আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গটনের পথে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়া। পালা করে রোববার এই তিন দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ঘোষণা দেয় কানাডা। এরপর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও সবশেষে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেয়।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার মুখে, আমরা শান্তি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করছি। এর অর্থ হলো একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত ইসরাইল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের কাছে এর কোনটিই নেই। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার মুহূর্ত এখন এসে গেছে”।
তিন আরও বলেন, আজ শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এই মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে বলছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। স্টারমার বলেন, তিনি গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ব্রিটিশ পরিবারের সাথে দেখা করেছেন এবং তারা প্রতিদিন যে নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং ইসরাইল ও যুক্তরাজ্যের মানুষের হৃদয়ে যে যন্ত্রণা অনুভব করে, তা তিনি দেখেছেন। জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। আমরা তাদের ঘরে রাখার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। একটি প্রকৃত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য আমাদের আহ্বান (হামাসের) ঘৃণ্য দৃষ্টিভঙ্গির ঠিক বিপরীত।
তিনি বলেন, এই সমাধান হামাসের জন্য কোনও পুরস্কার নয়। কারণ এর অর্থ হলো, হামাসের কোনও ভবিষ্যত থাকতে পারে না, সরকারে কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না এবং নিরাপত্তায় কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। গাজায় মানবসৃষ্ট সংকট নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ক্ষুধা ও ধ্বংসযজ্ঞ একেবারেই অসহনীয়। খাদ্য ও পানি সংগ্রহের সময় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মানুষ। এই মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের সকলকে আতঙ্কিত করে। কিছু অসুস্থ ও আহত শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এবং আমরা মানবিক সহায়তা সহায়তা বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু যথেষ্ট সাহায্য এখনও পৌঁছাচ্ছে না।
ইসরাইলি সরকারকে সীমান্তে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে স্টারমার বলেন, এই নিষ্ঠুর কৌশল বন্ধ করুন এবং সাহায্য আসতে দিন। তিনি বলেন, আজ আমরা ১৫০ টিরও বেশি দেশের সাথে যোগ দিচ্ছি যারা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্টারমার আরও বলেন, এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি জনগণের কাছে একটি উন্নত ভবিষ্যতের অঙ্গীকার। আমি জানি এই সংঘাত কতটা তীব্রভাবে উস্কে দেয়। আমরা আমাদের রাস্তায়, আমাদের স্কুলে এবং বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে আমাদের কথোপকথনে এটি দেখেছি। এটি বিভাজন তৈরি করেছে, কেউ কেউ এটিকে ঘৃণা এবং ভয় জাগানোর জন্য ব্যবহার করেছে কিন্তু এতে কোনও সমাধান নেই।
সমাপনী বক্তব্যে কিয়ার স্টারমার বলেন, দুই দেশকে আমরা যে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত দেখতে চাই তা অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে কার্যকর করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। তিনি তার ভাষণে পুনর্ব্যক্ত করেন, এর অর্থ হল গাজায় হামাস কর্তৃক আটক অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেয়া, সহিংসতা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটানো এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে ফিরে যাওয়া। এটি সবপক্ষের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সর্বোত্তম আশা।
স্বীকৃতি দিয়ে যা বললো কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক্সে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে তাদের অংশীদারিত্বের প্রস্তাব দিচ্ছে। এর মাধ্যমে কানাডা প্রথম জি-৭ রাষ্ট্র হিসেবে এই স্বীকৃতি দিল।
কানাডার পর অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এই পদক্ষেপকে কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি ‘দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ।
কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে এরআগেই স্বীকৃতির ঘোষণা দিলো তারা।
কিউএনবি/আয়শা/২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /রাত ১১:২২