মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪১ অপরাহ্ন

যেসব ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫
  • ১ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলামে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা গোপন রাখার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য কিছু ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করা অপরিহার্য। এসব বিষয় শুধু ব্যক্তির সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষা করে না, বরং সমাজের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্যও বৃদ্ধি করে।

(১) নিজেকে নিরাপদ রাখার প্রয়োজনীয়

বিষয় : নিজের সব তথ্য অন্যের কাছে ফাঁস করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এতে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

তাই যেসব বিষয় মানুষের কাছে ফাঁস করলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলো গোপন রাখাই ইসলামের শিক্ষা। ইয়াকুব (আ.) তাঁর পুত্র ইউসুফ (আ.)-কে ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচার জন্য তাঁর স্বপ্নটি অন্যদের থেকে গোপন রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন, ‘সে (ইয়াকুব) বলল, হে আমার পুত্র (ইউসুফ), তোমার স্বপ্নের বৃত্তান্ত তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা কোরো না। করলে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে; শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫)
 
(২) জীবনের পরিকল্পনা বা ভবিষ্যৎ

লক্ষ্য : জীবনে কোনো কিছুর পরিকল্পনা করলে অথবা ভবিষ্যৎ কোনো লক্ষ্য ঠিক করলে আগেভাগেই তা প্রকাশ করা উচিত নয়। কারণ আপনার পরিকল্পনা জেনে যাওয়ার পর অনেকেই সেই পরিকল্পনা হাইজ্যাক করার চেষ্টায় মেতে উঠতে পারে অথবা আপনার সেই পরিকল্পনাকে ধূলিসাৎ করতে উঠেপড়ে লাগতে পারে। মুআজ ইবন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রয়োজন পূরণে সফলতা অর্জনের জন্য তা গোপন রেখে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করো। কারণ প্রত্যেক নিয়ামতপ্রাপ্ত হিংসিত হয়।’ (তাবারানি, হাদিস : ১৬৬০৯)

(৩) ভীতিপ্রদ বা খারাপ স্বপ্ন : স্বপ্ন সাধারণত তিন প্রকার। এক. ভালো স্বপ্ন, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। দুই. ভীতিপ্রদ স্বপ্ন, যা শয়তানের পক্ষ থেকে প্ররোচনামূলকভাবে দেখানো হয়। তিন. মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র, যা স্বপ্নের আকারে প্রকাশ পায়। খারাপ স্বপ্ন দেখলে তিনবার বাঁ দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে, স্বপ্নের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে, পার্শ্ব পরিবর্তন করে ঘুমাবে, ঘুম ভেঙে গেলে উঠে দুই রাকাত নামাজ পড়বে এবং অন্যের কাছে তা প্রকাশ করবে না।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, …‘যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে উঠে নামাজ পড়বে এবং মানুষদের কাছে তা বর্ণনা করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৬৩)

(৪) পরিবারিক গোপন বিষয় : স্বামী-স্ত্রীর  সম্পর্ক, ঝগড়া-বিবাদ বা ঘরোয়া বিষয় গোপন রাখতে ইসলামের  নির্দেশনা রয়েছে। পারিবারিক জীবনের একান্ত গোপন বিষয়গুলো অন্যের কাছে ফাঁস করা নিকৃষ্ট অপরাধ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৪৩৪)

(৫) অন্যের গোপন কথা : অন্য ভাইয়ের আমানতস্বরূপ বলা কথাগুলো অন্যের কাছে ফাঁস করার অনুমতি নেই। সম্পদের মতো কথাও আমানত। তবে যদি তা অন্য কারো বড় ধরনের ক্ষতি করার নীল নকশা হয়, তাহলে অন্যের কল্যাণের জন্য তা প্রকাশ করা জরুরি হয়ে যায়। কথাও যে আমানত এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (কেউ শুনেছে কি না তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৬৮)

(৬) সামাজিক গোপনীয়তা রক্ষা

করা : মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক গোপনীয়তা রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাউকে ছোট করা বা অপমান করার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত দোষ প্রকাশ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারো দোষ প্রকাশ না করে তা গোপন রাখার ফলে ওই ব্যক্তি তার ভুল সংশোধনের সুযোগ পায়। তার ভুল সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেলে সে লজ্জিত ও হতাশ হয়ে পড়তে পারে এবং সংশোধনের আগ্রহ হারাতে পারে। অবশ্য যদি কোনো ব্যক্তি কোনো গুরুতর অপরাধ করে বা সমাজের ক্ষতি করে, সে ক্ষেত্রে তার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো প্রয়োজন হতে পারে। কারণ এতে সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ জড়িত থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত দোষ, যা অন্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, সেগুলো গোপন রাখাই ইসলামে উত্তম বলে বিবেচিত। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, …‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন করবেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দার সহায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭০২৮, আবু দাউদ, হাদিস :  ৪৯৪৮, তিরমিজি,

হাদিস : ১৪২৫, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৫)

(৭) দান-সদকা : দান-সদকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটি শুধু দরিদ্রদের সাহায্য করাই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। এই দান-সদকা গোপনে হওয়া অতি সমীচীন বিষয়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা গোপনে দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো—যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদাকা করে যে তার ডান হাত যা দান করে বাঁ হাত তা জানতে পারে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪২৩)

পরিশেষে বলা যায়, ইসলামে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করার নির্দেশনা রয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়, জীবনের পরিকল্পনা, পারিবারিক গোপনীয়তা, অন্যের আমানতস্বরূপ বলা কথা, এমনকি গোপনে দান-সদকা করা—এসবই নৈতিকতা ও চারিত্রিক সৌন্দর্যের অংশ। এই নীতিগুলো মেনে চললে নিজেদের যেমন বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়, তেমনি একটি সুস্থ, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
d.asmtoha@gmail.com

কিউএনবি/অনিমা/১২ আগস্ট ২০২৫/রাত ১০:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit