রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

নওগাঁয় পৃথক দুই মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 

সজিব হোসেন ,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ।
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
  • ৪৩ Time View
সজিব হোসেন ,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি : নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এবং অপহরণ হত্যা মামলায় আরও দুইজন আসামীকে দশ বছর আটকাদেশ ও ধর্ষণ মামলায় এক জনকে খালাস প্রদান করেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম বলেন, অপহরণ হত্যা মামলার আসামী মিশু (১৯), পিংকি (৩০) ও শিশু হুজাইফা (১৪) ও সাজু আহম্মেদ (১৪) কৌশলে অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি দল গঠন করে।

সে মোতাবেক আসামি পিংকি মোবাইলে ছদ্মনাম ব্যবহার করে নাজমুল (১৪) কে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় পিংকি নাজমুলকে দেখা করার কথা বলে কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারিকেল বাড়ি রোডে ডেকে নেয়। সেখান থেকে আবার পিংকি নাজমুলকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার কেসের মোড় রেল লাইনে ডেকে নেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর সকাল দশটায় আসামিরা সকলে মৃত নাজমুলের নিকটে থাকা মোবাইল ফোন হতে নাজমুলের পিতার মোবাইলে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।

মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে উক্ত স্থানে আসামিরা নাজমুলকে খুন করে। মৃত নাজমুলের লাশ গোপন করার জন্য আসামি মিশু বাড়ি থেকে সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এসে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় নাজমুলের মৃত দেহটি বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে। মৃত স্কুল ছাত্রের পিতা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালতে প্রাপ্ত বয়স্ক দুই আসামিসহ অভিযুক্ত দুই শিশু নিজেদের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করে।

আদালত বিশ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। আজ দুইজন আসামি ও শিশু’র উপস্থিতিতে প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন আসামির প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা এবং শিশুদ্বয়ের প্রত্যেককে ১০ বছর আটকাদেশের রায় পড়ে শুনানো হয়। শিশুদ্বয়ের বর্তমান বয়স আঠারো বছরের উর্ধ্বে হওয়ায় তাদেরসহ মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার।

রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌশলী এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আসামি পক্ষে এ্যাডভোকেট সাইদ হোসেন আল মুরাদ, আব্দুল্লাহেল কাফি উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান। ওই দিনে এই আদালতে আরেক ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা আনুমানিক দুই ঘটিকা হতে সাড়ে ৩ ঘটিকা পর্যন্ত একই থানাধীন বালুবাজার গ্রামের আসামি মোরশেদ (৩৫) এর বাড়িতে তারই সহযোগিতায় আসামি রবিউল ইসলাম ঐ মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে এবং আসামি রবিউল ইসলাম তার মোবাইলে ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।

পরবর্তীতে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের শিকার মেয়েকে বিয়ে না করায় মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ধর্ষণের শিকার মেয়ের স্বামীকে পাঠায়।  যে কারণে ঐ মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেয়। ধর্ষণের শিকার মেয়ে তালাকের পর পিতার বাড়িতে এসে আসামি রবিউলকে বিয়ের কথা বললে সে বিয়ে করতে অস্বীকার করে ধর্ষণের শিকার মেয়ের পরিবার তাকে পুনরায় ঢাকার বিক্রমপুরে বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ইসলাম ধর্ষণের অশ্লীল ছবি ধর্ষণের শিকার মেয়ের দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও পাঠায়। ধর্ষণের শিকার মেয়ের দ্বিতীয় স্বামী তাকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়ে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে সংশ্লিষ্ট মান্দা করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়। আদালত বার জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। আজ আসামিদের উপস্থিতিতে আসামি রবিউল ইসলাম ও মোরশেদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় পড়ে শুনানো হয় এবং অপর আসামি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল তাকে খালাস প্রদান করেন।

আসামিদ্বয়কে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার। রাষ্ট্রপক্ষে বিশেষ কৌশলী এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আসামি পক্ষে এ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী, এ্যাড. আতিয়ার রহমান উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩১ জুলাই ২০২৫,/দুপুর ২:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit