শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন

কওমি মাদ্রাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা শিহাব

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩৬ Time View

নিউজ ডেক্সঃ   চাঁদপুর শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শৈশবে কোরআনের অক্ষর চেনা থেকে শুরু। তারপর মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে রাজধানীর বারিধারার জামিয়া মাদানিয়া। আর সেখান থেকে একদিন পৌঁছে গেলেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ এই পথচলায় ছিল বাধা, ছিল সংশয়—তবু পিছু হটেননি তিনি। সে ছেলেটিই আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নাম তার মাওলানা মো. শফিকুল হাসান শিহাব।

গত ২৮ আগস্ট তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছেন। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার মুহূর্তটিকে আজও আবেগের সঙ্গে স্মরণ করেন শিহাব। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) কালবেলার সঙ্গে কথা হয় তার। আল্লাহ শুকরিয়া আদায় করে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, রাব্বুল আলামিনের দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের জন্য (ঢাবি) কবুল করেছেন।

শিহাবের শিকড় কওমি মাদ্রাসায়। চাঁদপুরের মুমিনপুর মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা, চাঁদপুর আহমদিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি), এরপর রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন তিনি। এ ছাড়া তাফসির এবং ইসলামী আইন বিষয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অর্জন করেছেন দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি, পেয়েছেন দুটি ডিনস অ্যাওয়ার্ড আর প্রেসিডেন্সিয়াল গোল্ড মেডেলও।

এই দীর্ঘ যাত্রাকে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে করেন শিহাব। তার ভাষায়, ‘কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি জেনারেল পড়াশোনা চালানো সহজ ছিল না। কিন্তু আমার শিক্ষকদের সহযোগিতা আর সময় ব্যবস্থাপনার অভ্যাস আমাকে সাহায্য করেছে। সত্যি বলতে আমি মনে করি, কওমিয়ান পরিচয়ই আমার জন্য বড় প্লাস পয়েন্ট ছিল।

২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ড. আখতারুজ্জামানের হাত থেকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে মাওলানা শফিকুল হাসান শিহাব | ছবি : সংগৃহীতশিহাবের এই পথচলার সঙ্গী ছিলেন আরও কয়েকজন। সবাই একসঙ্গে শুরু করেছিলেন জেনারেল পড়াশোনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুজনই টিকে আছেন কওমি পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে। শিহাব বলেন, ‘আসলে মৌলিক আদর্শ ধরে রাখাও সফলতার অন্যতম উপাদান। সার্টিফিকেটের পেছনে না ছুটে যোগ্যতা অর্জনে আমাদের উস্তাদরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন।

শিহাব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই নন, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ইন্টিগ্রেটেড মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির মহাসচিব, আল-ঈমান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের প্রধান একাডেমিক কর্মকর্তা এবং তাহজিব মাকতাবের উপপরিচালক ও তাকওয়া শিক্ষা পরিবারের অন্যতম পরিচালনা সদস্য ছিলেন।

শিশুশিক্ষা, কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এমনকি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামাইজড পাঠ্যক্রম তৈরি—এসব কাজেই তার অবদান বিশেষভাবে আলোচিত। চাঁদপুরের সন্তান শফিকুল ইতোমধ্যে লিখেছেন অসংখ্য প্রবন্ধ, গবেষণা নিবন্ধ ও বই। দেশ-বিদেশের নানা জার্নালে তার লেখা প্রকাশ হচ্ছে নিয়মিত।

শিক্ষকদের গর্বঃ শিহাবের এই অর্জনে আনন্দিত তার মাদ্রাসার শিক্ষকরা। জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুঈনে মুহতামিম মুফতি জাবের কাসেমি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, শফিকুল হাসান শিহাবের এই সাফল্যে জামিয়া পরিবার ভীষণ আনন্দিত। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ তাকে দেশ, রাষ্ট্র ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার তাওফিক দান করুন।’

অনুপ্রেরণার নাম শিহাবঃ কওমি ধারার ছাত্রদের নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেকে মনে করেন, কওমি মাদ্রাসা কেবল ধর্মীয় জ্ঞানে সীমাবদ্ধ রাখে শিক্ষার্থীদের। শফিকুল হাসান শিহাবের গল্প সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, আদর্শ আঁকড়ে রেখে জেনারেল শিক্ষাতেও সাফল্যের শিখরে ওঠা সম্ভব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার নতুন যাত্রা এখন অনেক তরুণের জন্য প্রেরণার আলো।

অনলাইন নিউজ ডেক্সঃ
কুইক এন ভি/রাজ/১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫/ বিকালঃ ০২.৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit