ডেস্ক নিউজ : দোয়া কবুলের জন্য আমরা সবাই আশায় থাকি। আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল ও নৈকট্য অর্জনের জন্য আমরা দোয়া করে থাকি। দুনিয়ার এই ব্যস্ত জীবনে ভালো থাকার জন্য আমরা কম বেশি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি। যেন মহান আল্লাহ রহমত ও বরকত দান করে সুস্থতা এবং শান্তির সঙ্গে পরিচালনা করেন। দোয়া কবুল হওয়াটা খুশি ও আনন্দের বিষয়। দোয়া কবুলের জন্য মূল্যমান কিছু সময় রয়েছে।
মূল্যবান সময়কে কাজে লাগিয়ে দোয়া করলে আশা করা যায় মহান আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করে নেবেন। আজ আমরা জানব দোয়া কবুলের কিছু মূল্যবান সময় সম্পর্কে। এর মধ্যে অন্যতম একটি সময় হলো ফরজ নামাজের পর ও রাতের শেষ অংশে। এ ব্যাপারে হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন সময়ের দোয়া বেশি গ্রহণযোগ্য? তিনি বললেন, ‘শেষ রাতের মধ্যের দোয়া এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া।’ মিশকাত শরিফ।
ফরজ নামাজের আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী যে সময়টুকু থাকে সেই মহামূল্যবান সময়েও দোয়া করলে মহান আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করে নেন। সেই সময়ের দোয়া আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।’ সুনানে আবু দাউদ।
দোয়া কবুল করতে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন। আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে প্রাথর্না করলে আল্লাহতায়ালা খুশি হয়ে বান্দার দোয়া কবুল করে নেন। কেননা আল্লাহতায়ালা পরম দয়াময় ও পরম করুণাময়। তাই বান্দাদের দোয়া কবুলের জন্য বিশেষ বিশেষ দিন ও সময় রেখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শবেকদর, শবেবরাত, আরাফার মাঠে, সিজদায় লুটিয়ে, মুসাফির ও রোজা পালনরত অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। এ ছাড়াও সপ্তাহে একটি বিশেষ দিন উপহার দিয়েছেন তাঁর প্রিয় মাহবুব বান্দারা যেন তাদের দোয়া প্রভুর দরবারে কবুল করিয়ে নিতে সক্ষম হয়। বিশেষ দিনটি হলো সপ্তাহের জুমার দিনের দোয়া। সহিহ বুখারি শরিফের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে অলোচনায় বললেন, ‘এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোনো মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করেন, তবে তিনি তাকে তা অবশ্যই দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।’ সুনানে আবু দাউদ শরিফের বর্ণনায় রয়েছে, ‘আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।’ আবার সহিহ মুসলিম শরিফের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময়, ইমামের মিম্বরে বসা হতে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।’
মনে রাখা জরুরি, আল্লাহতায়ালা সবার মনের খবর রাখেন। অবৈধ অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দোয়া করা যাবে না। মনকে নরম করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাকুতি-মিনতি করে চোখের পানি ফেলে চাওয়ার মতো আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে। দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো কিংবা দোয়া কবুল হচ্ছে না এমনটি মনে করা উচিত নয়। দোয়ার সময়ে স্মরণ রাখতে হবে, আল্লাহ আমার কথা শুনছেন, তিনি আমার দোয়া কবুল করবেন, ইনশাআল্লাহ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দার দোয়া সব সময় গ্রহণ করা হয়। যদি না সে দোয়া কোনো অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা না থাকে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে রসুলুল্লাহ, তাড়াহুড়া করা কী? উত্তরে বললেন, সে বলতে থাকে আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দোয়া করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।’ বুখারি ও মুসলিম।
প্রিয় পাঠক, অন্যের হক নষ্ট করে হারাম ভক্ষণ করে দোয়া করলে সেই দোয়া মহান আল্লাহতায়ালা কিন্তু কবুল করবেন না। এজন্য চাই একনিষ্ঠ ক্ষমা, তওবা ও হালাল উপার্জন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা)-কে ডেকে বলেন, ‘হে সাদ, তোমার খাবার পবিত্র কর। তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে।’ তাবরানি শরিফ।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
কিউএনবি/অনিমা/১৭ জুন ২০২৫, /রাত ৮:৪৮