ডিং (মায়ের দোয়া নার্সারি ও হোটেল কসমস এন্ড রুফ টপ এর মালিক), উত্তর কালিন্দীপুর, ডাকঘর- রাঙ্গামাটি-৪৫০০; থানা-কোতয়ালী, জেলা-রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। বিবাদী আমার পূর্ব পরিচিত। এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০) আমাকে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি) অফিসে চাকরী দিতে পারবে বলে জানায়।
বৃহস্পতিবার ৩০/১০/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.৩০ ঘটিকার সময় বিবাদী এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০) আমাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি) অফিসের এক সিনিয়র অফিসারের সাথে দেখা করার কথা বলে আমাকে কোতয়ালী থানাধীন রাঙ্গামাটি পৌরসভার গাউছিয়া মার্কেটস্থ ইসলামী ব্যাংকের নীচ তলায় একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি উক্ত রুমে প্রবেশ করলে বিবাদী আমাকে জানায় এটি তার অফিস কক্ষ। সেখানে আমি দেখতে পাই বসার কোন জায়গা নাই, ঐখানে ২টি খাট রয়েছে।
এসব দেখে আমি বিবাদী এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০)কে জিজ্ঞাসা করি ডিসি অফিসের স্যার কোথায়। এই কথার বলায় বিবাদী এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০) আমাকে রুমে বসতে বলেন এবং রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। কথা বলার এক পর্যায়ে আমাকে বিবাদীর ভালোলাগে বলে আমার গায়ে হাত দিয়ে আমার পরিহিত বোরকা জোরপূর্বক খুলে ফেলার চেষ্টা করে। তখন আমি চিৎকার করি। আমি চিৎকার করার কারণে বিবাদী আমার শরীরের বিভিন্নস্থানে কিল-ঘুষি মারে। এক পর্যায়ে বিবাদী এ.কে.এম সালাহ উদ্দিন(৪০) আমার মাথার চুল টেনে ধরে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে পিঠে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাথারি লাথি ও কিল-ঘুষি মারে।
বিবাদী এক পর্যায়ে তার সাথে থাকা অস্ত্র (পিস্তল) ও ছুরি বাহির করে প্রাণ নাশের হুমকি দিতে থাকে এবং আমার গায়ে থাকা জামা কাপড় টেনে হেচড়ে খুলে ফেলে অফিসের খাটে নিয়ে গিয়ে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তাহার সাথে থাকা মোবাইল ফোন বের করে আমার সারা শরীরের কয়েকটি নগ্ন ভিডিও ধারন করে এবং উক্ত ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি প্রদান করে। কিছুক্ষণ পর বিবাদী আমার সাথে থাকা আমার মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় ও আমার এনআইডি কার্ডের ছবি তুলে আমাকে উক্ত অফিসে তালাবদ্ধ করে আটক রেখে বাহিরে চলে যায়। প্রায় ২ ঘন্টা পর বিবাদী আবার উক্ত অফিসের রুমে এসে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আমাকে পুনরায় ২য় বার জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
কোতয়ালী থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার পরপরই ভিকটিম নারী কোতয়ালী থানায় হাজির হয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করেন। সাথে সাথেই তাকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর ভিকটিমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছি।
এই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধন-২০০৩/২০২০/২০২৫) এর ৯(১). পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(১)/৮(২) এবং পেনাল কোড এর ৩৪২/৩২৩/৫০৬ ধারা উল্লেখ করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। থানার মামলা নং-০৯, তারিখ-৩১/১০/২০২৫ ইং।এদিকে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উক্ত ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট্য একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। বাকিটা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসলে এবং ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এদিকে, থানা পুলিশ জানিয়েছে; এই সালাউদ্দিনকে এরআগেও কোতয়ালী থানা পুলিশ এক কলেজ শিক্ষার্থীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করেছিলো। উক্ত শিক্ষার্থীকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে শারিরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছিলো সালাউদ্দিন।এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন তরুনীর সাথে নানান সময়ে কুপ্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি চাকুরি করিয়ে বেতন কম দেওয়ার অভিযোগও পুলিশের কাছে রয়েছে বলে জানাগেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সালাউদ্দিনের কাছে বেশ ক’জন হেনস্তা ও কুপ্রস্তাবের শিকার হলেও লোকলজ্জার ভয়ে এবং সামাজিকতার কারনে কেউই অভিযোগ নিয়ে সামনে আসেনি।
কিউএনবি/অনিমা/৩১ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৫৮