শৈশবকালীন আদব ও সম্মানের শিক্ষা
আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। (সুরা তাহরিম:৬) এই আয়াত নির্দেশ করে, বাবা-মায়ের দায়িত্ব সন্তানকে এমন শিক্ষা দেওয়া, যা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবে। আর শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচার সে শিক্ষার অন্যতম মূলভিত্তি।
শ্রদ্ধাবোধ ও আদব শেখানোর গুরুত্ব
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَا نَحَلَ وَالِدٌ وَلَدَهُ نِحْلَةً أَفْضَلَ مِنْ أَدَبٍ حَسَنٍ পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচারের চেয়ে উত্তম কিছু দান করতে পারে না। (সুনানুত তিরমিজি:১৯৫২) এটি স্পষ্ট করে দেয়, সন্তানকে শ্রদ্ধা, ভদ্রতা, আদব ও সম্মান শেখানোই সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
শৈশবের শিক্ষাই স্থায়ী ভিত্তি গড়ে তোলে
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
كلكم راعٍ، وكلكم مسؤول عن رعيته তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেককেই তার অধীনদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সহিহ বুখারি: ৮৯৩,সহিহ মুসলিম:১৮২৯) তাই সন্তানদের চরিত্র ও আদব গঠনে অবহেলা করা মানে নিজের দায়িত্ব অবহেলা করা।
শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচার শেখানো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
১. সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ বজায় রাখতে শ্রদ্ধাবোধ অপরিহার্য ২. শিক্ষক, বড়দের প্রতি সম্মান শিশুকে জ্ঞানবান করে তোলে ৩. শিষ্টাচার শিক্ষায় শিশুর চরিত্র পরিপক্ব হয় ৪. শ্রদ্ধাশীল শিশুর মধ্যে অহংকার ও হঠকারিতা থাকে না ৫. শিষ্টাচার ইসলামি আদর্শ সমাজ গঠনের মূলে রয়েছে
শিশুকে শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচার শেখানোর কিছু পদ্ধতি
১.নিজের আচরণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন যেন শিশুরা দেখে শেখে। তাই বাবা-মা, বড়রা যদি নিজেরা নম্র, ভদ্র ও সম্মানপ্রদ আচরণ করেন,তবে শিশুদের হৃদয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা গেঁথে যায়।
২. ইসলামি গল্প ও সাহাবিদের চরিত্র শেখানো যেমন, ইবনু আব্বাস রা. ছোট বয়সে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে থাকতেন, এবং তিনি দুআ পেয়েছেন اللهم فقهه في الدين
৩. সালাম দেওয়া, বড়দের নাম ধরে না ডাকা,এই সব আচরণ শেখানো এগুলো ইসলামি আদব ও সম্মানবোধের অন্যতম উপাদান। ৪. অন্যদের জন্য বসা ছেড়ে দেওয়া, খাবার ভাগ করে খাওয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শেখানো এসব আচরণ শিশুদের হৃদয়ে শিষ্টাচার ও বিনয় তৈরি করে।
তাই এখনই শুরু হোক শ্রদ্ধাশীল ভবিষ্যৎ গড়ার যাত্রা, আমাদের সন্তানরা যেন বড় হয়ে শালীন, মার্জিত, বিনয়ী, এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ হয়, সে শিক্ষা এখনই দিতে হবে। শৈশবই সেই সময় যখন মনের জমিন নরম থাকে, বপন করা যায় আদর্শ, শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচারের বীজ। আসুন, আমরা নিজেদের ঘরে শ্রদ্ধা শেখানোর সংস্কৃতি শুরু করি। কারণ আদব ও শিষ্টাচারবিহীন সন্তান, যতই জ্ঞানী হোক না কেন, সমাজের জন্য সে হবে এক আত্মকেন্দ্রিক, কঠিন, ও অনভদ্র বোঝা।