আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প লোকোমোটিভ (ট্রেন) এবং পুতিনের লোকোমোটিভ একে অপরের দিকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসছে। কোনোটিই বন্ধ হওয়ার, থামানোর এবং বিপরীত দিকে ঘোরানোর জন্য প্রস্তুত নয়।
পুতিন লোকোমোটিভ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের তথাকথিত বিশেষ সামরিক অভিযান যা ইউক্রেনে ২০২২ সালে শুরু করেছিল রাশিয়া। ক্রেমলিন নেতা শত্রুতা বন্ধ করার এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কোনো ইচ্ছা এখন পর্যন্ত দেখাননি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প লোকোমোটিভ যুদ্ধ বন্ধে মস্কোকে চাপ দেয়ার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করছে। সময়সীমা ঘোষণা, আলটিমেটাম, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং ভারত ও চীনের মতো রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের উপর ভারী শুল্ক আরোপ করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ ঘোষণা করছে।
এর সাথে যোগ হয়েছে দুটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন যা ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি রাশিয়ার কাছাকাছি ইতোমধ্যেই পাঠিয়েছেন। পারমাণবিক সাবমেরিনের কথা ভাবলে ব্যাপারটি গুরুতর বলেই মনে হয়। কিন্তু এর অর্থ কি হোয়াইট হাউস সত্যিই ইউক্রেন নিয়ে ক্রেমলিনের সাথে সংঘর্ষের পথে আছে?
নাকি এই সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফর এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নাটকীয়তা সত্ত্বেও, রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে লড়াই বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তি এখনও সম্ভব? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মস্কো এবং ওয়াশিংটন তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী করার পথে বেশ এগিয়ে ছিল বলে মনে হয়েছিল।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল যেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প একই গাড়িতে, একই গন্তব্যে এগিয়ে চলেছেন। এমন কি ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে রাশিয়ার পক্ষে ছিল, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয়-প্রস্তুত একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। সেই মাসে টেলিফোনে দুই প্রেসিডেন্ট একে অপরের দেশ সফরের কথা বলেছিলেন। মনে হয়েছিল যে যেকোনো দিন পুতিন-ট্রাম্প শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে।
সেই সময় ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোর উপর নয়, কিয়েভের উপর চাপ প্রয়োগ করছিল এবং কানাডা এবং ডেনমার্কের মতো ঐতিহ্যবাহী মার্কিন মিত্রদের সাথে লড়াইয়ের পথ বেছে নিচ্ছিল। বক্তৃতা এবং টিভি সাক্ষাৎকারে, আমেরিকান কর্মকর্তারা ন্যাটো এবং ইউরোপীয় নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
এই সবই ক্রেমলিনের কানে সঙ্গীতের মতো শোনাচ্ছিল।
ওই সময়টাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ায় নিয়মিত সফর করেছেন। মাত্র দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে চারবার ভ্রমণ করেন। ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের চাওয়া একটিই ছিল, প্রেসিডেন্ট পুতিন যেন ইউক্রেনে একটি নিঃশর্ত ব্যাপক যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ক্রেমলিনের প্রতি ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েন ট্রাম্প। ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে অনিচ্ছুক, এমনটিই মনে হতে থাকে। যদিও তিনি দাবি করেছেন যে মস্কো একটি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে রাশিয়ার নিরলস আক্রমণকে ঘৃণ্য ও অপমানজনক বলে নিন্দা করেছেন এবং পুতিনকে ইউক্রেন সম্পর্কে অনেক বাজে কথা বলার অভিযোগ করেছেন।
গত মাসে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার জন্য পুতিনকে ৫০ দিনের আল্টিমেটাম ঘোষণা করেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তা কমিয়ে দশ দিনে নিয়ে আসেন। এই সপ্তাহের শেষে এই সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত, ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াশিংটনের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আবার, ভ্লাদিমির পুতিন আসলে কতটা চাপের মধ্যে আছেন? কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার সময়সীমা দিয়েও তা পরিবর্তন করেছেন। তার কথাকে কতটা গুরুত্ব সহকারে পুতিন দেখবেন সেটিও একটি প্রশ্ন।
পুতিন যতদিন সম্ভব লড়াই করবেন, অথবা যদি না ইউক্রেন বলে, আমরা ক্লান্ত, আমরা তোমাদের সব শর্ত মেনে নিতে রাজি। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এবং পুতিনের দিকে তাকালে মনে হতে পারে তাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ অনিবার্য। তবে তা নাও হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে একজন দুর্দান্ত শান্তি প্রস্তাবকারী হিসেবে দেখেন এবং পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে একটি চুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা ছেড়ে এখনও দেননি।
স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে ক্রেমলিন নেতার সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়ায় ফিরে আসছেন। আমরা জানি না তিনি কী ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারেন। তবে মস্কোর কিছু মন্তব্যকারী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, কাঠির চেয়ে গাজর বেশি হবে। তবে, রোববার ট্রাম্প বলেছিলেন যে রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভালো কিছুই করবে বলে মনে করছেন তিনি। যেখানে একটি স্পষ্ট আশাবাদ ফুটে উঠেছে ট্রাম্পের কণ্ঠে।
কিউএনবি/আয়শা/৫ আগস্ট ২০২৫/বিকাল ৫:০০