শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ পূর্বাহ্ন

ভূখণ্ডই যদি না থাকে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কি কাজে আসবে ফিলিস্তিনিদের?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আল জাজিরা’র তথ্যানুসারে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দিয়েছে ১৫০টিরও বেশি দেশ। অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরন এবং এর আশপাশের কয়েকজন ফিলিস্তিনির সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যমটি এবং তাদের কাছে জানতে চেয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে কীভাবে দেখছেন তারা।

আদেল শাদিদ, দুরা

হেবরনের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত দুরার পাহাড়ে আল জাজিরার সাথে কথা বলেছেন ইসরাইল ও ইহুদিবাদ বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক ৫৯ বছর বয়সি আদেল শাদিদ।

এক শতাব্দী আগে বেলফোর ঘোষণাপত্র জারির পর এবং ইসরাইল প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাপক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুতির কারণে নাকবা বা ‘বিপর্যয়’-এর ভিত্তি স্থাপনের পর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে ব্রিটেনের স্বীকৃতি ‘আংশিক ঐতিহাসিক সংশোধন’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক এসব স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের অস্তিত্বকে অস্বীকারকারী ইসরাইলি ন্যারেটিভকে দুর্বল করার পাশাপাশি ইসরাইলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়েছে বলে মনে করেন শাদিদ। ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের মতো নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসনপ্রাপ্ত প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বেশ কয়েকটি (এখন ১০টিরও বেশি) দেশের অবস্থানের (ইসরাইল ইস্যুতে) এই পরিবর্তন…ইসরাইলের জন্য এক ধাক্কা। কারণ এসব দেশই শুরু থেকে ইহুদিবাদী প্রকল্প প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছিল। ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি পাওয়া ইসরাইলের জন্য একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।

শাদিদের মতে, এই স্বীকৃতি কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্রের অধিকারের প্রতি দেশগুলোর দৃঢ় বিশ্বাসকেই প্রতিফলিত করে না বরং ইসরাইল সম্পর্কে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়টিও সামনে এনেছে। তবে ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা ধ্বংস করার জন্য কাজ করে আসছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও ভাঙার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 

যদি সমগ্র বিশ্ব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তবুও তাদের নিজ দেশ, ভূমি এবং ভৌগলিক অবস্থান না থাকলে রাষ্ট্রটি কেবল কাগজ-কলমেই থেকে যাবে। এই কারণেই ফিলিস্তিনিদের জমি দখল এবং অবৈধ বসতি নির্মাণের মতো কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে ইসরাইল।

শাদিদ তার আলোচনার শেষ পর্যায়ে বলেন, সাম্প্রতিক স্বীকৃতির ফলাফল ফিলিস্তিনি জনগণ শিগগিরই দেখতে পাবে না কারণ ইসরাইল ভূমি দখল, হত্যা এবং নিপীড়নমূলক নীতি অব্যাহত রেখেছে এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে একটি বার্তা পাঠাচ্ছে: ‘এই স্বীকৃতি তোমাদের কী এনে দিয়েছে?’যদিও, ক্ষমতার সীমা আছে এবং ইসরাইল যা করছে তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলেই বিশ্বাস এই বিশেষজ্ঞের।

রায়েদ আল-সাঈদ, হেবরন   

হেবরনের একটি বাজারে সারাদিন কফি বিক্রি করেন এবং মানুষের সাথে কথা বলেন ৫০ বছর বয়সি রায়েদ আল-সাইদ। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাহমুদ আব্বাসের প্রচেষ্টার কারণে আরও অনেক দেশ জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সাঈদ মনে করেন, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ পদক্ষেপ হবে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে এবং তারা সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে। 

যেহেতু আল-সাঈদ মানুষের সাথে কথা বলা এবং তাদের কথা শোনার জন্য অনেক সময় ব্যয় করেন, তাই তিনি মনে করেন যে, নিজের চারপাশের মানুষের প্রতিদিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তার ভালো ধারণা আছে। আল জাজিরা বলছে, কেউ কেউ স্বীকৃতি সম্পর্কে আশাবাদী হলেও অন্যরা চিন্তিত এবং হতাশাবাদী। তাদের আশঙ্কা, এই স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে এবং তাদের জীবন আরও খারাপ করে তুলতে পারে। 

মারাম নাসার, হেবরন

রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতিতে অসংখ্য সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বলে আল জাজিরাকে জানিয়েছেন সাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ৩১ বছর বয়সি মারাম নাসার। তার বিশ্বাস, সাম্প্রতিক এসব স্বীকৃতি কোনো তাড়াহুড়ো করে নেয়া সিদ্ধান্ত নয় বরং গাজা যে বিপর্যয় এবং দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে তার আলোকে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফলাফল।

তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে, যারা ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের তালিকায় নতুন দেশগুলো যুক্ত হওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিলিস্তিনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে, যেকোনো আলোচনায় অতিরিক্ত ক্ষমতা দেবে এবং ইসরাইলকে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো মেনে চলতে বাধ্য করতে পারে, যা তারা কয়েক দশক ধরে উপেক্ষা করে আসছে।

আর কূটনৈতিকভাবে, এই স্বীকৃতির ফলে ফিলিস্তিন আরও দূতাবাস স্থাপন এবং তাদের কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও প্রসারিত করতে পারবে বলে জানান মারাম নাসার।

অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে, এর ফলে ইসরাইলি পণ্য বয়কটের প্রসার ঘটতে পারে, ইসরাইলের সাথে বাণিজ্য সীমাবদ্ধ হতে পারে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সরাসরি আর্থিক সহায়তার পথ খুলে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল কিছু দেশকে তাদের স্বীকৃতি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে পারে, যা অন্যান্য দেশগুলোকে ভীত করে তুলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাসার।
সাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের এই বিশেষজ্ঞের মতে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আরও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একটি ঐতিহাসিক মোড় হতে পারে, যা নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তবে এটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে, যেমন একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে ইসরাইল।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:৩৮

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit