মনিরুল ইসলাম মনি,শার্শা(যশোর)সংবাদদাতা : যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালীর সেই মরুভূমির জাহাজ উট এখন আর নেই ।শার্শার সীমান্তবর্তী পুটখালি গ্রামের সব উট বিক্রি হয়ে গেছে।যে কারনে সব উট বিক্রি হয়ে যওয়ায় খাঁ খাঁ করছে উটের খামার। বিষয়টি চমকে যাওয়ার মতো হলেও পুটখালিতে এই প্রথম গড়ে উঠেছিল উটের খামার। স্থানীয়ভাবে ‘গোল্ড নাসির’ নামে পরিচিত এক সোনা ও অস্ত্র চোরাকারবারির মালিকানাধীন এই খামারেছিল বিশাল আকৃতির সাতটি উট। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে চমক লাগানো ব্যতিক্রমী এই খামারটি পুটখালি ‘গোল্ড নাসিরের’খাটাল নামে পরিচিত । খামারে গরু, ছাগল, ষাঁড়ের পাশাপাশি এবার উটের খামার করেছিলেন তিনি। পুটখালী এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোর মানুষের মধ্যে উট নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন প্রতিদিন সীমান্তবর্তী এ গ্রামে নাসিরের খামারে ছুটে এসেছেন মরুর জাহাজ দেখার জন্য। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ-অনেকেই উটগুলোর সঙ্গে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। সব মিলিয়ে একটা প্রাণবন্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল এখানে। সব উট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় বুধবার সকাল থেকে কোন ভিড় নেই। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী পুটখালী গ্রামের মৃত বুদো শিকদারের ছেলে নাসির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘গোল্ড নাসির’ হিসেবে পরিচিত। যে কারণে হঠাৎ করে তাঁর উটের খামার গড়ে তোলা, এত দামি পশু সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্নœ উঠেছে নানা মহলে। জানা গেছে, খামারের ৭টি উটের মধ্যে একটি উট এরই মধ্যেই ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাকী ৬টি উট ইতোমধ্যে চট্রগ্রামে বিক্রি করা হয়েছে। উট গুলো মঙ্গলবার রাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খামারের মালিক নাসির হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার খামারে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও তাঁর খোঁজ মেলেনি। খামারের ম্যানেজার আল আমিন জানান, নাসির উদ্দিন প্রায় এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে সাতটি উট আমদানি করে পুটখালীতে নিজের খামারে লালন-পালন শুরু করেন। যার মধ্যে একটি এখান থেকে বিক্রি হয়েছে। বাকী ৬টি চট্রগ্রামের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে গেছে। এখন আর খামারে কোন উট নেই। একটি উটে ১৩ থেকে ১৪ মন মাংস হয়ে থাকে। আগে থেকে নাসিরের বাণিজ্যিক গরুর খামারও রয়েছে। সেগুলো এখন কোরবানির জন্য পুরো প্রস্তুুত। খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন। ম্যানেজার আরো বলেন, উট গুলোকে বিশেষভাবে যত্ম করে সুস্থ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন উট গুলোকে গোসল করানো হয়। সোয়াবিনের খৈল, ভুট্রা, ঘাস আর ছোলা খাওয়ানো হয় নিয়মিত। বিশেষ তালিকা মেনেই উট গুলোকে প্রতিদিন খাবার খাওয়ানো হয় আর যত্ম নেওয়া হয়েছে। খামারে থাকা উট গুলো সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে স্থানীয় লোকজনসহ প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
স্থানীয় লোকজন জনান, সৌদি আরব থেকে এ উট আনা হয়নি। ভারতের রাজস্থান থেকে উট চোরাই পথে এনে খামারে তোলা হয়েছে। কারণ সীমান্তের ইছামতি নদীর এপাশে বেনাপোলের পুটখালি আর ওপাশে বনগাঁর আংরাইল সীমান্ত। আর গোল্ড নাসির এলাকায় বিগত দিনে দাপটের সাথে চোরাচালানী কাজ করেছে। নাসিরের কাছে ভারত থেকে উট আন কোন ব্যাপারই না। সে কারণে অনেকেই বলছে ভারত থেকে এই উট নিয়ে এসে সৌদি আরবের কথা প্রচার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপু কুমার সাহা বলেন, উটগুলো আসলেই সৌদি আরব থেকে আনা হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য একাধিকবার খামারের মালিকের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। একই কথা বলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক। তিনি বলেন, ‘উটের আমদানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’ সাধারণত এ ধরনের প্রাণী বিদেশ থেকে আনতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
এদিকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, খামারের মালিক ‘গোল্ড নাসির’ এর আগে একাধিকবার সোনা, অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে আটক হন। ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রামনগর এলাকায় প্রাইভেট কার থেকে আট কেজি ৯৭৪ গ্রামের ৪২টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। এ সোনার বার ছিল নাসিরের। এরপর একই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দুটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটারগান, তিনটি রিভলভার, ১৯ রাউন্ড গুলিসহ র্যাবের কাছে আটক হন নাসির। ওই মামলায় প্রায় ১৯ মাস কারাগারে থাকার পর মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি জামিনে বের হন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘নাসির হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও আমার জানা মতে তিনি জামিনে আছেন। নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, উটের খামারের বিষয়ে কোনো অসংগতি থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/অনিমা/০২ জুন ২০২৫, /দুপুর ১২:৫৯