আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রশ্ন হলো, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কি ট্রাম্পের এই আলটিমেটামের কাছে নতি স্বীকার করবেন? রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের বরাতে রয়টার্স বলেছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপের আলটিমেটামের সামনে পুতিনের নতি স্বীকারের তেমন সম্ভাবনা নেই। বরং ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের সম্পূর্ণ দখলের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রাখবেন।
ট্রাম্প এরই মধ্যে বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। নতুন এই শুল্ক দুদিন বাদেই কার্যকর হতে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে এবার সেই কৌশলই নিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের থেকে তেল কেনে এমন দেশগুলোর পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবেন তিনি। যদিও এসব নিষেধাজ্ঞায় কাজ হবে কি না তা নিয়ে নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বা কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহার পুতিনও। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন মতে, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ অন্তত তিনটি সূত্র বলেছে, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রুশ প্রেসিডেন্ট। তার এই দৃঢ়তার কারণ হলো তার এমন বিশ্বাস যে, ইউক্রেনে রাশিয়াই জিতছে।
সূত্রগুলো আরও বলছে, যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প যে আলটিমেটার দিয়েছেন, তাতেও অনমনীয়ই থাকবেন পুতিন। কারণ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও সেগুলোর প্রভাব বা কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের।
ক্রেমলিনের সূত্রগুলো আরও বলেছে, ট্রাম্পকে চটাতে চান না পুতিন। উল্টো তিনি বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে আশাবাদী। তবে এক্ষেত্রে ইউক্রেনে তার যুদ্ধের লক্ষ্যই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে।
একটি সূত্র বলছে, ইউক্রেনে পুতিনের লক্ষ্য হলো, দেশটির দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে পুরোপুরি মস্কোর দখলে নেয়া, যেগুলো রাশিয়া তার নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে। এই অঞ্চলগুলোর পূর্ণ দখলের পরই কেবল পুতিন শান্তি আলোচনায় বসবেন।
সূত্রগুলোর দাবি, রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় আলোচকরা গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত তিন দফায় বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু এগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল, শান্তি প্রস্তাবে পুতিনের আপত্তি নেই, ট্রাম্পকে সে বিষয়টি বোঝানো। যদিও এসব আলোচনায় বন্দি বিনিময়ের বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
এদিকে কিয়েভ-মস্কোর মধ্যে আবারও শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা দেখা গেলেও বৈঠকে বসার আগে নতুন এক শর্তজুড়ে দিয়েছেন পুতিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে সরাসরি বৈঠক কেবল তখনই সম্ভব, যখন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ‘যথাযথ প্রস্তুতি’ সম্পন্ন হবে।
এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলনের আগে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে শান্তিচুক্তির কাঠামো নিয়ে বাস্তব অগ্রগতির প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এ সময় পেসকভ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের রাশিয়ার সফর নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, এ সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফলপ্রসূ ও প্রয়োজনীয়। ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি জানান, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তাররোধে অত্যন্ত দায়িত্বশীল অবস্থানে আছে রাশিয়া।
ট্রাম্প গত রোববার নিশ্চিত করেন যে, উইটকফ সম্ভবত ‘বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার’ রাশিয়া সফর করবেন এবং সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/৫ আগস্ট ২০২৫/রাত ১১:২২