বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সামরিক সংঘর্ষের নেপথ্যে কী

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫
  • ১৮ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার  সকাল থেকে ছয়টি সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি ও রকেট হামলার মধ্য দিয়ে এ সহিংসতা শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন অনেকে। এর জবাবে কম্বোডিয়াতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে থাই বাহিনী।

চলতি বছরের মে মাসে ছোট একটি সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির মধ্য দিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। সেসময় একজন কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হন। উভয় পক্ষই তখন দাবি করেছিল, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। যদিও পরে দুই দেশ উত্তেজনা হ্রাসে একমত হয়। তবে সীমান্তে কড়াকড়ি, নিষেধাজ্ঞা ও বাকযুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

থাইল্যান্ড সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যার ফলে শুধু ছাত্র, চিকিৎসাপ্রার্থী ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো মানুষ যাতায়াত করতে পারছিল না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড পুরো সীমান্তই বন্ধ করে দেয়। জবাবে কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নিষিদ্ধ করে। সেই সঙ্গে থাইল্যান্ড থেকে জ্বালানি, গ্যাস, ফলমূল ও সবজি আমদানিও বন্ধ করে দিয়েছে। সীমান্তে বিভিন্ন চেকপোস্টও বন্ধ রাখা হয়েছে। 

তাছাড়া এ সংঘর্ষের মাত্র একদিন আগে এক থাই সেনা সীমান্তে পুঁতে রাখা একটি ল্যান্ডমাইনের বিস্ফোরণে তার একটি পা হারান। এছাড়া ১৬ জুলাই আরও তিন সেনা মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। থাই কর্তৃপক্ষ এই মাইন পুঁতে রাখার জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করলেও, কম্বোডিয়া তা অস্বীকার করে বলেছে, থাই সেনারা নির্ধারিত গহিন জঙ্গলের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পুরোনো যুদ্ধকালীন বিস্ফোরকে পা রেখেছিলেন।

এ ঘটনার পর থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ফেউ থাই পার্টি জানায়, তারা কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত থাই রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনছে ও থাইল্যান্ডে নিযুক্ত কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হবে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘ডাউনগ্রেড’ করা হয়েছে। থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বেশ কয়েক দশক ধরেই বিরোধপূর্ণ। এ বিরোধের মূল উৎস ১৯০৭ সালে ফরাসি উপনিবেশিক শাসনামলে আঁকা একটি মানচিত্র, যেটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরে কিছু এলাকা দাবি করছে কম্বোডিয়া। অন্যদিকে, থাইল্যান্ড সেই মানচিত্র প্রত্যাখ্যান করেছে।

সবচেয়ে বেশি বিরোধ রয়েছে প্রায় এক হাজার বছরের পুরোনো প্রেয়া ভিহেয়ার মন্দির নিয়ে। ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই মন্দির এলাকার মালিকানা কম্বোডিয়াকে দেয়। এরপর ২০১১ সালে নতুন করে সংঘর্ষের পর কম্বোডিয়া আবার আইসিজের দ্বারস্থ হয় ও ২০১৩ সালে আদালত আবারও তাদের পক্ষে রায় দেয়। বর্তমানে কম্বোডিয়া আবার আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তবে থাইল্যান্ড সেই আদালতের এখতিয়ার মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এই সংঘাত থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতাও সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা জুলাইয়ের শুরুতে এক ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছেন। সেই ফোনালাপে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করে থাই সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেন, যা বিরোধীরা জাতীয় মর্যাদার অবমাননা বলে দাবি করে। ফোনালাপ ফাঁসের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ও তার নেতৃত্বাধীন ফেউ থাই জোট সরকারের অন্যতম প্রধান শরিক দল ভুমজাইথাই সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। বর্তমানে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে। সীমান্তজুড়ে সামরিক উপস্থিতি বাড়ছে, আর কোনো কূটনৈতিক সমাধানের আভাস নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামান্যতম ভুল বোঝাবুঝিও বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে এই দুই প্রতিবেশীকে। সংঘাত থামাতে আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানের ভূমিকা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

সূত্র: এপি

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৪ জুলাই ২০২৫,/রাত ১০:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit