’ছাত্রলীগ নাকি ছাত্রদল’, আসলে কোন দলের দুঃসময়ের কর্মী আশুলিয়ার ওসি?
Reporter Name
Update Time :
মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫
৫৫
Time View
মশিউর রহমান, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার আশুলিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পদায়িত হয়েছেন মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলু। তবে নিয়োগের পরপরই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ছড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০২২ সালে এক এমপির ও অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের আমলে ২০২৪ সালে ছাত্রদলের এক সুপারিশ পত্র। দুটি সুপারিশ পত্রের ভাষাও একই রকম দেখা যায়। যেখানে একটিতে ঢাবিতে পড়াকালে তিনি ছাত্রলীগের দুঃসময়ের কর্মী ছিলেন, অপরটিতে তিনি ছাত্রদলের দুঃসময়ের কর্মী ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।বিষয়টি সোমবার (৩ মার্চ) রাতে জানাজানি হয়। তবে এখনো পর্যন্ত স্বাধীনভাবে কোনোটিরই সত্যতা যাচাই করতে পারেননি। গত রবিবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার সাক্ষরিত অফিস আদেশে এ পদায়ন করা হয়।
এতে দেখা যায়, গত ৯ই জানুয়ারি এক আদেশে গত ১২ই জানুয়ারি ঢাকা জেলা পুলিশে যোগ দেওয়া পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলুকে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তার বিপি নম্বর- (৭৮০৬০৯৮৫২১)। মো. মনিরুল ইসলাম ডাবলু রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার বাহাদুরপুর এলাকার মৃত আ. জলিল মিয়ার ছেলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুটি সুপারিশপত্রের একটিতে (২০২২) ডাবলুকে ঢাবিতে পড়াকালীণ ছাত্রলীগের দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অপরটিতে (২০২৪) ডাবলুকে ঢাবিতে পড়াকালীণ ছাত্রদলের হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
কি আছে, সেই দুই সুপারিশ পত্রে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি তার সাক্ষরিত এক সুপারিশপত্রে লিখেন, ডাবলু ঢাবির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ফলাফল করে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া ছাত্রলীগের লিয়াকত-বাবু কমিটিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মুজিব সৈনিক ও শেখ হাসিনার নির্ভিক কর্মী। তিনি নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে কর্মরত আছেন।অপরদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল কমিটির প্যাডে ২০২৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর আরেকটি সুপারিশ পত্রে লেখা হয়, ডাবলু ঢাবির মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ফলাফল করে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেজবাহ-ইউনুস কমিটিতে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল) কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ সৈনিক। তিনি পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটায় কর্মরত আছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জাবি শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু তৌহিদ মো. সিয়াম লিখেছেন, ”আশুলিয়া থানাতে লীগের এক ক্যাডারকে বসানো হইছে ওসি হিসেবে। কত টাকা খেয়ে কে এই কাজ করছে এইটার জবাব ইন্টেরিমকে দিতে হবে। যেই আশুলিয়াতে ৫ই আগস্টের পরও মানুষের রক্ত ঝরেছে সেই আশুলিয়াতে এই লীগের ক্যাডারকে কারা কোন ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিলো এইটার জবাব ইন্টেরিমকে দিতে হবে।”তিনি আরও লিখেন, ”অতিদ্রুত এই লীগের ক্যাডারকে অপসারণ করেন। অন্যথায় আশুলিয়ার ছাত্র জনতা আবারো রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিবে। ইন্টেরিম সাবধান। খুব সাবধান।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ”ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের উপর থেকে সকল আস্থা তুলে নিলাম। সংস্কার দরকার নাই, নির্বাচন দেন ক্ষমতা ছাড়েন।”তিনি আরও লিখেন, ”যেই সাভার-আশুলিয়াতে প্রতিদিন রাজপথে মানুষ মরেছে ঝাঁকে ঝাঁকে। সেই এলাকায় আপনারা আওয়ামী দলীয় ক্যাডারকে ওসি নিয়োগ করে কাদের সাথে মশকরা করেন? লজ্জা করে না?” যা বলছেন সেই ওসি ও কর্তৃপক্ষ।বিতর্কের বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলু বলেন, যে দুটি সুপারিশ আছে, এরমধ্যে একটি সত্য। ছাত্রলীগের যে দাবি সেটি অসত্য। যদি এমন হতো, তাহলে ঢাকার ভালো থানায় ওসিগিরি করতে পারতাম। এগুলো ফেক (ভুয়া)। আমি তখন তদন্ত ওসি হতে পারিনি। ওসি তো দূরের কথা।সুপারিশে নিয়োগ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই সুপারিশ নিতে বাধ্য হয়েছি। এটা দিতাম না। এটা দেখানোর কিছু না। আমি চাকরি করি। এটা ছাত্র জীবনের কথা। চাকরি করলে তো কিছু থাকে না। একটা কমিটিতে ছিলাম, তাই সুপারিশ এনেছি।
সুপারিশপত্র ছড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলা পুলিশই করেছে। কয়েক জন, আমার এন্ট্রি। অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আমি, বাকি তিনজন তো আমার এন্টি। ওদের পরাজয় তো শোচনীয়। আমি যদি আওয়ামী লীগের হতাম, ভোট পেতাম?এবিষয়ে ঢাকা জেলার সাভার সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির বলেন, ওসি পদায়ন হয় ওপর থেকে। আমার কিছু করণীয় নেই। ওখানে কে নিয়োগ দিল, মন্ত্রণালয় নাকি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে দিয়েছে আমার জানা নাই। উনি যে কি সেটাও আমার জানা হয়নি। আমরা তার কাজ দেখব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি কেমন ধরছে, তার পারফরম্যান্সটা আমরা দেখবো।এ বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।