ডেস্ক নিউজ : মাওলানা শরিফ হাসান শাহীন
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো। (সুরা নিসা: ১৯) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বলেছেন,خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম আচরণ করে। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।
(সুনানুত তিরমিজি: ৮৯৫) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাম্পত্য জীবন ছিল মমতা, ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ন্যায়ের অনুপম দৃষ্টান্ত। তার পরিবারে ছিল না নির্যাতন, ছিল না অবহেলা,বরং ছিল শান্তি, শ্রদ্ধা ও পরস্পর বোঝাপড়ার পরিবেশ।
স্ত্রীদের সঙ্গে সময় কাটানো
إِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَيَطُوفُ عَلَى نِسَائِهِ جَمِيعًا فِي اللَّيْلَةِ الْوَاحِدَةِ নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই তার সব স্ত্রীদের কাছে গিয়ে দেখা করতেন। (সহিহ বুখারি:৫২১৬)
তিনি আরও বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَسْأَلُ فِي كُلِّ يَوْمٍ بَعْدَ الْعَصْرِ عَنْ أَهْلِهِ আসরের পর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাছে যেতেন, সবার সঙ্গে দেখা করতেন এবং একান্তে সময় কাটাতেন। (সহিহ বুখারি:৫২১৬) এতে বোঝা যায়, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহিওেয়া সাল্লাম -এর দাম্পত্য জীবনে সময় দেওয়া, মনোযোগ দেওয়া এবং স্নেহ প্রদর্শনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন।
সীমাহীন ভালোবাসা ও আনুগত্য
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيْكَ؟ قَالَ: عَائِشَةُ. قُلْتُ: مِنَ الرِّجَالِ؟ قَالَ: أَبُوهَا. আমর ইবনুল আস রা.বলেন, আমি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? তিনি বললেন, আয়েশা। আমি বললাম, আর পুরুষদের মধ্যে? বললেন, তার বাবা। (সহিহ বুখারি:৩৬৬২)
মমতায় ভরা ব্যবহার ও সহমর্মিতা
إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً قُلْتِ: لَا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى قُلْتِ: لَا وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ যখন খুশি থাকো, তখন বলো না, মুহাম্মাদের রবের কসম; আর রাগান্বিত হলে বলো, ‘না, ইবরাহিমের রবের কসম। (সহিহ বুখারি:৫২২৮) এই হাদিস নবীজির সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর বোঝাপড়া, কোমলতা ও দাম্পত্য সম্পর্কের সূক্ষ্ম যত্নের দৃষ্টান্ত।
ধৈর্য ও সহনশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত
مَهْلًا يَا أَبَا بَكْرٍ، كُنَّا نَتَحَاوَرُ. ধৈর্য ধরুন, হে আবু বকর! আমি ও আয়েশা শুধু আলোচনা করছিলাম। (মুসনাদু আহমাদ: ১৭৯২৭) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো রাগে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না; বরং ধৈর্য, হাস্যরস ও ভালোবাসায় পরিস্থিতি সামলে নিতেন।
মধুর সম্বোধন ও আদর
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا তাদের সঙ্গে তোমরা উত্তম আচরণ করো; কেননা যদি তোমরা তাদের অপছন্দও করো, তবে হতে পারে আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা নিসা:১৯)
আজকের মুসলিম সমাজে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাম্পত্য আদর্শ অনুসরণ করাই পারিবারিক শান্তি, ভালোবাসা ও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মানের একমাত্র পথ।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১১:০৫