বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

নবীজির দাম্পত্য জীবন আমাদের জন্য অনন্য আদর্শ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা শরিফ হাসান শাহীন

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ  তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো। (সুরা নিসা: ১৯) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বলেছেন,خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম আচরণ করে। আর আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।

 (সুনানুত তিরমিজি: ৮৯৫) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাম্পত্য জীবন ছিল মমতা, ভালোবাসা, সহনশীলতা ও ন্যায়ের অনুপম দৃষ্টান্ত। তার পরিবারে ছিল না নির্যাতন, ছিল না অবহেলা,বরং ছিল শান্তি, শ্রদ্ধা ও পরস্পর বোঝাপড়ার পরিবেশ।

স্ত্রীদের সঙ্গে সময় কাটানো

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। তিনি তাদের খোঁজখবর নিতেন, সালাম করতেন এবং দোয়া করতেন।
হজরত আয়েশা রা. বলেন, 

إِنْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لَيَطُوفُ عَلَى نِسَائِهِ جَمِيعًا فِي اللَّيْلَةِ الْوَاحِدَةِ নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই তার সব স্ত্রীদের কাছে গিয়ে দেখা করতেন। (সহিহ বুখারি:৫২১৬)

তিনি আরও বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَسْأَلُ فِي كُلِّ يَوْمٍ بَعْدَ الْعَصْرِ عَنْ أَهْلِهِ আসরের পর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাছে যেতেন, সবার সঙ্গে দেখা করতেন এবং একান্তে সময় কাটাতেন। (সহিহ বুখারি:৫২১৬) এতে বোঝা যায়, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহিওেয়া সাল্লাম -এর দাম্পত্য জীবনে সময় দেওয়া, মনোযোগ দেওয়া এবং স্নেহ প্রদর্শনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন।

সীমাহীন ভালোবাসা ও আনুগত্য

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীদের প্রতি ছিলেন অপরিসীম ভালোবাসাপূর্ণ। আম্মাজান খাদিজা রা.-এর প্রতি তার অনুরাগ ছিল জীবিতাবস্থায় যেমন, মৃত্যুর পরও তেমনই অটুট।  إِنِّي قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا আমার অন্তরে তার ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে। (সহিহ মুসলিম:২৪৩৫) তিনি আম্মাজান আয়েশা রা.-এর প্রতি ভালোবাসাও প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন।

عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيْكَ؟ قَالَ: عَائِشَةُ. قُلْتُ: مِنَ الرِّجَالِ؟ قَالَ: أَبُوهَا. আমর ইবনুল আস রা.বলেন, আমি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে?  তিনি বললেন, আয়েশা। আমি বললাম, আর পুরুষদের মধ্যে? বললেন, তার বাবা। (সহিহ বুখারি:৩৬৬২)

মমতায় ভরা ব্যবহার ও সহমর্মিতা

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের প্রতি এমন আচরণ করতেন যা ছিল ভালোবাসা, বিনয় ও সম্মানের মিশেলে অনন্য। عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أَشْرَبُ وَأَنَا حَائِضٌ، ثُمَّ أُنَاوِلُهُ النَّبِيَّ ﷺ فَيَضَعُ فَاهُ عَلَى مَوْضِعِ فِيَّ আমি হায়েজ অবস্থায় পানি পান করতাম, তারপর নবীজি  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই গ্লাসটি নিয়ে আমার মুখ যেখানে লাগত সেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। (সহিহ মুসলিম:৩০০) এটি নবীজির সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মমতা, আন্তরিকতা ও পারিবারিক ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ।
ঘরোয়া সময় ও অনুভূতির সম্মান
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার স্ত্রীদের মান-অভিমান, রাগ-খুশি সবকিছুকেই গুরুত্ব দিতেন। قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ لِعَائِشَةَ: إِنِّي لَأَعْلَمُ إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى. হে আয়েশা! আমি বুঝি, কখন তুমি আমার প্রতি খুশি, আর কখন রাগান্বিত। আয়েশা রা. বললেন,  আপনি কীভাবে বুঝেন?
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

إِذَا كُنْتِ عَنِّي رَاضِيَةً قُلْتِ: لَا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ، وَإِذَا كُنْتِ عَلَيَّ غَضْبَى قُلْتِ: لَا وَرَبِّ إِبْرَاهِيمَ যখন খুশি থাকো, তখন বলো না, মুহাম্মাদের রবের কসম; আর রাগান্বিত হলে বলো, ‘না, ইবরাহিমের রবের কসম। (সহিহ বুখারি:৫২২৮) এই হাদিস নবীজির সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর বোঝাপড়া, কোমলতা ও দাম্পত্য সম্পর্কের সূক্ষ্ম যত্নের দৃষ্টান্ত।

ধৈর্য ও সহনশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত

একবার হজরত আবু বকর রা. নবীজির ঘরে এসে দেখলেন, আয়েশা রা. কিছুটা উচ্চস্বরে কথা বলছেন। তিনি রাগে ধমক দিলেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

مَهْلًا يَا أَبَا بَكْرٍ، كُنَّا نَتَحَاوَرُ. ধৈর্য ধরুন, হে আবু বকর! আমি ও আয়েশা শুধু আলোচনা করছিলাম। (মুসনাদু আহমাদ: ১৭৯২৭) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো রাগে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না; বরং ধৈর্য, হাস্যরস ও ভালোবাসায় পরিস্থিতি সামলে নিতেন।

মধুর সম্বোধন ও আদর

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের সুন্দর নামে ডাকতেন, যা ভালোবাসা ও সম্মানের প্রকাশ। قَالَ لَهَا: يَا حُمَيْرَاءُ، أَتُحِبِّينَ أَنْ تَنْظُرِي إِلَيْهِمْ؟ হে হুমায়রা, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও?  (সুনানুল কুবরা:৮৯৫১) তিনি কখনো আয়েশা রা.-কে  উম্মে আব্দুল্লাহ বলেও সম্বোধন করতেন,শুধু স্নেহ প্রকাশের জন্য।
আনন্দ ও বিনোদনের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতা
দাম্পত্য জীবনে আনন্দও নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনযাপনের অংশ ছিল। سَابَقْتُ النَّبِيَّ ﷺ فَسَبَقْتُهُ، فَلَمَّا حَمَلْتُ اللَّحْمَ سَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِي، فَقَالَ: هَذِهِ بِتِلْكَ. একবার আমি নবীজির সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলাম, তখন আমি জিতেছিলাম। পরে আবার করলাম, এবার তিনি জিতলেন এবং বললেন: এ জেতা আগের হারের বদলা। (মুসনাদু আহমাদ:২৫৭৪৫)  নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাম্পত্য জীবনে হাসি, ভালোবাসা ও আনন্দের ভারসাম্য বজায় রাখতেন।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাম্পত্য জীবন মানবসমাজের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি স্ত্রীদের সম্মান করেছেন, ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন, ন্যায্যতা ও ধৈর্য বজায় রেখেছেন, এবং পারিবারিক জীবনে আনন্দ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا তাদের সঙ্গে তোমরা উত্তম আচরণ করো; কেননা যদি তোমরা তাদের অপছন্দও করো, তবে হতে পারে আল্লাহ তাতে তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা নিসা:১৯) 

আজকের মুসলিম সমাজে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাম্পত্য আদর্শ অনুসরণ করাই পারিবারিক শান্তি, ভালোবাসা ও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মানের একমাত্র পথ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৮ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১১:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit