ডেস্ক নিউজ : সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবির অধিনায়ক শারদীয় দুর্গা পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত পূজা মণ্ডপগুরোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজরদারি জোরদার রেখেছেন। বেলা গড়ার সাথে সাথে ইছামতি নদীর সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টাউন শ্রীপুর পাড়ে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও উত্তর চব্বিশ পরগনার টাকির পাড়ে জড়ো হতে থাকে অসংখ্য মানুষ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার দুর্গা প্রতিমাকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে আসা হয় সীমান্ত নদীতে। অপরদিকে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদ, টাকী ও হিঙ্গলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার প্রতিমাও নিয়ে আসা হয়। তবে ভারতের সীমানায় আনন্দের তরী নামলেও বাংলাদেশের পাড়ে কাউকে আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী নামতে না দেয়ার অভিযোগ দর্শার্থীদের।
বিগত বছরগুলোতে এই দিনে ইছামতি নদীর তীরে আন্তর্জাতিক সীমারেখাসহ দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে মিলনমেলায় মিলিত হয় প্রতিবেশী দু’দেশের হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কয়েক বছর আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে মিলনমেলা সীমাবদ্ধ থাকে স্ব স্ব সীমানায়। তারই পরিপেক্ষিতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি বাড়িয়ে দেয় বিসর্জনের দিন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা।
দর্শনার্থী ও পূজারীরা জানান, একটা সময় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলাধীন ইছামতি নদীর টাউনশ্রীপুর এবং ভারতের টাকি পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে বসতো এই মেলা। এতে অংশ নিতে দুই বাংলার লাখো মানুষ জড়ো হতো। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিমা বিসর্জনাস্থল ছিল সাতক্ষীরার দেবহাটার ইছামতি নদী।
এবছর নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর অবস্থান নেয় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নীল ডুমুর ১৭ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহরিয়ার রাজিবের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তের বেঁড়িবাধে কঠোর নজরদারির নেয়। বাংলাদেশি কোনো মানুষ যাতে ইছামতি নদীতে নামতে না পারে সে বিষয়ে টহল বাড়িয়ে দেন।
বিগত দিনগুলোতে এই বিসর্জনকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় মিলনমেলা। দেশ বিভাগের অনেক আগে থেকেই সীমান্তের ইছামতি নদীর উভয় তীরে দুর্গা পূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে মেলা বসে এসেছে। দেশ বিভাগের পরও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি সীমান্তের সীমারেখা। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ মেলা কখনও বন্ধ হয়নি। সারা বছর ধরে শুধু ইছামতি নদীর পাড়ের মানুষ নয়, বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ দিনটির জন্যে থাকে অপেক্ষায়। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ইছামতির উভয় পাড়ে বসে নানারকমের দোকান। আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ছাড়াও এখানে আসা মানুষ উভয়ের মধ্যে ভাব বিনিময় শেষে সন্ধ্যার পরে ফিরে যায় যে যার দেশে, যে যার ঘরে।
এবছর (২ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে মিলন মেলা দেখতে না পাওয়া গেলেও নিজ নিজ সীমারেখার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন। নদীর জিরো পয়েন্টে ডিঙি নৌকায় লাল ফ্লাগ উড়িয়ে দু’দেশের সীমানা নির্ধারণ করতে দেখা যায় দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে।
এবছর সীমান্ত এলাকার ৮ কিলো মিটারের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা, কালিগজ্ঞ ও শ্যামনগর উপজেলার পূজামণ্ডপ জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে বিজিবি টহল দলকে ২টি টাক্সফোর্সে বিভক্ত করে একাধিক প্লাটুন বিজবি সদস্যের মাধ্যমে কয়েকটি সেকশনে ভাগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনা, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবছর শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে।
এদিকে, সন্ধ্যার পর অশ্রুসিক্ত চোখে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানায় দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ।
কিউএনবি/আয়শা/০২ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:৫০