শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন

সিরাজগঞ্জের প্রতিমা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়, আয় হচ্ছে কোটি টাকা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৯ Time View

নিউজ ডেক্সঃ  শারদীয় দুর্গোৎসব এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের ভদ্রঘাট পালপাড়া। দুর্গাপূজার তিন মাস আগেই এখানে শুরু হয় প্রতিমাশিল্পীদের মহাকর্মযজ্ঞ। কাঠ বাঁশ দিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরি, এঁটেল ও পলি মাটি সংগ্রহ করে প্রতিমার রূপ দেওয়া ও সবশেষে চলে অলঙ্ককরণ। এসব কাজে পুরো পালপাড়া ব্যস্ততম দিন কাটায়। দুর্গাপূজাতেই আড়াই থেকে তিনশ প্রতিমা তৈরি করেন পালপাড়ার কারিগররা। যার মূল্য এক থেকে সোয়া কোটি টাকা। শুধু দুর্গাই নয়, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালীপূজার প্রতিমাও এখানে তৈরি হয়।

ভদ্রঘাট পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা মাঠ আর বড় বড় ঘরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কারিগররা। অধিকাংশ প্রতিমা মাটির কাজ শেষে চলছে তুলির আঁচড়ে সাজানোর কাজ। শিল্পীরা রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ ও অসুরকে। পূজার আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি। তাই কারিগরদের কথা বলার সময় নেই। নির্ধারিত সময়ে প্রতিমা তৈরি শেষ করতে বাড়ির নারী, তরুণ-তরুণীরাও কাজে লেগে পড়েছে।

প্রতিমাশিল্পীরা জানান, ভদ্রঘাট পালপাড়ায় ৪০/৪৫টি পাল পরিবার রয়েছে। তারা সারা বছরই মৃৎশিল্পের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ্যে ১৩টি পরিবার প্রতিমা তৈরির ব্যবসায় জড়িত। তবে প্রতিমা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করেন পালপাড়ার প্রায় সব সদস্যই। এ ছাড়া অন্য এলাকা প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ করেন।

জানা যায়, চলতি বছর ২৫০টিরও বেশি মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে ভদ্রঘাট পালপাড়ায়। সবচেয়ে ছোট প্রতিমার মূল্য ২৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাতেও চলে যাচ্ছে ভদ্রঘাটের প্রতিমা।

তিন-চার মাস আগে প্রতিমার অর্ডার চলে আসে বিভিন্ন জেলার মন্দির থেকে। অর্ডার অনুযায়ী শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। তবে উপকরণের দাম বেড়ে গেলেও প্রতিমার মূল্য বাড়েনি বলে অভিযোগ প্রতিমা কারিগরদের। বেশি দামে, বাঁশ, কাঠ, সুতা, খড় রংসহ বিভিন্ন উপকরণ কিনে এবং শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে তেমনটা লাভ করতেও পারছেন বলে জানান। অন্যদিকে বড় ঘর না থাকায় খোলা জায়গায় প্রতিমা তৈরির কাজ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে। টানা বৃষ্টিতে পলিথিনে ঢেকে রাখতে হয়েছে মাটির প্রতিমাকে। প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার রাস্তা না থাকাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

গোপীনাথ পাল ও তার স্ত্রী অনিতা পাল বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ভদ্রঘাটেই প্রতিমা তৈরির কারখানা বড়। বংশগত পেশা হিসেবে ৪০ বছর ধরে তারা প্রতিমা তৈরি করছেন। এবার জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই প্রতিমা বানানো শুরু করেছেন। বৃষ্টির জন্য প্রতিমা তৈরি অনেকটা পিছিয়ে গেছে। রোদ না থাকায় গ্যাস দিয়ে শুকিয়ে রং করা হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় এবার তেমনটা লাভ হবে না বলে জানান তারা।

বিপুল পাল বলেন, পালপাড়ায় আমরা সবাই মিলে কাজ করি। এখানে আড়াই শতাধিক প্রতিমা তৈরি হয়। সবকিছুর দাম বেশি, তাই পোষায় না। তারপরও বাপ-দাদার পেশা সেই জন্য কাজ করি। আষাঢ় মাসে রথযাত্রার পবিত্র দিন থেকে কাজ শুরু করেছি। আমরা কাঠ থেকে শুরু করে বাঁশ, খড় দিয়ে কাঠামো তৈরি করি। তারপর এঁটেল মাটি ও পলি মাটি থেকে মাটি কিনে এনে তা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করির রঙের কাজ হয়।

ভাদু পাল বলেন, এখানে অনেক পাল সম্প্রদায় আছে, কিন্তু এই প্রতিমার কাজ করি আমরা ১৩টি পরিবার। আমাদের প্রতিমা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, বগুড়া রাজশাহীতে যায়। কারিগর, বউ ছেলেপেলে দিয়ে দিয়ে রাতদিন কাজ করাতে হয়। খাওয়াদাওয়া ঘুমের নির্দিষ্ট সময় নাই। শেড না থাকায় বাইরে কাগজের নিচে রাখতে হয়। সরকার যদি এখানে শেড তৈরি করে দিত, তাহলে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম।

কৃষ্ণ কুমার পাল, দীপঙ্কর পাল, নিপা রানী পাল, নুপুর পালসহ অনেকেই বলেন, আমরা সারাবছর অন্য কাজ করলেও দুর্গাপূজার তিন মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ করি। দৈনিক মজুরি নিয়ে আমরা কাজ করি।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু কালবেলাকে বলেন, ভদ্রঘাট পালপাড়া প্রতিমাপল্লীতে প্রতি বছর ৩০০টির মতো প্রতিমা তৈরি হয়। এই প্রতিমা দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। প্রতিমাশিল্পীদের জীবন-জীবিকার জন্য সরকারের কাছে আবেদন রাখবো, মৃতশিল্পকে বাঁচানোর জন্য যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটা যেন করা হয়।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ভদ্রঘাটের প্রতিমা শুধু সিরাজগঞ্জে নয়, বগুড়া, টাঙ্গাইল, পাবনা নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। কিন্তু প্রতিমা বের করার মতো ভালো রাস্তা নেই। ডিসি সাহেবকে বলেছি, সেখানে ভালো একটি রাস্তা করার জন্য। তিনি তাৎক্ষণিক ইউএনও সাহেবকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে নিরাপত্তারও একটি বিষয় আছে। সে জন্য আমরা চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছি। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছি ৩৫০ মিটার রাস্তা সহসাই করে দেব। পালপাড়ার শিল্পীদের জন্য শেড নির্মাণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অনলাইন নিউজ ডেক্সঃ
কুইক এন ভি/রাজ/২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫/বিকালঃ ০৪.৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit