বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১ অপরাহ্ন

মহানবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের পদ্ধতি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৩ Time View
ডেস্ক নিউজ : ভালোবাসা মানুষের সহজাত অনুভূতি। মানুষ কোনো কিছুকে ভালোবাসে স্বভাবত, কখনো প্রয়োজনবশত, কখনো উপকার পাওয়ার কারণে। তবে মুমিনের ভালোবাসার সর্বোচ্চ স্থান হলো আল্লাহর ভালোবাসা। আর আল্লাহকে ভালোবাসার অপরিহার্য শর্ত হলো নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসা।কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩/৩১)

অতএব, নবীজির প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং ঈমানের মৌলিক দাবি।

নবীজিকে ভালোবাসার অর্থ আন্তরিকভাবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, আনুগত্য এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। আল্লাহ বলেন, ‘যা কিছু রাসুল তোমাদের দেন তা গ্রহণ করো, আর যা কিছু নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’
(সুরা : হাশর, আয়াত : ৫৯/৭)

অতএব, নবীজির প্রতি ভালোবাসা মানেই তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা এবং জীবনকে তাঁর আদর্শে সাজানো।

রাসুল (সা.) স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

এ থেকে স্পষ্ট যে নবীজির প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, এটি ঈমানের মাপকাঠি।

সাহাবিদের ভালোবাসা

নবীজির প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল সাহাবিদের মধ্যে।

তাঁরা তাঁর জন্য প্রাণ উৎসর্গ করতে দ্বিধা করতেন না। বদরের যুদ্ধে সাহাবিরা বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি আমাদের সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, আমরা ঝাঁপ দেব।’

উহুদের যুদ্ধে সাহাবিরা নবীজিকে ঘিরে প্রাণপণে রক্ষা করেছেন। এক সাহাবি বন্দি অবস্থায় মৃত্যুর মুখে বলেছিলেন, ‘আমি চাই না মুহাম্মদ (সা.)-এর পায়ে কাঁটা বিঁধুক, যদিও এর বিনিময়ে আমি পরিবারসহ মুক্ত হয়ে যাই।’ এমন ভালোবাসাই প্রকৃত ঈমান।

নবীজিকে ভালোবাসার কারণ

এক. তিনি আমাদের হেদায়েতের আলো দিয়েছেন—অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে আল্লাহর পথে ডেকেছেন।

দুই. তিনি আমাদের শিক্ষক—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

তিন. তিনি আমাদের প্রতি দয়ালু—কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসুল (সা.) এসেছেন, তোমাদের কষ্ট তাঁর কাছে দুঃসহ মনে হয়, তিনি তোমাদের কল্যাণের জন্য আগ্রহী, আর তিনি মুমিনদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯/১২৮)

চার. তিনি কিয়ামতের দিনে শাফায়াত করবেন—যা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

নবীজিকে ভালোবাসার প্রকৃত প্রকাশ

নবীজিকে ভালোবাসার প্রকৃত প্রকাশ ঘটবে চারভাবে—

এক. তাঁর সুন্নাহর অনুসরণ : নামাজ, রোজা, দোয়া, আখলাক, লেনদেন—জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীজির পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

দুই. তাঁর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত বর্ষণ করেন।’ (মুসলিম)

তিন. তাঁর আদর্শ প্রচার করা : তাঁর সিরাত, শিক্ষা ও জীবনবাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

চার. তাঁর মর্যাদা রক্ষা করা : শত্রুর অপমান ও কটূক্তির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো।

কেউ যদি নবীজিকে ভালোবাসতে ব্যর্থ হয়, তবে তার ঈমান অপূর্ণ থেকে যায়। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে—‘তোমরা তোমাদের প্রাণ, সন্তান, পিতা-মাতা, ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ঘরবাড়িকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রিয় করলে অপেক্ষা করো, আল্লাহর শাস্তি আসবে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯/২৪)

অতএব, নবীজির ভালোবাসা উপেক্ষা করলে দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

আমাদের কর্তব্য

নবীজির প্রতি ভালোবাসা ঈমানের মৌলিক দাবি। নবীজিকে ভালোবাসা মানে শুধু আবেগ নয়, বরং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা, তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, তাঁর মর্যাদা রক্ষা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে রাসুলকে মান্য করে, সে আল্লাহকেই মান্য করল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪/৮০)

অতএব, আমাদের কর্তব্য নবীজিকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসা। তাঁর জীবনকে অনুসরণ করে আমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারব এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তি অর্জন করতে পারব।

লেখক : মুহতামিম, জহিরুল উলুম মহিলা মাদরাসা, গাজীপুর

কিউএনবি/অনিমা/৩১ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৪:৫৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit