আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক মৎস্য বাধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প, সুবলং বাজারে গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প, সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিড়ি নির্মাণ প্রকল্প, বরকল উপজেলার এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ হতে হারুন টিলা এলাকার আহাদ এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার নামের ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে নজীর বিহীন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দায়েরকৃত অন্তত চারটি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শতভাগ সত্যতা পেয়ে আদালতে চার্জশীট দেওয়ার পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দুপুরে রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আহসান তারেক এর আদালত এই আদেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানাজারির ১৬ দিনের মধ্যে দুদকের চার মামলার চার্জশীটভূক্ত অন্যতম প্রধান আসামীসহ ৫ আসামী ইতিমধ্যেই জামিন নিয়েছেন বলে জানাগেছে। গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলা জজ আদালত থেকে মূল অভিযুক্ত এক নাম্বার আসামী রিগ্যান চাকমা, নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতিময় চাকমা, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আব্দুস সামাদ ও অমলেন্দু চাকমা এই পাঁচজন জামিনের আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. আহসান তারেক অভিযুক্তদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান। জামিন শুনানীর সময় দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজু আহাম্মেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের আইনজীবি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান দু:খ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নিবো। দূদক সূত্র জানায়, বিগত ২০১৬/১৭ ও ২০১৭/১৮ অর্থবছর, ২০১৮/১৯, ২০২০/২০২১ অর্থবছরে বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক মৎস্য বাধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প, সুবলং বাজারে গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প, সুবলং ইউনিয়নে সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিড়ি নির্মাণ প্রকল্প, বরকল উপজেলার এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ হতে হারুন টিলা এলাকার আহাদ এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পগুলোর ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতিসহ কাজ না করেই বিল উত্তোলন করার ঘটনায় তদন্তের পরবর্তী সময়ে সত্যতা পাওয়ায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সবির কুমার কুমার, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ ও বিরল বড়ুয়া, সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমা, উপসহকারী প্রকৌশলী রিগ্যান চাকমা, ভূষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশীদ, ঠিকাদার চিং হেন রাখাইন, মিলন তালুকদার ও অমলেন্দু চাকমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলো দুদক।
মামলা দায়েরের দুই বছর সময়ে দীর্ঘ তদন্তকার্যক্রম শেষ করে দুদকের পক্ষ থেকে আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে চার্জশীট প্রদান করা হয়। দুদক কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে সুবলং বাজারে গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পে ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা, বরকল উপজেলার এরাবুনিয়া মৎস্য বাঁধ হতে হারুন টিলা এলাকার আহাদ এর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৩ টাকা, মৎস্য বাধ ও পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৩.৮৫ টাকা ও সুবলং কমিউনিটি সেন্টার ঘর ও পাকা সিড়ি নির্মাণ প্রকল্পের নামে ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা পরস্পর যোগসাজসে আত্মসাত করেছে অভিযুক্তরা।
সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাঙামাটি জেলা পরিষদের বিগত ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পগুলো স্থানীয় রাজনৈতিকদলের নেতাদের সাথে যোগসাজস করে সেসময়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারি প্রকৌশলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও চিহ্নিত কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাম-সর্বস্ব প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয় একাধিক সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পাশাপাশি দুদক কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত শেষে প্রায় দুই বছর পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়ার পরে আসামীরা কোনো ধরনের হাজতবাস না করেই জামিনপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছেন মন্তব্য করে দুদকের আইনজীবি সিনিয়র অ্যাডভোকেট জুয়েল দেওয়ান প্রতিবেদককে বলেন, দুদকের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তাদের সিদ্ধান্তনুসারে আমরা এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশনের লক্ষ্যে আইনীপদক্ষেপ নিবো।
কিউএনবি/আয়শা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ৮:১৪