আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে সর্বশেষ ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়া রেকর্ডসংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার সকালেই কিয়েভজুড়ে ধোঁয়া ও বিস্ফোরকের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। খবর সিএনএন’র।
হাজার হাজার মানুষ রাত কাটিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র, মেট্রো স্টেশন এবং পার্কিং গ্যারেজে। রাতজুড়ে শহরের ওপর দিয়ে ড্রোনের গর্জন ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেন, ‘এক ভয়াবহ এবং নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে কিয়েভ। এ ধরনের ভয়াবহতা এই পর্যন্ত খুব কমই ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও অন্যতম বৃহৎ হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘গতকাল আমাদের শহর ও অঞ্চলে যখন প্রথম বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠতে শুরু করল, তখনই সংবাদমাধ্যমে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের খবর আসতে শুরু করেছিল। আবারও প্রমাণ হলো, রাশিয়া যুদ্ধ ও সন্ত্রাস বন্ধ করার বিন্দুমাত্রও ইচ্ছা দেখাচ্ছে না।’
কিয়েভ জানায়, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ড্রোনগুলো সক্রিয়ভাবে রুশ হামলার শুরুতেই তা প্রতিহত করতে থাকে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ড্রোনের গর্জন আর আঘাত চলতেই থাকে।
হামলায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় আগুন ধরে যায়, বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বহু তলা ভবন আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায় বলে জানায় ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা সংস্থা। কিয়েভের রেললাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি জরুরি সেবা দিতে যাওয়া পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সও আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকোরস্কি জানান, হামলায় পোল্যান্ডের কনস্যুলেট ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন ইউক্রেনের জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা গোলাবারুদের সরবরাহ আবার শুরু করে এবং রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
গত কয়েক সপ্তাহে রাশিয়া প্রায় প্রতিদিন রাতেই ইউক্রেনে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এর আগের রেকর্ড আক্রমণ ছিল মাত্র পাঁচ দিন আগে। সেসময় রাশিয়া ৫৩৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এবং পুতিন প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপে অংশ নেন। ফোনালাপ শেষে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছি—ইরান, ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কিছু। আমি এই বিষয়ে সন্তুষ্ট নই।’
পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো অগ্রগতি করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘না। আজকের (বৃহস্পতিবারের) কথোপকথনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ট্রাম্পের সব বক্তব্য রাশিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। ফোনালাপে পুতিন পুনরায় উল্লেখ করেছেন, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে তা করা হলে ভালো হয়।
এদিকে ইউক্রেনে রাতভর রুশ হামলা এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
ইউক্রেনের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে কিয়েভের বায়ুদূষণের মাত্রা ‘উচ্চ’ ছিল। মানুষকে ঘরে থাকার, জানালা বন্ধ রাখার এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে এয়ার পিউরিফায়ার চালিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের শ্বাসতন্ত্র বা হৃদরোগ আছে তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
হামলার পর কিয়েভের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে।
কিয়েভের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই হামলাটা ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপের পরপরই হলো। এ থেকে বুঝা যায়, ট্রাম্প একদমই সাহায্য করছেন না বরং রাশিয়ার আচরণকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
আরেক বাসিন্দা ইউলিয়া রিঝকোভা বলেন, ‘গতকালের ফোনালাপের সঙ্গে এই হামলার স্পষ্ট যোগ রয়েছে। সবাই জানে পুতিন গুণ্ডামি মানসিকতার মানুষ। সে শুধু শক্তি বোঝে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ট্রাম্প সেই শক্তির পরিচয় দিচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া বুঝে গেছে যে তারা যা খুশি করতে পারে, কোনো প্রতিক্রিয়া পাবে না। ’
এই হামলা এমন সময়ে হয়েছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ ‘স্থগিত’ রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ও বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ট্রাম্প জানান, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডার রক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে।
তবে ইউক্রেনে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। শুক্রবার ইউক্রেনের ড্রোনবাহিনীর প্রধান সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া প্রতিদিন ১,০০০ বা তার চেয়েও বেশি দূরপাল্লার ড্রোন ব্যবহার করতে পারে ইউক্রেন আক্রমণে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন, রকেট লঞ্চার, রাডার, ট্যাংক ও অ্যান্টি-আর্মার। তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেই সহায়তা অনেকটাই কমেছে।
কিউএনবি/আয়শা//০৭ জুলাই ২০২৫,/রাত ৯:০০