বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন

খোলাফায়ে রাশেদিন যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা ও দ্বীন প্রচার

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩২ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা শরিফ হাসান শাহীন

সে যুগে শিক্ষা মানেই ছিল আত্মশুদ্ধি ও আমলের আহ্বান। কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি ছিল ফিকহ, হাদিস, ইতিহাস, ভাষা ও সামাজিক ন্যায়ের শিক্ষা। প্রতিটি মসজিদ ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, প্রতিটি আলেম ছিলেন সমাজের পথপ্রদর্শক, এবং প্রতিটি ছাত্র ছিল দ্বীনের প্রতিনিধি। 
কিন্তু আজ আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে গভীর উদ্বেগ জাগে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনৈসলামিক বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ফলে শিশুমন থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে আল্লাহভীতি, হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতার বোধ। এই বিচ্যুতি আমাদের সমাজে আত্মিক শূন্যতা ও নৈতিক পতনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোলাফায়ে রাশেদীন যুগে শিক্ষার মূলনীতি
কুরআন ও সুন্নাহ ছিল শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। খলিফাগণ শিক্ষাব্যবস্থার মূল উৎস হিসেবে কুরআন ও রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহকে প্রাধান্য দিতেন। মসজিদ ছিল শিক্ষা ও সভ্যতার কেন্দ্র। প্রতিটি অঞ্চলে কারি, মুফাসসির ও মুফতিদের পাঠানো হতো,মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান ও আমলে উন্নত করতে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি দিন। (সুরা তাহা:১১৪) আর নবি করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, خَيْرُكُمْ مَن تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।  (সহিহ বুখারি:৫০২৭)

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শিক্ষা তত্ত্বাবধান

হজরত উমর রা. রাষ্ট্রের প্রতিটি অঞ্চলে শিক্ষকদের নিয়োগ দেন, যাতে প্রতিটি শিশু কুরআন, আরবি ভাষা ও ইসলামি চরিত্র শিক্ষা পায়। তিনি বলতেন, যে জাতির সন্তানদের মধ্যে কুরআন শিক্ষার আলো জ্বলে না, তারা কখনোই টিকে থাকতে পারে না। আল-বালাজুরি, ফুতুহুল বুলদান:১/৪৮৬)
দ্বীন প্রচারের বিশ্বব্যাপী অগ্রযাত্রা
সাহাবায়ে কেরাম শুধু ইসলাম প্রচার করেননি, তারা নতুন অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ইরাক, সিরিয়া, মিশর ও পারস্যের মাটিতে কুরআনের মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবেই শিক্ষা ছিল দ্বীন প্রচারের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ তুমি তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো প্রজ্ঞা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে। (সুরা নাহল:১২৫)

আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা: এক হৃদয়বিদারক বাস্তবতা
আজকের বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামি মূল্যবোধ ক্রমেই প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কুরআন শিক্ষা ঐচ্ছিক করে দেওয়ায়  শিশুদের মনে নবীজির প্রেম ও সাহাবাদের ত্যাগের গল্পের পরিবর্তে ঢুকে পড়ছে চলচ্চিত্র, নাচ-গান ও পশ্চিমা কল্পনা।

ভয়াবহ পরিণতি
১. সন্তানরা ইসলাম ও আখিরাত সম্পর্কে অজ্ঞ হয়ে উঠছে। ২.পরিবারের ভেতর শ্রদ্ধাবোধ ও নৈতিকতার ঘাটতি বাড়ছে। ৩.সমাজে মিথ্যা, প্রতারণা ও অসভ্যতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

কুরআনের সতর্কবাণী

فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ তাদের পর এমন এক দল এল যারা নামাজ ত্যাগ করল এবং প্রবৃত্তির অনুসারী হলো। (সুরা মারইয়াম:৫৯) আজ আমরা যেন সেই যুগেই ফিরে যাচ্ছি যেখানে নামাজ, নৈতিকতা ও দ্বীনভীতিকে শিক্ষার বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

করণীয়: আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আহ্বান

১. রাষ্ট্রীয়ভাবে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ২. প্রাথমিক স্তরে ইসলামিক ইতিহাস, নবীজির জীবন ও আখলাক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা। ৩. শিক্ষকদের জন্য দ্বীনি প্রশিক্ষণ চালু করা। ৪. গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ইসলামি মূল্যবোধ প্রচার করা। ৫. অভিভাবকদের ঘরে ঘরে কুরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনি আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা।

খোলাফায়ে রাশেদিন যুগে শিক্ষা ছিল মানুষ গড়ার হাতিয়ার,আল্লাহভীতি, ন্যায়, ও মানবিকতার। আজ যদি আমরা সেই আদর্শে ফিরে না যাই, তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক আত্মিক অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আমাদের দরকার এমন শিক্ষা, যেখানে শিশুরা মুখস্থ করবে শুধু অক্ষর নয়, বরং আখলাক; যেখানে শিক্ষক হবে আদর্শের প্রতীক, আর বিদ্যালয় হবে দ্বীনি আলো ছড়ানোর কেন্দ্র। তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো, আল্লাহ তোমাদের স্মরণ করবেন। (সুরা বাকারা:১৫২)

 

 

কিউএনবি/রাজ/১২ অক্টোবর ২০২৫/দুপুর ১:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit