মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

মানুষের মতো স্বাদ নেয় ও মনে রাখে কৃত্রিম জিভ, তাক লাগালেন চীনা বিজ্ঞানীরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
  • ২৮ Time View
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : চীনা বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম জিভ, যা মানুষের মতো স্বাদ শনাক্ত করতে পারে এবং মনে রাখতে পারে। গত ১৫ জুলাই ‘পিএনএএস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে জানানো হয়, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা, পানির মান নির্ধারণ এবং রোগ শনাক্তে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।গবেষকেরা বলছেন, এই কৃত্রিম জিভ নিউরোমরফিক কম্পিউটিং—অর্থাৎ মানুষের মস্তিষ্কের মতো তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম তৈরির পথে একটি বড় পদক্ষেপ।

যেভাবে কাজ করে কৃত্রিম জিভ

ডিভাইসটিতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রাফিন অক্সাইড মেমব্রেন, যা অত্যন্ত পাতলা কার্বনের স্তর। এটি স্বাদের জন্য দায়ী আয়ন শনাক্ত করতে পারে। এই স্তর দিয়ে তৈরি আণবিক ছাঁকনি সাধারণ কণাকে আলাদা করার বদলে আয়নের প্রবাহ ধীর করে দেয়। এর ফলে যন্ত্রটি স্বাদের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত ও মনে রাখতে পারে।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, যন্ত্রটি মিষ্টি, টক, লবণাক্ত ও তেতো এই চারটি মূল স্বাদ ৭২.৫% থেকে ৮৭.৫% নির্ভুলতায় শনাক্ত করতে পারে। আর কফি বা কোকাকোলার মতো জটিল পানীয় প্রায় ৯৬% নির্ভুলতায় শনাক্ত করে। জটিল পানীয়তে রাসায়নিক মিশ্রণ বৈদ্যুতিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন করে তোলে, যা শনাক্তে আরও সহজ হয়।

এই প্রথমবারের মতো কোনো যন্ত্র তরলের স্বাদ গ্রহণ ও বিশ্লেষণ একসঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছে, যা মানবজিভ ও স্নায়ুতন্ত্রের যৌথ কাজের অনুকরণ।

তথ্য বিশ্লেষণে নতুন যুগ

পূর্ববর্তী কৃত্রিম জিভগুলো কেবল স্বাদ শনাক্ত করলেও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য বাইরের কম্পিউটার ব্যবহার করতে হতো। নতুন প্রযুক্তিটি নিজেই তরল পরিবেশে স্বাদ শনাক্ত, বিশ্লেষণ ও স্মৃতি গঠন করতে পারে।

এখানে আয়নের প্রবাহকে মানুষের চুলের চেয়ে হাজারগুণ পাতলা চ্যানেলে ৫০০ গুণ ধীর করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিটি স্বাদ শনাক্তের জন্য বেশি সময় পাওয়া যায় এবং স্বাদের স্মৃতি ১৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

মানুষের মতো শেখার ক্ষমতা

প্রতিবার নতুন স্বাদের সংস্পর্শে এসে যন্ত্রটি পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শেখে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের নির্ভুলতা বাড়ে।

সহলেখক ইয়ং ইয়ান, অধ্যাপক, চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ন্যানোসায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বলেন ‘আমাদের যন্ত্র তরলে কাজ করতে পারে, পরিবেশ বুঝতে পারে, এমনকি তথ্য প্রক্রিয়াও করতে পারে—যেমনটা আমাদের স্নায়ুতন্ত্র করে।’

২০২৪ সালের অক্টোবরে অ্যান্ড্রু প্যানন ‘নেচার জার্নালে’ প্রকাশিত একটি গবেষণায় গ্রাফিনভিত্তিক জটিল নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেছিলেন। তবে ইয়ং ইয়ানের মতে, তাঁদের যন্ত্র সহজতর প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও নিখুঁত ফলাফল দিতে সক্ষম।

সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ ব্যবহার

গবেষকদের মতে, কৃত্রিম জিভ প্রযুক্তি রোগ শনাক্ত, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ, স্বাদহীন রোগীদের সহায়তা, খাদ্য ও পানীয়র মান নিয়ন্ত্রণ এবং পানির গুণমান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে যন্ত্রটির আকার, সংবেদনশীলতা ও শক্তি খরচ এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

অধ্যাপক ইয়ং ইয়ান বলেন, ‘উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত হলে, শক্তি খরচ কমালে এবং একাধিক সেন্সর একত্রে কাজ করতে পারলে আগামী এক দশকের মধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা, রোবটিকস ও পরিবেশ বিশ্লেষণে বিপ্লব আসবে।’

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

কিউএনবি/অনিমা/৩১ আগস্ট ২০২৫/দুপুর ১২:৪৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit